ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল গাজার পুরো ভূখণ্ডের ‘নিয়ন্ত্রণ নেবেন’ বলে ঘোষণা করেছেন। এ সময় গাজায় সামরিক অভিযান আরও জোরালো করা হয়, যার অংশ হিসেবে দক্ষিণের খান ইউনিস শহরে ‘অভূতপূর্ব হামলার’ আগাম ঘোষণা দিয়ে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
একই সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্র্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস সতর্ক করে বলেন, গাজায় ২০ লাখ মানুষ অনাহারে ভুগছে। তার ভাষায়, ‘টনকে টন খাদ্যসামগ্রী সীমান্তে আটকে আছে, মাত্র কয়েক মিনিট দূরে।’ এর আগে ইসরায়েল জানায়, তারা সীমিত পরিসরে গাজায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেবে। তবে এই পদক্ষেপকে মানবিক সংকট মোকাবিলায় ‘অপর্যাপ্ত’ বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন সংস্থা।
নেতানিয়াহু এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘লড়াই তীব্র হচ্ছে এবং আমরা অগ্রসর হচ্ছি। আমরা গাজা উপত্যকার পুরো অঞ্চলই নিয়ন্ত্রণে নেব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পিছু হটব না। সফল হতে চাইলে এমনভাবে এগোতে হবে যাতে আমাদের থামানো না যায়।’ ইসরায়েল চলতি মে মাসের শুরুতে গাজার পূর্ণ দখল এবং ‘জনগণকে স্থানচ্যুত করার’ উদ্দেশ্যে একটি সম্প্রসারিত সামরিক পরিকল্পনা অনুমোদন করে।
এদিকে দীর্ঘ ১০ সপ্তাহের অবরোধের পর অবশেষে গাজা উপত্যকায় সামান্য পরিমাণে খাদ্য প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গাজাজুড়ে নতুন করে বিস্তৃত স্থল অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টা পরই এ ঘোষণা আসে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সুপারিশ এবং হামাসের বিরুদ্ধে নবায়নকৃত সামরিক অভিযানকে সমর্থন করার পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অবরোধ চলাকালে কোনো খাদ্য, জ্বালানি বা ওষুধ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি, ফলে আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি পায়।
অন্যদিকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকায় আবারও ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। রবিবার এক দিনেই ইসরায়েলি আগ্রাসনে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৫১ জন ফিলিস্তিনি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি সামরিক অভিযান এখন পর্যন্ত ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। নিহতের সংখ্যা ৫৩ হাজার ছাড়িয়েছে আর আহত হয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ। প্রতিদিনই বাড়ছে এই সংখ্যা, যা পুরো বিশ্ববাসীর বিবেককে নাড়া দিচ্ছে। -আলজাজিরা
একদিকে কাতারের রাজধানী দোহায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলছে হামাস ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিদের মধ্যে, অন্যদিকে ইসরায়েল অব্যাহত রেখেছে নৃশংস হামলা। ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলের হাসপাতাল ঘিরে ফেলেছে। রোগী, চিকিৎসক এবং প্রয়োজনীয় সেবা সরঞ্জাম প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালটির কাছেই অবকাঠামোগত হামলার কথা স্বীকার করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। উত্তর গাজার আরেকটি বেসরকারি হাসপাতাল আল-আওদার পরিচালক মোহাম্মদ সালহা সতর্ক করেছেন, হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেলে সংকট আরও গভীর হবে। কারণ অক্সিজেন এবং আইসিইউ-ভিত্তিক সেবার জন্য তার প্রতিষ্ঠান ওই হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল। তবে শুধু উত্তর গাজাই নয়, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্স ও ইউরোপীয় হাসপাতালও ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, ইউরোপীয় হাসপাতালের নিচে হামাসের একটি কমান্ড সেন্টার রয়েছে-যা হামলার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।