সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

জলবায়ুতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তা দিতে চুক্তি

দীর্ঘ সময় কার্বন নিঃসরণকারী ধনী দেশগুলো দেবে এ অর্থ

জলবায়ুতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তা দিতে চুক্তি

শেষ হলো জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন বা কপ২৭। এটি ২৭তম জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন। ৬ নভেম্বর থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত মিসরের শার্ম এল শেখে এ সম্মেলন হয়। সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত গরিব দেশগুলোকে তহবিল সহায়তা দিতে ধনী দেশগুলো ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিল গঠনে সম্মত হয়েছে। যদিও তার বহু গরিমসির পর। তবে জলবায়ু সংকটের জন্য দায়ী গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণে লাগাম টানতে প্রচেষ্টা বৃদ্ধির বিষয়ে এ সম্মেলনে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।

রয়টার্স জানিয়েছে, ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ বলতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চরম আবহাওয়ায় সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো ঘটনাগুলোতে ইতোমধ্যে যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে সেটি বোঝায়। প্রস্তাবিত চুক্তি অনুযায়ী, ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ নামের তহবিল থেকে বিশ্বজুড়ে ঘূর্ণিঝড়, বন্যাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা করে টিকে থাকা দেশগুলো সহায়তা পাবে। মূলত দীর্ঘ সময় ধরে কার্বন নিঃসরণকারী ধনী দেশগুলো এ তহবিলে অর্থ দেবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতির জন্য ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে অর্থ আদায়ে তিন দশক ধরে দাবি জানিয়ে আসছে দরিদ্র দেশগুলো। অবশেষে গতকাল আলোচনা শেষে তহবিল গঠনে একমত হয় দেশগুলো।

এ চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘ন্যায়বিচারের জন্য এ চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ।’ এ নিয়ে জার্মানির জলবায়ুবিষয়ক মন্ত্রী জেনিফার মরগান বলেছেন, ‘আমরা এ চুক্তিতে রাজি হয়েছি, কারণ আমরা ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর পাশে থাকতে চাই।’ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জলবায়ু কর্মীরা এবং যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ুবিষয়ক সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা ম্যাককার্থি সিএনএনকে বলেছেন, সময় শেষ হয়ে আসছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের বিপর্যয়কর বন্যার কথা উল্লেখ করেছেন তারা। ম্যাককার্থি বলেছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু বিপর্যয় থেকে নিজেদের রক্ষা করা কিংবা এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে প্রস্তুত নয়। তাদের টিকে থাকার চেষ্টায় সাহায্য করা উন্নত দেশগুলোর দায়িত্ব। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বদলে যাওয়া পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে ক্ষয়ক্ষতির ইস্যুটি এবারের মিসরের সম্মেলনে প্রধান আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়। এ নিয়ে কূটনীতিকদের লাগাতার আলোচনার পর ঐতিহাসিক সমঝোতার ঘোষণা এসেছে সম্মেলনে।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি শিল্পায়ন পূর্ব যুগের থেকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পদক্ষেপ গ্রহণে চুক্তি হয়। এ সম্মেলনের চুক্তিতে ওই লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন বর্তমান ধারায় চলতে থাকলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এ সীমার মধ্যে আটকে রাখা যাবে না। এরই মধ্যে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। তবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঠেকাতে কপ২৭-এর তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে হতাশা প্রকাশ করেছেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এবারের সম্মেলনের প্রস্তাবে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে জোর দেওয়ায় ঘাটতি রয়েছে।

এ বিষয়ে ইউরোপীয় জলবায়ু ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী লরেন্স টুবিয়ানা বলেন, ‘এবারের কপে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবসায়ীদের বড় প্রভাব ছিল। মিসর সরকার এমন একটি খসড়া প্রস্তাব সামনে এনেছে, যেটি স্পষ্টভাবে জ্বালানি তেল ও গ্যাস উৎপাদনকারী দেশগুলোকে রক্ষা করছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে আগামী বছরেও এমন হোক, তা আমরা চাই না।’ উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের কপ২৮ আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত হবে।

সর্বশেষ খবর