বিশ্বব্যাংকের শীর্ষ এক কর্মকর্তার মতে, ব্যাপক সংযোগ পরিকল্পনা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন সত্ত্বেও সমন্বয়ের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা অঞ্চল দক্ষিণ এশিয়া। কারণ, অনেক দিক থেকেই দক্ষিণ এশিয়া ভালোভাবে সমন্বয়ের আওতায় আসেনি। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল- ভারত থেকে একটি ট্রাক সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে সময় লাগে ১৩৮ ঘণ্টা। শুধু তাই নয়, এক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় কমপক্ষে ২২টি নথি ও ৫৫টি স্বাক্ষরের।
বিশ্বব্যাংকের রিজিওনাল ইন্টিগ্রেশন অ্যান্ড এনগেজমেন্ট ইন সাউথ এশিয়া রিজিয়নের (এসএআর) পরিচালক সিসিল ফ্রুম্যান এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। সম্প্রতি ভারত সফরে এসে দেশটির গণমাধ্যম ‘দ্য প্রিন্ট’কে এই সাক্ষাৎকার দেন তিনি।
সিসিল ফ্রুম্যান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তাদের বৈদেশিক মোট বাণিজ্যের মাত্র ৫ শতাংশ সংঘটিত হয়, যা তাদের সক্ষমতার মাত্র এক তৃতীয়াংশ। তবে বৃহত্তর সমন্বয় এবং নিরবিচ্ছিন্ন সংযোগ থাকলে আন্তঃবাণিজ্য আরও আনুমানিক ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে।
এক্ষেত্রে তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, তুলনামূলকভাবে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্যে দক্ষিণ-পূর্ব দেশগুলোর জোট আসিয়ান এগিয়ে। ১০ সদস্যের আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে তাদের মোট বাণিজ্যের ২২ শতাংশ সম্পাদিত হয়। অন্যদিকে ২৭ সদস্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে এই হার ৬০ শতাংশ।
তিনি বলেন, “বৃহত্তর সমন্বয় প্রবৃদ্ধির একটি উৎস। শুধু তাই নয়, এটি সমৃদ্ধি এবং অন্তর্ভুক্তিরও উৎস। আমরা আরও বহু ক্ষেত্রে এই সুবিধা দেখতে পাব। যদি আমাদের আরও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং নিরবিচ্ছিন্ন সংযোগ থাকত, তবে আমরা এই সুবিধাগুলোর কিছুটা হলেও দেখতে পেতাম।”
দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশের মধ্যে গৃহীত কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে ফ্রুম্যান বলেন, বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল (স্বাক্ষর এই অঞ্চলে নিরবিচ্ছিন্ন সংযোগ অর্জনের মূল চাবিকাঠি। এটা কার্যকর হলে ভারতের জাতীয় আয় ৭ দশমিক ৬ শতাংশ এবং বাংলাদেশের আয় ১৬ দশমিক ৬ ভাগ বেড়ে বিবিআইএন) মোটর যানবাহন চুক্তি (এমভিএ) যেতে পারে।
যদিও সিসিল ফ্রুম্যান মনে করেন যে সংযোগ পরিকল্পনা সফল করার জন্য সমন্বয় অন্যতম চাবিকাঠি, তা বিবিআইএন-এমভিএ হোক কিংবা বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন (বিমসটেক), এই ধরনের কাঠামো সফল করতে ভূ-রাজনৈতিক কারণগুলোকেও অন্যতম উপাদান হিসেবে দেখতে হবে।
উল্লেখ্য, বিমসটেক হচ্ছে বঙ্গোপসাগর উপকূলের সাতটি দেশের (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড) মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা।
সিসিল ফ্রুম্যান, “আমাদের চারপাশের বিশ্ব পরিবর্তিত হচ্ছে… আমরা কখনোই জানতে পারি না যে আগামীতে কী হতে চলেছে। আমরা করোনার মতো একটি সংকটের মুখোমুখি হয়েছিলাম, বিশ্বের দেশগুলো এখন সেই সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। দুর্ভাগ্যবশত, আফগানিস্তানের মতো জায়গায় যুদ্ধের মতো সংঘাতও ছিল, সেই সঙ্গে শ্রীলঙ্কার অস্থিরতা। প্রতিবেশি হিসেবে এগুলো অবশ্যই আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”
“এছাড়াও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের উপর ভিত্তি করে, আমরা আশা করি যে এটি এমন একটি অঞ্চল যা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে, প্রবৃদ্ধির গতিপথ আরও সবুজ হবে, টেকসই হবে এবং একে অন্যের সঙ্গে আরও ভালভাবে সংযুক্ত হবে,” বলেন বিশ্বব্যাংকের এই পরিচালক। সূত্র: দ্য প্রিন্ট
বিডি প্রতিদিন/কালাম