বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

পশ্চিমবঙ্গে ১০ জনকে পুড়িয়ে হত্যা নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা

মমতার পদত্যাগ চাইছে বিজেপি

কলকাতা প্রতিনিধি

বীরভূম জেলার রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে সোমবার রাতে ১০ জনকে পুড়িয়ে হত্যার খবরে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা চলছে। বিজেপি সহিংসতা দমনে ব্যর্থতার দায়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির পদত্যাগের দাবি তুলেছে। ঘটনার সূত্রপাত গ্রামের উপপ্রধান ও তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ভাদু শেখকে বোমা মেরে হত্যাকে কেন্দ্র করে। সড়কের পাশে দোকানে বসে ভাদু শেখ যখন চা খাচ্ছিলেন তখনই তাকে লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা বোমা মারে। এর পরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। ওই ঘটনার বদলা নিতেই ভাদু শেখের বাড়ি রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে তার সহযোগীরা তা-ব চালায়। রাতভর চলে বোমাবাজি। অন্তত ১০-১২টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। অভিযোগ, বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। আর তাতেই ১০ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। যার মধ্যে একটি বাড়ি থেকেই সাতজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহতের অধিকাংশই নারী। সোমবার গভীর রাতেই তিনটি অগ্নিদগ্ধ লাশ উদ্ধার হয়। গতকাল সকাল থেকেই পরপর আরও সাতজনের অগ্নিদগ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। গ্রামবাসীর অভিযোগ, পুড়িয়ে মারা হয় তাদের। এরপর দফায় দফায় ওই লাশগুলো আনা হয় রামপুরহাট মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে।
 হাসপাতালসূত্রে খবর, অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় এখনো চারজন চিকিৎসাধীন।
ঘটনার পর রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। এরপর গোটা রাত ধরে চলে আগুন নেভানোর কাজ, এমনকি সকালেও একাধিক জায়গায় আগুন নেভানোর কাজ চলে। খবর পেয়েই রাত থেকে দফায় দফায় ঘটনাস্থলে পৌঁছন বীরভূমের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী ও জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। উত্তেজনা থামাতে গ্রামে বসানো হয় পুলিশ পিকেট।
ফায়ার সার্ভিস ১০ জনের মৃত্যুর কথা জানালেও রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য সংবাদ সম্মেলনে আটজনের মৃত্যুর খবর জানান। তাঁর ধারণা, এ মৃত্যুর পেছনে কোনো রাজনীতি নেই। তিনি বলেন, ‘ভাদু শেখের খুনের পরই সাত-আটটি বাড়িতে আগুন লাগানো হয়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
স্থানীয় সূত্রে খবর, দীর্ঘদিন ধরেই বগটুই গ্রামের পূর্বপাড়া ও পশ্চিমপাড়ার মধ্যে রেষারেষি ছিল। মাঝেমধ্যে দুই গ্রামের মধ্যে বোমাবাজির ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু সোমবারের ঘটনা সবকিছুকেই ছাপিয়ে গেছে। তবে এ গণহত্যার পেছনে গ্রাম্য বিবাদ নাকি রাজনৈতিক কারণ রয়েছে তা সবটাই তদন্তসাপেক্ষ। ইতোমধ্যে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে রামপুরহাট মহকুমা পুলিশ কর্মকর্তা সায়ন আহমেদ ও রামপুরহাটের আইসি ত্রিদিব প্রামাণিককে অপসারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনা তদন্ত করতে ইতোমধ্যে তিন সদস্যের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) গঠন করা হয়েছে।
টুইট করে রাজ্যটির বিরোধী দলনেতা ও বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘রাতভর বর্বরতায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে, এবং বেশির ভাগই নারী। অথচ প্রশাসনের তরফে লাশের সংখ্যা কম দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে। অবিলম্বে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। রাজ্যে আইনের দ্রুত অবনতি হচ্ছে।’
সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীকেই এ ঘটনায় দায় নিতে হবে। ভোটের দিন খুন হলো, বুথ দখল হলো, তৃণমূলের বিধায়ক, সাংসদ ও দুর্বৃত্তদের এসব দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে রামপুরহাটের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির পদত্যাগ দাবি করে বিজেপি। এদিন বিধানসভার অধিবেশনের প্রশ্নোত্তরপর্ব শেষের পর বিজেপি বিধায়করা মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন। এ সময় হট্টগোলের মধ্যেই বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করেন বিজেপির বিধায়করা। সেই সঙ্গে এ ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফা দাবি করেন তাঁরা।
টুইট করে রাজ্য সরকারকে তোপ দেগেছেন রাজ্যটির রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও। ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, ‘রাজ্যে আইনের শাসন নেই। গণহত্যা রুখতে রাজ্য প্রশাসন ব্যর্থ। রাজ্যে সন্ত্রাসের সংস্কৃতি বিরাজ করছে।’
এদিন রাজ্য বিধানসভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে রামপুরহাটের ঘটনা নিয়ে রাজ্যটির পরষদীয় মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি বলেন, ‘রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি খারাপ করার জন্যই এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এর পেছনে বৃহত্তর রাজনীতি রয়েছে। তবে যারাই এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত রাজ্য সরকার তাদের শাস্তি দিতে বদ্ধপরিকর।’

সর্বশেষ খবর