মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের একজন মুখপাত্র বলেছেন, রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার এখন আর ইউক্রেনের রণক্ষেত্রে ‘বলার মতো কোনো ভূমিকা রাখছে না।’ রুশ এই বাহিনীর ব্যর্থ এক বিদ্রোহের সপ্তাহ তিনেক পর যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এই বিবৃতি শোনা গেল। ওয়াগনারের ওই বিদ্রোহ ছিল সম্ভবত প্রেসিডেন্ট পুতিনের জন্য এযাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
রাশিয়া গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর বেশ কতগুলো রক্তক্ষয়ী লড়াইতে ওয়াগনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু পুতিন এখন স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছেন, রাশিয়ায় ওয়াগনার গোষ্ঠীর কোনো ভবিষ্যৎ নেই।
পুতিন সম্প্রতি রাশিয়ার অর্থনীতি বিষয়ক সংবাদপত্র কোমেরসান্টের সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ওয়াগনারের কোনো অস্তিত্ব নেই।‘ ওয়াগনারকে একটি যোদ্ধা বাহিনী হিসেবে রাখা হবে কি না- এমন প্রশ্নে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘রাশিয়ায় বেসরকারি কোনো সামরিক সংস্থা গঠন আইনসিদ্ধ নয়, ফলে এটির কোনো অস্তিত্ব নেই।’ তবে কিভাবে ওয়াগনার যোদ্ধাদের আইনসিদ্ধ করা যায় সেই ‘জটিল ইস্যু’ নিয়ে পার্লামেন্টে কথা হবে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার নেতা।
যে চুক্তির মাধ্যমে জুনের ২৩-২৪ তারিখে ওয়াগনারের বিদ্রোহের অবসান হয়, তাতে বলা হয় ওয়াগনারের যোদ্ধারা চাইলে রাশিয়ার নিয়মিত সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারে, অথবা গোষ্ঠীর প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের সঙ্গে বেলারুশে চলে যেতে পারে। কিন্তু এ সপ্তাহের শুরুর দিকে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জুনের ২৯ তারিখে পুতিন মস্কোতে প্রিগোজিন ও ওয়াগনারের বেশ কজন জ্যেষ্ঠ কমান্ডারের সঙ্গে কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে পেন্টাগনের মুখপাত্র প্যাট রাইডার বলেন, ‘এই মুহূর্তে’ মার্কিন সেনাবাহিনীর কাছে এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই, যাতে বলা যায়, ইউক্রেনের যুদ্ধে ওয়াগনার তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে রাইডার জানান, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিশ্লেষণ বলছে, ‘সিংহভাগ’ ওয়াগনার যোদ্ধা এখনো ইউক্রেনের রুশ অধিকৃত এলাকাগুলোতে রয়েছে।
প্রিগোজিনের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে কী বললেন পুতিন
কমেরসান্ট পত্রিকার সঙ্গে তার সাক্ষাৎকারে, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন প্রিগোজিনসহ ওয়াগনারের ৩৫ জন কমান্ডারের সঙ্গে তার বৈঠক সম্পর্কে কিছু কথা বলেছেন। পুতিন বলেন, তিনি তাদের কর্মসংস্থানের জন্য তাদেরকে কিছু বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তার মধ্যে একটি হলো, তারা এখনো ওয়াগনারের একজন জ্যেষ্ঠ কমান্ডারের অধীনে কাজ করতে পারেন। রণক্ষেত্রে ওয়াগনারের এই কম্যান্ডার ‘সিডয়’ (ছাইরঙা চুল) নামে পরিচিত।
পুতিন জানান, “তাদের অনেকেই আমার কথায় সায় দিয়ে মাথা নাড়ছিল। প্রিগোজিন প্রথম সারিতে বসে ছিলেন বলে বাকিদের সহমত হয়ে এসব মাথা নাড়া দেখেননি, ফলে আমার কথা শোনার পর তার উত্তর ছিল : ‘না এরা এই সিদ্ধান্তে রাজী হবে না।’”
