পুলিশের গুলিতে অপ্রাপ্তবয়স্ক এক তরুণের মৃত্যুর জেরে গত কয়েক দিন ধরে উত্তাল হয়ে উঠেছে ইউরোপের দেশ ফ্রান্স। চলমান বিক্ষোভ থামাতে অভিভাবকদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার পাশাপাশি সন্তানদের ঘরে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরন।
শুক্রবার প্যারিসে মন্ত্রিপরিষদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে ম্যাকরন বলেন, “যারা বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে, তাদের অধিকাংশ একেবারেই তরুণ। অনেকেই এখনও প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি।”
তিনি বলেন, “অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান কী করছে, কোথায় যাচ্ছে— সেসবের খোঁজ রাখা অভিভাবকদের দায়িত্ব, রাষ্ট্রের নয়। আমি ফ্রান্সের অভিভাবকদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার জন্য সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ছড়াতে থাকা বিভিন্ন ভুয়া তথ্য ও সংবাদকেও দায়ী করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, “আমাদের বর্তমান দৈনন্দিন জীবনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভূমিকা দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। সাম্প্রতিক বিক্ষোভ নিয়ে স্ন্যাপচ্যাট, টিকটকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রচুর ভুয়া তথ্য ও সংবাদ ছাড়ানো হচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকেও আরও দায়িত্বশীল হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট।
ফ্রান্সে গত তিন দিন ধরে তীব্র বিক্ষোভ চলছে। ইতোমধ্যে গত তিন দিনে পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস ও নাশকতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে প্রায় ১ হাজার বিক্ষোভকারীকে, যাদের প্রায় সবাই বয়সে তরুণ। এছাড়া বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘাতে আহত হয়েছেন অন্তত ২৫০ জন পুলিশ সদস্য।
এরই মধ্যে এই দাঙ্গা ও বিক্ষোভ থামাতে দেশজুড়ে ৪৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রাস্তায় নামানো হয়েছে সাজোয়া যান।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার এই বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। ওইদিন সকালে প্যারিসের উপশহর নানতেরে ট্রাফিক বিধি অমান্য করে জোরে গাড়ি চালানোর অভিযোগে নাহেল এম নামের ১৭ বছর বয়সী এক তরুণ গাড়ি থামানোর নির্দেশ দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু নাহেল তাতে কর্ণপাত না করে গাড়ি নিয়ে সরে পড়ার চেষ্টা করলে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন পুলিশ সদস্যরা। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় নাহেলের।
নাহেলের পরিবারের সদস্যরা আলজেরিয়া থেকে এসে ফ্রান্সে স্থায়ী হয়েছেন। তাদের আর্থিক অবস্থাও খুব ভালো নয়। প্যারিসের নানতের উপশহরটি মূলত দরিদ্র অধ্যুষিত এলাকা। সেখানেই মায়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি। নাহেল ও তার মা মৌনিয়া ইসলাম ধর্মাবলম্বী।
পুলিশের গুলিতে নাহেল নিহত হওয়ার পরই বিক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে নানতেরে। তারপর বৃহস্পতিবার বিকালে এক অনলাইন বার্তায় নাহেলের মা মৌনিয়া তার নিহত ছেলের জন্য ন্যায়বিচারের দাবি জানান। সেই সঙ্গে পাশে থাকার জন্য বিক্ষোভকারীদের ধন্যবাদও জানান তিনি।
এই বিক্ষোভ মূলত শুরু হয়েছিল প্যারিসে। তবে বৃহস্পতিবার থেকে তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সূত্র: বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান
বিডি প্রতিদিন/কালাম