কিয়ামতের দিন হবে বিভীষিকাময়। সেদিনের ভয়াবহ অবস্থার কথা হাদিসে এসেছে। এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘হাশরের মাঠে ভয়ে প্রত্যেকে বলতে থাকবে, আমাকে বাঁচান, আমাকে বাঁচান। শুধু মুহাম্মদ (সা.) উম্মত নিয়ে (নিজেকে ছাড়া) চিন্তা করবেন। (বুখারি, হাদিস : ২৭১২)
কিয়ামতের দিন মানুষের ভালো-মন্দ সব আমল উপস্থিত করা হবে এবং তুলাদণ্ডে মাপা হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমলনামা সামনে রেখে দেওয়া হবে। তখন তুমি অপরাধীদের দেখবে, তাতে যা (লেখা) আছে, তার কারণে তারা আতঙ্কিত এবং তারা বলছে, হায়! আমাদের দুর্ভোগ! এটা কেমন কিতাব, যা আমাদের ছোট-বড় যত কর্ম আছে, সবই পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব করে রেখেছে, তারা তাদের সব কৃতকর্ম সামনে উপস্থিত পাবে।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৪৯)
হাশরের মাঠের কঠিন এই অবস্থায়ও নানা কারণে কিছু মানুষের সেদিন বিচার হবে না। তাদের আমল ওজন করা হবে না, তারা হিসাব দেওয়া ছাড়া তাদের ফায়সালা হবে। তাদের বিস্তারিত বিবরণ নিচে তুলে ধরা হলো—
নবী-রাসুল : মানবজাতির সর্বোত্তম কাফেলা হচ্ছে নবী-রাসুলরা, যাঁরা আল্লাহ তাআলার ওহির জ্ঞান ও বিধি-বিধান মানবজাতির কাছে পৌঁছানোর জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন। যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসুল এসেছিলেন। তাঁরা সবাই ছিলেন মাসুম বা নিষ্পাপ। তাই কাল কিয়ামতের ময়দানে তাঁদের আমলের কোনো হিসাব হবে না এবং ওজনের পাল্লায় মাপা হবে না; তাঁরা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবেন।
ফেরেশতা : ফেরেশতা আল্লাহ তাআলার অন্যতম বিস্ময়কর এক সৃষ্টি। তারা নিষ্পাপ ও পূত-পবিত্র। ফেরেশতারা আল্লাহ তাআলার তাসবিহ-তাহলিল ও ইবাদত-বন্দেগি ইত্যাদিতে সর্বদা লিপ্ত থাকেন, কিন্তু আল্লাহ তাআলা মৌলিকভাবে তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন জিন ও মানুষকে। এর বাইরে অন্য কোনো মাখলুককেই তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করা হয়নি; সেই হিসাবে অন্য কোনো মাখলুকের আমল পাল্লায় মাপা হবে না।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি জিন ও মানুষকে শুধু এ জন্য সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদত করবে।’(সুরা : জারিআত, আয়াত : ৫৬)
পাগল : যারা পাগল অবস্থায় বালেগ হয়েছে এবং পাগল অবস্থায়ই তাদের মৃত্যু হয়েছে, তারা যেহেতু ইসলামী শরিয়তের বিধি-বিধান ও হুকুম-আহকামের মুকাল্লাফ (ইবাদতে আদিষ্ট) নয়, তাই তাদের আমল ওজন করা হবে না, বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে। আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ধরনের লোকের ওপর থেকে কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে (পরকালের বিচার থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত), ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ না জাগ্রত হয়। পাগল ব্যক্তি যতক্ষণ না সুস্থ হয়। নাবালেগ যতক্ষণ না বালেগ হয়।’(আবু দাউদ, হাদিস : ৪৩৯৮)
নাবালক অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী শিশুসন্তান : মুসলমানদের যেসব সন্তান নাবালক অবস্থায় মারা যায়, তারাও বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে, তাদের আমলনামা ওজন করা হবে না। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুসলমানদের ছোট ছোট বাচ্চা, যারা নাবালক অবস্থায় মারা গেছে, জান্নাতে ইব্রাহিম (আ.) তাদের দায়িত্ব পালন করবেন।’(মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৮৩২৪)
বিশেষ ৭০ হাজার লোক : উম্মতে মুহাম্মদীর মধ্যে এমন ৭০ হাজার লোক থাকবে, যাদের আমল ওজন করা হবে না; বরং তারা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ প্রসঙ্গে আবু উমামা বাহেলি (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘মহান প্রতিপালক আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি আমার উম্মতের ৭০ হাজার লোককে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তাদের কোনো রকম শাস্তি হবে না। প্রতি হাজারের সঙ্গে থাকবে আরো ৭০ হাজার করে এবং আরো থাকবে আমার মহান প্রতিপালকের তিন মুঠো পরিমাণ। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২৮৬)
আরেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ তাঁর কিছু বান্দার প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ করবেন। ফলে তিনি তাদের হিসাব থেকে মুক্তি দেবেন। তিনি তাদের বলবেন, ‘নিশ্চয়ই আমি দুনিয়ায় তোমার অপরাধ আড়াল করেছিলাম, আজ আমি তোমার সেই অপরাধ ক্ষমা করে দিলাম।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৭০)
(লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলুম মাদরাসা, মধুপুর, টাঙ্গাইল)