বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

আমেরিকার কারণে চার কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত

সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াই

আমেরিকার কারণে চার কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত

যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত সন্ত্রাসবাদের নামে কয়েকটি দেশে যুদ্ধ ও হামলা চালিয়েছে। গত ২০ বছরের কম এসব যুদ্ধে আটটি দেশে কমপক্ষে ৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় মঙ্গলবার তাদের ‘কস্ট অব ওয়ার প্রজেক্ট’-এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। খবর পলিটিকো

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন ক্ষমতা কেন্দ্র পেন্টাগন আর টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলা হয়। এ হামলার অজুহাতে তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ শুরু করেন অপারেশন এনডিউরিং ফ্রিডম, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ। নিরন্তর সেই যুদ্ধ আফগানিস্তান থেকে ইরাক, পাকিস্তান, ইয়েমেন, সোমালিয়া, ফিলিপাইন, লিবিয়া ও সিরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। ‘ক্রিয়েটিং রেফিউজিস : ডিসপ্লেসমেন্ট কজড বাই দ্য ইউনাইটেড স্টেটস পোস্ট ৯/১১ ওয়ারস’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের কবলে থাকা ৮টি দেশকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। দেশগুলো হচ্ছে আফগানিস্তান, ইরাক, পাকিস্তান, ইয়েমেন, সোমালিয়া, ফিলিপাইন, লিবিয়া ও সিরিয়া।

প্রতিবেদনের প্রধান গবেষক ওয়াশিংটনের আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ডেভিড ভাইন নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘ওই দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা ভয়াবহ বিপর্যয় বয়ে এনেছে, ভয়াবহ রকম ধ্বংসাত্মক হয়েছে।’ সীমিত পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম চালু থাকা বুরকিনা ফাসো, ক্যামেরুন, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, শাদ, ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, মালি, নাইজার, সৌদি আরব ও তিউনিশিয়ার পরিস্থিতিকে প্রতিবেদনে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। তাদের হিসাবে নিলে প্রকৃত বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ৫ কোটি ৯০ লাখ পর্যন্ত হতে পারে। ১/১১-এর পর সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের নামে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ বেড়েছে বলে প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়েছে। তাদের মতে, ওই ঘটনার পর প্রতিবেশী, সম্প্রদায় তথা ওইসব দেশের পুরো সমাজব্যবস্থার সঙ্গে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা তৈরি করে। গবেষকেরা বলেছেন, দেশগুলোর জনসাধারণকে অভিবাসী হওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র কারণ ছিল না। তবে যেসব দ্বন্দ্ব-সংঘাতের কারণে তারা অভিবাসী হয়েছে তাতে যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ইরাকের প্রসঙ্গ টেনে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে হামলার জেরে দেশটিতে সম্প্রদায়গত বিভেদ থেকে সংঘর্ষ ও বাস্তুচ্যুতি হয়। অথচ দেশটিতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছিল। শিয়া, সুন্নি ও অন্যান্য ধর্মীয় ও জাতিগত গোষ্ঠীগুলো পাশাপাশি বাস করত, একসঙ্গে কাজ করত এবং অন্তর্বিবাহ হতো। যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর সেখানে তিন ধরনের বড় জাতিগত-সাম্প্রদায়িক অঞ্চল তৈরি হয়। শিয়া, সুন্নি ও কুর্দিদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান আত্মপরিচয় জন্ম নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের শক্তির ফলে বাগদাদের মতো শহরগুলোতে জাতিগত বিভেদ সৃষ্টি হয়।

সর্বশেষ খবর