৮ আগস্ট, ২০২২ ১১:১২

মার্কিন সিনেটে ৭৪০ বিলিয়ন ডলারের ‘মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস’ বিল পাশ

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন সিনেটে ৭৪০ বিলিয়ন ডলারের ‘মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস’ বিল পাশ

ফাইল ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনের আশংকা মোকাবেলা এবং প্রেসক্রিপশন করা ওষুধের মূল্য হ্রাসে কেন্দ্রীয় সরকারকে অর্থ প্রদানের পথ সুগম করার ঐতিহাসিক একটি বিল ইউএস পাশ হয়েছে সিনেটে। রবিবার রিপাবলিকানদের শতভাগ বিরোধিতা সত্বেও ‘মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস অ্যাক্ট-২০২২’ নামক বিলটি সিনেটে ৫১-৫০ ভোটে পাশ হয়। এতে আগামী নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমক্র্যাটদের আসন সুরক্ষার অনিশ্চয়তা কেটে গেল বলে মনে করা হচ্ছে। 

এই বিলের পরিপূরক আরেকটি বিল আগামী শুক্রবার কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে পাশ হবে। তারপরই প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের জন্য হোয়াইট হাউজে প্রেরণ করা হবে। 

চলতি পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় এবং অন্তর্জাতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুসমূহের সমন্বয় ঘটিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রস্তাবিত বিলটি নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরেই দেন-দরবার চলছিল। ৫০ রিপাবলিকানের একজনকেও পক্ষে টানা সম্ভব হয়নি। অধিকন্তু ডেমক্র্যাটিক পার্টির দুই সিনেটরই (ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার জো  এবং আরিজোনার সিনেমা) বেঁকে বসেছিলেন। এমন অনিশ্চয়তা কাটাতে সিনেট লিডার চাক শ্যুমার (নিউইয়র্ক-ডেমক্র্যাট) রাতের ঘুম হারাম করে নিজেদের মধ্যেকার ব্যবধান ঘুচাতে একের পর পর ছাড় দেয়ার মনেবৃত্তিতে রবিবার ভোররাতে এই দুই সিনেটরের সম্মতি লাভে সক্ষম হন। এরফলে সমান দুই ভাগে বিভক্ত সিনেট ভোটের টাই ভাঙতে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে ডেমক্র্যাটদের বিজয়ের ভোটে সামিল হতে হয়। এই বিল প্রতিনিধি পরিষদের অনুমোদন লাভের পর বাইডেনের স্বাক্ষর পেলেই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং এনার্জি সেক্টরে ৩৭০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা যাবে। 

সামগ্রিকভাবে বিলটি যুক্তরাষ্ট্রকে দশকের শেষ নাগাদ অর্থাৎ ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রীণহাউজ গ্যাস নির্গমণ ২০০৫ এর স্তরের প্রায় ৪০% কম করার অনুমতি দিতে পারে।  এটি মেডিকেয়ারের প্রথমবার ওষুধের দাম কমাতে সরাসরি আলোচনার সুযোগ দিয়ে প্রেসক্রিপশন ওষুধের দাম হ্রাসে ডেমক্র্যাটদের অনেক পুরনো একটি অঙ্গিকার বাস্তবায়িত করতে সহায়ক হবে। অর্থাৎ একজন রোগী প্রতিবছর দুই হাজার ডলারের ওষুধের জন্য পকেট থেকে যে পরিমাণের অর্থ প্রদান করতেন তা সীমিত করবে। এছাড়া, স্বল্প এবং মাঝারি আয়ের লোকজনকে ‘এ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’র আওতায় চিকিৎসা কভারেজের জন্য বৃহত্তর প্রিমিয়াম ভর্তুকি তিন বছরের জন্য প্রসারিত করবে।

