নুরেমবার্গ ট্রায়াল হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৫-৪৬ সালে জার্মানির বাভারিয়া রাজ্যের নুরেমবার্গ শহরে অনুষ্ঠিত বিচার প্রক্রিয়ার নাম। তখন ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি ট্রাইব্যুনাল হিটলারের নাৎসি বাহিনীর নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ গঠন করে এবং তাদের বিচার করে। তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো ছিল মূলত চার ধরনের। যথা: এক. শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ। যেমন— আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের পরিকল্পনা, যুদ্ধের জোগাড় এবং যুদ্ধ শুরু করা। দুই. মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। যেমন— মানুষকে সমূলে বিনাশ করা, বাসস্থান থেকে বিতাড়ন করা এবং গণহত্যা। তিন. যুদ্ধাপরাধ তথা যুদ্ধের আইনসমূহ লঙ্ঘন। চার. উপরিউক্ত তিনটি অপরাধ করার সাধারণ পরিকল্পনা বা ষড়যন্ত্র করা।
আন্তর্জাতিক এই সামরিক ট্রাইবুনালে বিশিষ্ট ২২ জন নাৎসি কর্মকর্তার বিচার শুরু হয়েছিল। এরকম ট্রইবুনাল সেই প্রথম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই নুরেমবার্গের আদালতে শীর্ষ নাৎসি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে বিচার হয় তাদের। বিচারাধীনদের মধ্যে ছিল সামরিক কর্মকর্তা, রাজনীতিক, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা। ১৯৪৫ সালের ২০ নভেম্বর শুরু হয় এই বিচার।
মানবাধিকার লংঘন, ইহুদিদের ওপর নিধনযজ্ঞ চালানো, বিভিন্ন কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে ইহুদিদের পাঠানো, লুকিয়ে থাকা ইহুদি পরিবারদের খুঁজে বের করা, বৈষম্য – এসব অভিযোগ আনা হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে।
তবে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর পর এদের ভেতর কোনও ধরণের অনুশোচনা ছিল না বলে প্রকাশ। তারা এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিল না বলে জানায়। এরা সবাই নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে।
আদালতের বিচারকদের আনা হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চার মিত্র শক্তি আমেরিকা, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, ফ্রান্স এবং ব্রিটেন থেকে। প্রধান কৌঁসুলি ছিলেন মার্কিন আইনজীবী রবার্ট জ্যাকসন। নুরেমবার্গ আদালতে বিচার কার্য চলে প্রায় ২১৮ দিন ধরে। হাজির করা হয় ২৩৬ জন সাক্ষী, উপস্থিত করা হয় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার নথিপত্র। এর সঙ্গে আসে প্রায় দুই লক্ষ সাক্ষ্যসহ লিখিত অভিযোগপত্র। আড়াই হাজার পাতার প্রটোকল নথিপত্রের সাহায্যে তুলে ধরা হয়।
১৯৪৬ সালের ১ অক্টোবর সামরিক ওই আদালত রায় ঘোষণা করেন। সাতজন আসামিকে কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়, ১২ জনকে দেওয়া হয় মৃত্যুদণ্ড। বেকসুর খালাস পায় মাত্র তিনজন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের একজন ছিলেন হ্যারমান গ্যোয়েরিং, যিনি মৃত্যদণ্ড কার্যকর হবার আগেই তার সেলে সায়ানাইড ক্যাপসুল খেয়ে আত্মহত্যা করেন। সূত্র: ডয়েচে ভেলে, ইন্টারনেট
বিডি প্রতিদিন/কালাম