মস্কোতে বিবিসির রাশিয়া বিষয়ক সম্পাদক স্টিভ রোজেনবার্গ বলেন, ‘ক্রেমলিন এখন দেখাতে চাইছে যে প্রিগোজিন ও ওয়াগনারের সাধারণ যোদ্ধাদের মধ্যে অনেক ফারাক, এবং এভাবে প্রিগোজিনের সঙ্গে বাকিদের বিরোধ ও দূরত্ব তৈরির চেষ্টা হচ্ছে।’ রুশ সরকার নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমগুলোতেও নানাভাবে প্রিগোজিনের সুনামহানি করা হচ্ছে।
খাবারে বিষ নিয়ে সতর্ক থাকুন : বাইডেন
এদিকে বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফিনল্যান্ডে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিদ্রোহের পর তার ওপর বিষ প্রয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে প্রিগোজিনের এখন সতর্ক থাকা উচিৎ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘শুধু ঈশ্বর জানেন সে (প্রিগোজিন) এখন কী করবে. আমরা জানিনা এখন সে কোথায় আছে এবং (পুতিনের সঙ্গে) তার সম্পর্ক কী। তবে আমি যদি প্রিগোজিন হতাম, তাহলে কী খাচ্ছি তা নিয়ে সাবধান থাকতাম।’
হেলসিঙ্কিতে নরডিক দেশগুলোর সঙ্গে এক শীর্ষ বৈঠকের শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিনের জেতার কোনো সম্ভাবনা নেই। ‘তিনি এরই মধ্যে হেরে গেছেন।’ বাইডেন বলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট শেষ পর্যন্ত ‘সিদ্ধান্ত নেবেন যে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কোনো বিবেচনাতেই এই যুদ্ধ রাশিয়ার স্বার্থের পক্ষে নয়। কিন্তু কখন এবং কিভাবে তা হবে আমি এখনো তা অনুমান করতে পারছিনা।’
তিনি বলেন, তার ‘আশা ও ইচ্ছা’ যে ইউক্রেন তাদের বর্তমান পাল্টাহামলায় যথেষ্ট সাফল্য পাবে, যাতে করে শান্তি মীমাংসা ত্বরান্বিত হতে পারে। কিন্তু এক মাস ধরে এই পাল্টা হামলা চলার পরও, ইউক্রেনের ভেতরে অনেকে এবং ইউক্রেনের অনেক মিত্র এই পাল্টাহামলায় অগ্রগতির ধীর গতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
তবে অনেকে আবার বলছেন, রুশ প্রতিরক্ষা শেষ পর্যন্ত ধসে পড়বে এবং ইউক্রেনীয়রা সামরিক কৌশলের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অনেক জায়গার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ক্রিমিয়ার দিকে অগ্রসর হতে সক্ষম হবে। ২০১৪ সালে রাশিয়া ইউকেনের হাত থেকে ক্রিমিয়া দখল করে নেয়।
রাশিয়ার মোকাবেলায় ইউক্রেন বহুদিন ধরেই পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে আরো অস্ত্র সাহায্য চাইছে এবং ন্যাটো জোটের সদস্য পদ চাইছে। ন্যাটোতে সদস্য পদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট দিন-ক্ষণের প্রতিশ্রুতি ইউক্রেন না পেলেও জি-৭ জোট ইউক্রেনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী একটি নিরাপত্তা কাঠামোর অঙ্গিকার করেছে।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের সেনা কমান্ডার ওলেকসান্ডার তারনাভস্কি মার্কিন টিভি নেটওয়ার্ক সিএনএনকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে তারা বিতর্কিত ক্লাস্টার বোমার প্রথম চালানটি হাতে পেয়েছে। তিনি বলেন, এই বোমা সম্মুখ রণক্ষেত্রে ইউক্রেনের সাফল্যে বড় ভূমিকা রাখবে। ‘আমরা এগুলো হাতে পেয়েছি, তবে এখনো ব্যবহার করিনি। কিন্তু এগুলো রণক্ষেত্রের ভারসাম্য আমূল বদলে ফেলতে সক্ষম।’
বিডি-প্রতিদিন/শফিক