বিল প্রসঙ্গে সিনেট লিডার চাক শ্যুমার গণমাধ্যমকে বলেন, "এই বিলে যা আছে তার উপর সকলের দৃষ্টি দেওয়া উচিত, বিলে যা নেই তা নয়, যদিও আমরা প্রত্যেকেই আরও চাই - কারণ বিলে যা আছে তা খুব অবিশ্বাস্য।’’ সিনেটর শ্যুমার উল্লেখ করেন, ‘কারণ, অসম্ভব ধরনের চেষ্টা চালাতে হয় বিলটি ভোটে নিতে। টানা ১৬ ঘণ্টার চেষ্টার পর রবিবারের অধিবেশনে অর্থাৎ সাপ্তাহিক শেষ ছুটির দিনে অনুমোদন এলো। এর আগে রিপাবলিকানরা বহুভাবে চেষ্টা চালায় আমাদের প্রয়াসকে নস্যাতের জন্য। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। রিপাবলিকানদের ব্যর্থ করতে ডেমক্র্যাটদের এই প্রয়াস মূলত: আমেরিকানদের সামগ্রিক কল্যাণে আত্মনিয়োগের প্রকাশ ঘটিয়েছে।’ 

ইনস্যুলিনের মূল্য ৩৫ ডলারের মধ্যে সীমিত রাখার ডেমক্র্যাটদের প্রস্তাবকে থমকে দিয়েছিল রিপাবলিকানরা। একে সিনেটের ভোটে নিয়ম লংঘনের বিষয়ক হিসেবে তারা চ্যালেঞ্জ করেছিল। নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে এটিকে রিপাবলিকানরা রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা সক্ষম হননি। ইনস্যুলিনের দামের যে প্রস্তাব বাইডেনের ইচ্ছায় করা হয়েছিল তা অক্ষত রয়েছে বিলে। এরফলে লক্ষ লক্ষ প্রবীণরা উপকৃত হবেন। 

২০৩০ সালের মধ্যে বাইডেন প্রশাসনের ইচ্ছা অনুযায়ী নির্গমণ প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নাগালের মধ্যে রাখতে যুগান্তকারি জলবায়ু এবং জ্বালানী শক্তির উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিলটি ভোক্তাদের বৈদ্যুতিক যানবাহনের দিকে ধাবিত করবে এবং নবায়ন যোগ্য জ্বালানী শক্তির উৎসসমূহের বৈদ্যুতিক ইউটিলিটি ব্যবহারকারিরা ট্যাক্স প্রণোদনা পাবে। যেমন বায়ু বা সৌর শক্তি। এতে উপজাতীয় সরকার এবং নেটিভ হাওয়াইয়ানদের জন্য জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা তহবিলের লক্ষ লক্ষ ডলার, সেইসাথে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাবিত সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলগুলোকে সাহায্য করার জন্যে ৬০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রয়েছে।  

চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পনীতির প্রতিযোগিতা ত্বরান্বিত করতে ২৮০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল পলিসি’ খাতে। এতে রয়েছে যুদ্ধ ফেরৎ সৈনিকদের কল্যাণে দু’দশকেরও অধিক সময়ের চেয়ে উপযোগী কর্মকৌশল। এছাড়াও ট্যাক্স মওকুফ এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধ বিষয়ক সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনার জন্য অর্থ বরাদ্দকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সকলে। এটা ছিল সময়ের দাবি। ডেমক্র্যাটরা তা পাশে সক্ষম হওয়ায় নভেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ের অনিশ্চয়তাকে দূরে ঠেলে দিতে সক্ষম হলো বলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন। 

উল্লেখ্য, এই বিলকে জনগণের ট্যাক্সের অপচয় হিসেবে অভিহিত করেছেন রিপাবলিকানরা। তারা বলার চেষ্টা করছেন, মুদ্রাস্ফীতি চরমে উঠায় সাধারণ মানুষ যখন ত্যক্ত-বিরক্ত, তেমনি সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন, চিকিৎসা-সেবা খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না। এরফলে মুদ্রাস্ফীতি আরো বাড়বে বলেও রিপাবলিকানরা উল্লেখ করেছেন। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর