পশ্চিমবঙ্গের ছয়টি আসনে বিধানসভার উপনির্বাচন আগামী ১৩ নভেম্বর। আগামী ২৫ অক্টোবর মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে হবে এই নির্বাচন। আর এ উপনির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে তোড়জোর শুরু হয়েছে।
ওই ছয় কেন্দ্রে রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং প্রধান বিরোধী দল বিজেপি তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। গতকাল শনিবার বিজেপির প্রার্থী ঘোষণার পর আজ রোববার প্রার্থী ঘোষণা করে তৃণমূল।
কেন্দ্রগুলো হলো, সিতাই, মাদারিহাট, তালডাংরা, মেদিনীপুর, হাড়োয়া ও নৈহাটি।
সিতাই কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সঙ্গীতা রায়, বিজেপির প্রার্থী দীপক কুমার রায়। মাদারিহাট কেন্দ্রে তৃণমূলের জয়প্রকাশ তোপ্পো, বিজেপির রাহুল লোহার। তালডাংরা কেন্দ্রে তৃণমূলের ফাল্গুনী সিংহবাবু, বিজেপির অনন্যা রায় চক্রবর্তী। মেদিনীপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের সুজয় হাজরা, বিজেপির শুভজিৎ রায়। হাড়োয়া কেন্দ্রে তৃণমূলের এস.কে রবিউল ইসলাম, বিজেপির বিমল দাস এবং নৈহাটি কেন্দ্রে তৃণমূলের সনৎ দে, বিজেপির রূপক মিত্র।
এই ছয় বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়করাই সম্প্রতি লোকসভায় বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে আসনগুলোতে উপনির্বাচন জরুরি হয়ে পড়ে। ২০২১ সালের বিধানসভার নির্বাচনে এই ছয় আসনের মধ্যে কেবলমাত্র একটি মাত্র আসন মাদারিহাটে জয় পেয়েছে বিজেপি, বাকি পাঁচটিই তৃণমূলের দখলে। তৃণমূলের প্রত্যাশা, এবারও পাঁচটি আসনই নিজেদের দখলে রাখবে। পাশাপাশি অন্য আসনটিতে বিজেপির কাছ থেকে তারা জয় ছিনিয়ে নেবে। কিন্তু তাতে বাধ সেধেছে আরজি কর ইস্যু।
কলকাতার আরজিকর মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে ডাক্তারি পড়ুয়া ছাত্রীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যথেষ্ট অস্বতিতে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস। সুবিচারের দাবিতে গোটা রাজ্য জুড়ে এখনো প্রতিবাদ, আন্দোলন, মিছিল চলছে। এমন এক আবহে এই ছয়টি কেন্দ্রে উপনির্বাচন হতে চলেছে।
অন্যদিকে, বিজেপির প্রত্যাশা, আরজি করের মতো ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে তারা নিজেদের পালে হওয়া টানতে পারবে। যদিও শেষ কথা বলবে ভোটাররা। তাদের মন জয় করতে নির্বাচনী প্রচারণায় রাজনৈতিক দলগুলি কী কী কৌশল অবলম্বন করে সেটিই এখন দেখার!
এদিকে দলের প্রার্থীদের হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় কোন কোন তারকা অংশ নেবেন তার রূপরেখা তৈরি হচ্ছে তৃণমূল ও বিজেপির।
প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর রোববার ছুটির দিনে জনসংযোগে বেরিয়ে পড়েন প্রার্থীদের কেউ কেউ। এ দিন সকালের দিকে নৈহাটি বিধানসভা উপনির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী রূপক মিত্র ঐতিহ্যবাহী বড়মার মন্দিরে পূজা দিতে আসেন। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার জেলা সভাপতি মনোজ ব্যানার্জি, সাবেক জেলা সভাপতি সন্দীপ ব্যানার্জি ও অন্যান্য নেতাকর্মীরা।
বিজেপির মনোনীত প্রার্থী বলেন, আমাদের সঙ্গে মানুষ আছে। নৈহাটির মানুষ নির্বাচনে বুঝিয়ে দেবে। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হলে এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীই জিতবে।
মাদারিহাট বিধানসভার উপনির্বাচনের বিজেপি পদপ্রার্থী রাহুল লোহার প্রচারণার কাজে নেমে পড়েন। তার সঙ্গে ছিলেন বিজেপির দলীয় কর্মী ও সমর্থকরা।
এ দিন প্রথমে বীরপাড়া বাজারে একটি মন্দিরে পূজা দিয়ে সাধারণ লোকের কাছে পৌঁছে যান রাহুল লোহার। তার সঙ্গী হিসেবে ছিলেন রাজনীতিতে পোড় খাওয়া বর্তমানে এলাকার সাংসদ মনোজ টিগ্গা। তিনিও মানুষের কাছে বিজেপি প্রার্থীকে জেতানোর আবেদন জানান।
অন্যদিকে, বিজয় প্রত্যাশী সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দীপক কুমার রায় জানান, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় আরজি করের মতো ঘটনা হয়নি। এবারে আরজি করের মত ইস্যু রয়েছে।
এ দিন তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরই নৈহাটি কেন্দ্রে দেওয়াল লিখনে নেমে পড়েন সনৎ দে। এ সময় দলীয় কর্মী-সমর্থকরা স্লোগান দিতে থাকেন। তৃণমূল প্রার্থী সনৎ দে জানান, মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে তৃণমূল যেভাবে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছে, তাতে মানুষ তাদের ওপরই ভরসা রাখবে।
সিতাই বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী ঘোষণার পরই দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রার্থী সঙ্গিতা রায় বসুনিয়া। জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী তিনি। সঙ্গিতা রায় বসুনিয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি।
বিডি প্রতিদিন/কেএ