কলকাতার সরকারি আরজিকর মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে এক ডাক্তারি ছাত্রীকে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার প্রতিবাদে এবার রাজ্যসভার সাংসদ পদ ছাড়তে যাচ্ছেন জহর সরকার। সাংসদ পদ ছাড়তে চেয়ে ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে চিঠি পাঠিয়েছেন। সাংসদ পদ ছাড়ার পাশাপাশি রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে দিল্লি গিয়ে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান এর কাছে চিঠি দিয়ে পদত্যাগ করবেন বলে জানা গেছে।
গত ৯ আগস্ট হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় ওই ডাক্তারি ছাত্রীর উপর নৃশংস এই ঘটনার ন্যয় বিচার চেয়ে গত প্রায় এক মাস ধরে রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ, আন্দোলন চলে আসছে। প্রতিবাদের সেই ঢেউ আঁছড়ে পড়েছে গোটা দেশে। ফলে ঘরে বাইরে যথেষ্ট অস্বস্তিতে তৃণমূল সরকার।
এমন এক পরিস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় সাংসদ পদ ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে জহর সরকার লেখেন 'আমি আর পারছি না। সাংসদ পদ থেকে মুক্তি চাই। রাজনীতি ছাড়ছি কিন্তু নীতি ছাড়ব না।'রবিবার দুই পাতার একটি চিঠি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে জহর সরকার বলেন, 'আমি অনেক চিন্তা ভাবনার পর স্থির করেছি সাংসদ পদ থেকে পদত্যাগ করব এবং রাজনীতি থেকে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হবো। আমার কখনওই দলীয় পদ বা অন্য কিছুর উপর উচ্ছাসা ছিল না। আমি মোদি সরকারের স্বৈরাচারী, বিভেদমূলক, বৈষম্যমূলক ও গণতন্ত্র বিরোধী কার্যকলাপ ও নীতির স্বার্থহীন ও সুতীব্র সমালোচনা করতে পেরেছি। এটাই আমার সন্তুষ্টির কারণ। কিন্তু সংসদে নির্বাচিত হওয়ার এক বছর পর যখন ২০২২ সালে বিভিন্ন গণমাধ্যমে রাজ্যের সাবেক শিক্ষা মন্ত্রীর (পার্থ চ্যাটার্জি) চূড়ান্ত দুর্নীতির খোলাখুলি প্রমাণ দেখে প্রকাশ্যে মতামত দিই যে, দল ও সরকারের এই ব্যাপারে অত্যন্ত সক্রিয় হওয়ার প্রয়োজন, তখন দলের অনেক সিনিয়র নেতা আমাকে হেনস্থা করেন। তখন আমি পদত্যাগ করা থেকে বিরত ছিলাম, এই আশা নিয়ে যে আপনি তোলাবাজি ও আর্থিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক বছর আগে যে আন্দোলন আরম্ভ করেছিলেন, তা চালিয়ে যাবেন।'
এর পরই আরজিকর ইস্যুতে জহর সরকার বলেন, 'ধৈর্য ধরে আরজিকর হাসপাতালে ঘৃণ্য ঘটনার বিরুদ্ধে সবার প্রতিক্রিয়া দেখেছি, আর ভেবেছি আপনি কেন সেই পুরনো মমতা ব্যানার্জির মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে সরাসরি জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলছেন না। এখন রাজ্য সরকার যেসব শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা এক কথায় অতিস্বল্প এবং অনেক দেরি হয়ে গেছে। সবাই জানে রাজ্যের স্বাভাবিক অবস্থা অনেক আগেই ফিরে আসতে পারতো যদি দুর্নীতিগ্রস্ত এই ডাক্তারদের চক্র ভেঙ্গে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক সময়ে নেয়া হতো এবং যেসব উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এই নক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িত তাদের তৎক্ষণাৎ শাস্তি দেওয়া হতো। আমার বিশ্বাস এই আন্দোলনে পথে নামা মানুষেরা অরাজনৈতিক এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই প্রতিবাদ করছেন। অতএব রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে এই আন্দোলনকে প্রতিরোধ করা ঠিক হবে না।'
এদিকে জহর সরকার প্রথম ব্যক্তি যিনি সাংসদ পদ ছাড়ার কথা ঘোষণা করলেন। ফলে তার এই সিদ্ধান্তে বেশ কিছুটা অস্বস্তিতে তৃণমূল কংগ্রেস।
এর আগে রাজ্যসভার আরেক তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় আরজিকর ইস্যুতে ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করে সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন। এমনকি এই ঘটনার সুবিচার চেয়ে কলকাতার যোধপুর পার্কে ধরনাতেও বসেছিলেন সুখেন্দুশেখর রায়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল