ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে দ্বিরাষ্ট্র সমাধান দেখার ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ফ্রান্সের মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে কোনো ধরনের দ্বিচারিতা নেই। গতকাল ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সমাধানে এ ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন তিনি। কূটনীতিক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার দিকে ঝুঁকছেন- যা ইসরায়েলকে ক্ষুব্ধ করে তুলতে পারে। একই সঙ্গে ফ্রান্সের এই অবস্থান পশ্চিমা বিশ্বের বিভাজন আরও গভীর করতে পারে।
চলতি সপ্তাহে এশিয়ার কয়েকটি দেশ সফর করছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। তার মধ্যেই ইন্দোনেশিয়ায় ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সমাধানে দ্বিরাষ্ট্রের কথা বললেন ম্যাক্রোঁ। তিনি বলেন, ‘কেবল রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমেই শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং তা দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল করে তোলা সম্ভব।’ ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘সৌদি আরবের সঙ্গে আমরা শিগগিরই নিউইয়র্কে গাজা নিয়ে একটি সম্মেলনের আয়োজন করব, যাতে ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং ইসরায়েল রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও এই অঞ্চলে তাদের শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ বসবাসের অধিকারকে নতুনভাবে অগ্রাধিকার দেওয়া যায়।’ এর আগে গত ৯ এপ্রিল ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স-৫ টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই (ফিলিস্তিনকে) স্বীকৃতির দিকে যেতে হবে এবং এটি আমরা কয়েক মাসের মধ্যে করব। আমাদের লক্ষ্য হলো জুনে সৌদি আরবের সঙ্গে জাতিসংঘের কনফারেন্সে নেতৃত্ব দেওয়া। যেখানে আমরা একাধিক পক্ষের সঙ্গে ফিলিস্তিনিকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করতে পারব।’
এদিকে, অবরুদ্ধ গাজায় চলমান সামরিক অভিযানে আরও ৫০ হাজার রিজার্ভ সেনা যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে ইসরায়েলি সরকার। এর ফলে রিজার্ভ বাহিনীর সংখ্যা বেড়ে সাড়ে ৪ লাখে পৌঁছাবে। অবশ্য ইসরায়েলের ভিতর থেকেই এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠেছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে আনাদোলু।
অপরদিকে, গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৫৪ হাজার ছাড়িয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ৬০০ দিন অতিবাহিত হতে চলেছে। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আনাদোলু। রয়টার্স, এএফপি
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে বার্তাসংস্থাটি বলেছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় কমপক্ষে ৫৪ হাজার ৫৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে নতুন করে ৭৯ জনের লাশ আনা হয়েছে, আর আহত হয়েছেন আরও ১৬৩ জন। এনিয়ে মোট আহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ১২৯ জনে।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে বা রাস্তায় পড়ে আছেন, কিন্তু উদ্ধারকর্মীরা সেখানে পৌঁছাতে পারছেন না। ফলে বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ হতে পারে।
গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল ফের নতুন করে গাজায় আক্রমণ শুরু করে। ওই সময় থেকে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৯০১ জন নিহত এবং ১১ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। এ হামলা জানুয়ারিতে ঘোষিত যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি লঙ্ঘন করে চালানো হয়।
এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মহলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উঠেছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ সংক্রান্ত মামলা চলছে, যা দক্ষিণ আফ্রিকার দাখিল করা একটি অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রহণ করেছেন আদালত। এ ছাড়া ৬০০ দিনের এ যুদ্ধ গাজায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি করেছে। পরিস্থিতি এখনো সংকটাপন্ন এবং আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ ছাড়া এ সংকটের অবসান সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।