রাশিয়ার বৃহৎ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হিমশিম খাচ্ছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। বিশেষত, পদাতিক বাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় সৈন্যের অভাবে চাপে পড়েছে তারা। এই পরিস্থিতিতে, সেনা শূন্যতা পূরণে অনুপস্থিত (AWOL) কিংবা দায়িত্ব থেকে পালিয়ে যাওয়া সৈন্যদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রসিকিউটর অফিসের তথ্যমতে, ২০২২ সাল থেকে এ পর্যন্ত দায়িত্ব পালনে অনুপস্থিত থাকা এবং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে প্রায় ৯৫,০০০ মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মামলা শুধু ২০২৪ সালে হয়েছে।
সম্প্রতি ইউক্রেনীয় সংসদ নতুন একটি আইন পাস করেছে, যেখানে প্রথমবার দায়িত্ব পালনে অনুপস্থিত থাকাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য না করার বিধান রাখা হয়েছে। ফলে, এই সেনারা নতুন করে সেবায় ফিরে আসার সুযোগ পাচ্ছেন। ইউক্রেনের এলিট ৪৭তম ব্রিগেড তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন সৈন্যদের পুনরায় যোগ দেওয়ার আহ্বান জানায়।
ব্রিগেডের প্রধান নিয়োগ কর্মকর্তা ভায়াচেস্লাভ স্মিরনভ জানিয়েছেন, এই আহ্বানের পর মাত্র দুই দিনে ১০০টিরও বেশি আবেদন জমা পড়ে। আবেদন এত বেশি আসছে যে, আমরা একটির প্রক্রিয়া শেষ করার আগেই নতুনগুলো এসে যাচ্ছে, বলেন তিনি।
কর্মক্লান্তি এবং দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধরত থাকার কারণে অনেক সেনা দায়িত্ব পালনে অনুপস্থিত ছিলেন। কেবল গত মাসেই ৬,০০০ সেনা তাদের দায়িত্বে ফিরে এসেছেন, যার মধ্যে নতুন আইনের বাস্তবায়নের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ফিরে এসেছেন ৩,০০০ সেনা।
কেই-২ ব্যাটালিয়নের কর্মকর্তা মিখাইলো পেরেটস জানান, তাদের ইউনিটে ৩০ জনের বেশি AWOL সৈন্য পুনরায় যুক্ত হয়েছেন। অনেক সেনা বেসামরিক জীবন থেকে সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশের কঠিন চাপ সহ্য করতে না পেরে পালিয়ে গিয়েছিলেন। কেউ কেউ ড্রোন পাইলট হিসেবে কাজ করেও পর্যাপ্ত পদাতিক সৈন্যের অভাবে ফ্রন্টলাইনে পাঠানোর চাপ সহ্য করতে পারেননি।
সেনা সংকটের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেনের আসল সমস্যা জনবল নয়, বরং অস্ত্রের অভাব। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে প্রাথমিক ড্রাফট বয়স ২৫ থেকে কমিয়ে ১৮ করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এ পরিস্থিতি নিয়ে জেলেনস্কি জানান, গত এক বছরে গঠিত ১০টি নতুন ব্রিগেডের মধ্যে মাত্র এক-চতুর্থাংশ প্রয়োজনীয় সামরিক সরঞ্জাম পেয়েছে। তবে সেনাদের ক্লান্তি এবং পুনরায় দলে ফেরানোর এই উদ্যোগ সামরিক শূন্যতা কিছুটা পূরণে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল