১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১৪:২২

ভারতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমছে

কলকাতা প্রতিনিধি

ভারতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমছে

সংগৃহীত ছবি

ভারতের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমছে। দেশটির 'অল ইন্ডিয়া সার্ভে অন হায়ার এডুকেশন' (এআইএসএইচই) এর পক্ষ থেকে করা সর্বশেষ ২০২০-২১ সালের জরিপেই দেখা গেছে আগের বছরের তুলনায় বিদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে শতকরা ২.৭ শতাংশ। ২০১৯-২০ উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য ভারতে আগত বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা যেখানে ৪৯,৩৪৮ জন ছিল, ২০২০-২১ সালে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮,০৩৫।

শুধু তাই নয়, ভারতের কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত সংস্থা এআইএসএইচই' এর করা গত ২৯ জানুয়ারীর রিপোর্টে দেখা গেছে ভারতের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিজের দেশের নাগরিকদের পড়তে পাঠানো বিদেশি রাষ্ট্রের সংখ্যাও কমেছে, আগে যেখানে ১৬৮টি দেশ থেকে সেদেশের শিক্ষার্থীরা পড়তে আসত, সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৬৩।

তবে বেশ কয়েক বছর ধরেই ভারতে বিদেশী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা উঠানামা করছে। ২০১৬ সালে ভারতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে মোট ৪৭,৫৭৫ জন বিদেশী নাগরিক নিবন্ধিত হয়েছিল, এরপর ২০১৭ সালে সংখ্যাটি কমে দাঁড়ায় ৪৬,১৪৪। যদিও ২০১৮ সালে এই সংখ্যাটি ৪৭,৪২৭ এবং ২০১৯ সালে নিবন্ধিত বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা বেড়ে হয় ৪৯,৩৪৮। ২০২০-২১ সালে সেই সংখ্যা ফের কমে দাঁড়িয়েছে ৪৮,০৩৫।

ভারতে পড়তে আসা বিদেশী শিক্ষার্থীর মধ্যে বেশি রয়েছে প্রতিবেশী দেশের নাগরিক। ১০ টি দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে নেপাল, শতকরা ২৮.২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী আসে এই দেশ থেকে। এরপরে ক্রমতালিকায় রয়েছে যথাক্রমে আফগানিস্তান (৮.৪ শতাংশ), বাংলাদেশ (৫.৭ শতাংশ), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (৫.১ শতাংশ), সংযুক্ত আরব আমিরাত (৪.৮ শতাংশ) , ভুটান (৩.৮ শতাংশ), সুদান (৩.৩ শতাংশ), নাইজেরিয়া (২.৯ শতাংশ), তানজানিয়া (২.৭ শতাংশ) এবং ইয়েমেন (২.৩ শতাংশ)। শীর্ষ এই ১০ দেশ থেকে আশা নারী শিক্ষার্থীদের চেয়ে পুরুষ শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি।

কিন্তু ভারতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের এই হ্রাসের পিছনে কি কারণ রয়েছে, তা নিয়ে দেশের আইআইটির এক সাবেক অধ্যাপক জানিয়েছেন, ‌‘একটি কারণ হতে পারে বিদেশী নাগরিকদের জন্য ভারতের কর্মসংস্থানের অভাব। উচ্চশিক্ষা লাভের পর যখন কর্মসংস্থানের প্রশ্ন আসে সেক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডার মতো পশ্চিমা দেশগুলিতে বিদেশি নাগরিকদের জন্য অপেক্ষাকৃত ভালো সুযোগ রয়েছে। আর এই বিষয়টি বিবেচনা করেই- কোভিড মহামারীর পরে এই পাশ্চাত্য দেশগুলির বেশিরভাগই যখন তাদের আন্তর্জাতিক সীমানা আবার খুলে দিয়েছে- ভারতের থেকে বিদেশী শিক্ষার্থীদের কাছে সেরা পছন্দ এই দেশগুলি। কারণ সেক্ষেত্রে পড়াশোনা শেষের পরই লোভনীয় অফারের চাকরির হাতছানি রয়েছে পাশ্চাত্যের ওই দেশ গুলিতে।'

ভারতের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনার জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমার পিছনে রয়েছে আরেকটি কারণ। তা হলো- ভারতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে বিদেশি নাগরিকদের ভর্তির ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা। এই বিষয়টি উল্লেখ করে ওই অধ্যাপক জানান, ‘ভারতের শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি)-তে প্রবেশের মানদণ্ড খুবই কঠিন, ফলে এটি বিদেশি নাগরিকদের জন্য ভারতে ভর্তি হওয়া খুবই কঠিন করে তোলে। তার কারণে শেষ অবলম্বন হিসাবে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের অপেক্ষাকৃত ছোট এবং বেসরকারি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে এইসব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি না হয়ে উন্নত দেশগুলি থেকে শিক্ষা লাভ অনেক বেশি ফলপ্রসু বলে মনে করেন বিদেশি নাগরিকরা।

ভারতে উচ্চশিক্ষা করতে আসা বিদেশি শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ আসেন স্নাতক স্তরের কোর্স করতে।  যার শতকরা হার ৭৫.৯ শতাংশ, স্নাতকোত্তর ১৬.২ শতাংশ), ডিপ্লোমা ৩.২১ শতাংশ এবং পিএইচডি কোর্সে নথিভূক্ত বিদেশী শিক্ষার্থীর শতকরা হার ৩.০৩ শতাংশ।

এআইএসএইচই' এর ওই জরিপে দেখা গেছে বিদেশী শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় কোর্স হলো বি.টেক, মোট ১১,২৪৫ জন শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ এই কোর্স, এর ঠিক পরেই রয়েছে বিএসসি (৩,৪৩৯ জন), বিবিএ (৩,৩১৪ জন), বি কম (২,৬০৫ জন), বিই বা ব্যাচেলার অফ ইঞ্জিনিয়ারিং (২,৫৪১ জন), এমবিএ (২,০৯৯), বি ফার্ম (২,০২১ ছাত্র) এবং বিসিএ (১,৯১৮ শিক্ষার্থী)।

ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীদের টানার ব্যাপারে এখনো সবার শীর্ষে রয়েছে কর্ণাটক। দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যটিতে ৮১৩৭ জন বিদেশী শিক্ষার্থী রয়েছেন, এরপর পাঞ্জাব (৬৫৫৭), মহারাষ্ট্র (৪,৯১২), উত্তর প্রদেশ (৪,৬৫৪), তামিলনাড়ু (৩,৬৮৫), দিল্লি (২,৮০৯), গুজরাট (২,৬৪৬), অন্ধ্র প্রদেশ (২৩৮৫) এবং ওড়িশা (২১৮০)।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর