যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেড় দশক অর্থাৎ ১৫ বছরে প্রায় ১৬ হাজার অবৈধ ভারতীয় অভিবাসী দেশে ফিরেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর এ তথ্য জানান। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে গত বুধবার মার্কিন সামরিক বাহিনীর বিমানে করে ১০৪ ভারতীয় অবৈধ অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ওঠে ভারতীয় পার্লামেন্টেও। বিরোধীদের দাবির মুখে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নতুন কিছু নয়। বিগত কয়েক দশক ধরেই এটি চলছে।
এ সময় জয়শঙ্কর বিগত দেড় দশকের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে জানান, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ১৫,৭৫৬ জন অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এই ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া নতুন নয়... এটি বহু বছর ধরে চলে আসছে। এটি কোনো নির্দিষ্ট দেশের জন্য প্রযোজ্য কোনো বিশেষ নীতি নয়। আমাদের মূল মনোযোগ হওয়া উচিত, অবৈধ অভিবাসন দমনের ওপর... আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করছি যেন ফেরত পাঠানো ব্যক্তিদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার না করা হয়।’
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সর্বোচ্চ ২,০৪২ জন ভারতীয়কে ফেরত পাঠানো হয়। এরপর ২০২০ সালে ১,৮৮৯ জনকে ফেরত পাঠানো হয়। সে সময় বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হয়।
এর আগে, গত বুধবার মার্কিন সামরিক উড়োজাহাজে ১০৪ অবৈধ ভারতীয় অভিবাসী পাঞ্জাবের অমৃতসরে এসে পৌঁছান। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে নেওয়া কঠোর পদক্ষেপের অংশ হিসেবে এটি ছিল প্রথম দলভুক্ত প্রত্যাবাসন। ফেরত আসা ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৩ জন হরিয়ানা ও গুজরাটের, ৩০ জন পাঞ্জাবের, ৩ জন মহারাষ্ট্র ও উত্তর প্রদেশের এবং ২ জন চণ্ডীগড়ের বাসিন্দা।
এই অভিবাসীদের অনেকে বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের আশায় বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করেছিলেন। এই অর্থ মূলত ঋণের মাধ্যমে জোগাড় করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তাদের মানব পাচারকারীদের ব্যবস্থাপনায় বহু দেশ পেরিয়ে পায়ে হেঁটে কঠিন যাত্রা করতে হয়েছে।
ভারতে অবতরণের পর অভিবাসীদের সঙ্গে হওয়া অমানবিক আচরণের নানা গল্প সামনে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত টহল বাহিনীর এক ভিডিওতে দেখা যায়, ফেরত পাঠানো ব্যক্তিদের হাতকড়া পরানো এবং পায়ে শিকল বেঁধে এমনভাবে হাঁটতে বাধ্য করা হয়, যা সাধারণত ভয়ংকর অপরাধীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়।
ভারতে প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক বিতর্ক
এই ফেরত পাঠানোর পদ্ধতি নিয়ে ভারতের বিরোধী দলগুলোর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছে এবং প্রশ্ন তুলেছে, কেন ভারত সরকার নিজস্ব উড়োজাহাজ পাঠিয়ে নাগরিকদের সম্মানজনকভাবে ফেরত আনতে পারল না।
তৃণমূলের এমপি সাকেত গোখলে বলেন, ‘আমরা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি... এমনকি কলম্বিয়ার মতো দেশ, যা শীর্ষ দশেও নেই, তারা তাদের নাগরিকদের ফেরত আনতে উড়োজাহাজ পাঠাতে পারে, তাহলে আমাদের সরকার কেন পারছে না? আমাদের তো উড়োজাহাজের অভাব নেই।’
এ নিয়ে সংসদে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেন, এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া পরিচালনা করে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগকারী সংস্থা (ICE)। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া আইসিই কর্তৃক সংগঠিত ও পরিচালিত হয়। ২০১২ সাল থেকে আইসিই-এর প্রত্যাবাসনের জন্য নির্ধারিত মানদণ্ড কার্যকর রয়েছে, যেখানে হাতকড়া ও অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে আইসিই আমাদের জানিয়েছে, নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হয় না। এ ছাড়া, ফেরত পাঠানো ব্যক্তিদের খাদ্য, অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা এবং সম্ভাব্য চিকিৎসা জরুরি অবস্থার বিষয়েও যত্ন নেওয়া হয়। টয়লেট ব্যবহারের সময় প্রয়োজনে তাদের সাময়িকভাবে মুক্ত করা হয়।’
সোর্স: এনডিটিভি, টাইমস অফ ইন্ডিয়া
বিডি প্রতিদিন/আশিক