সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রযুক্তি যেমন দিন দিন উন্নতি সাধন করছে। তেমনি মানুষের জীবন যাত্রায়ও পরিবর্তন আসছে। মানুষ এখন অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্যে ঝুঁকছে। অনলাইন থেকে কেনাকাটা করতে পছন্দ করেন এমন ক্রেতার সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। ফলে দেশে প্রতিদিন বাড়ছে ই-কমার্স ব্যবসায়ীর সংখ্যা।
‘বাংলাদেশ বিটুসি ই কমার্স মার্কেট রিপোর্ট’-এর তথ্য মতে, ২০২৬ সাল নাগাদ ই কমার্স খাত দেড় লাখ কোটি টাকার বাজারে পরিণত হবে। এতে বোঝা যাচ্ছে, ইকমার্স মার্কেটে প্রতিদিন ভোক্তা যেমন বাড়ছে, তেমনি অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা করেন এমন উদ্যোক্তাও দিন দিন বাড়ছে। ফলে ভোক্তাদের আকৃষ্ট করতে ব্যবসায়ীদের নতুন নতুন ফরমুলা অ্যাপ্লাই করতে হচ্ছে।
ইদানিং দেখা যাচ্ছে কিছু অনলাইনভিত্তিক শপ ভোক্তাদের জন্য লোভনীয় পুরস্কারের অফার দিচ্ছে। যেমন—বই অথবা পোশাক কিনে ওমরাহ পালনের সুযোগ। আতর, চশমা কিংবা অন্যান্য প্রসাধনী কিনে মটরসাইকেল উপহার পাওয়ার সুযোগ। অনেকে আবার ভোক্তাদের আকৃষ্ট করতে একাধিক পুরস্কারেরও ঘোষণা দিচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যারা তাদের পণ্য কিনবে তাদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে একজন কিংবা একাধিক জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য বিজয়ী নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করা হবে ফেসবুক লাইভে এসে।
এখন প্রশ্ন হলো, এ পদ্ধতিতে কেনাকাটা করে পুরস্কার গ্রহণ জায়েজ আছে কি? ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, এক্ষেত্রে প্রথমত দেখতে হবে, পুরস্কার ঘোষণাকারী ব্যবসায়ী তার পণ্যটি ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করছে কি না? তার পণ্যটি আসলেই মান সম্মত কি না? নায্যমূল্যে মানসম্মত পণ্য বিক্রি করা হলে বিক্রেতার পক্ষ থেকে এ ধরনের পুরস্কার প্রদান করা জায়েজ। তদ্রুপ ক্রেতার যদি ওই পণ্যটি প্রয়োজন হয়, তাহলে সে এ ধরনের শপ থেকে ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারে।
তবে পুরস্কারের কারণে যদি পণ্যের মূল্য (তার বাজার মূল্যের তুলনায়) বাড়িয়ে দেওয়া হয় এবং ক্রেতার যদি ওই পণ্যটি প্রয়োজন না হওয়া সত্ত্বেও শুধু মাত্র পুরস্কার পাওয়ার আশায় অস্বাভাবিক দামে এ ধরনের পণ্য ক্রয় করে, তবে ইসলামের দৃষ্টিতে তা জায়েজ নয়। (হেদায়া : ৩/৫৯, বুহুছ ফি কদায়া মুআসারাহ : ২/২৩২, আহসানুল ফাতাওয়া : ৬/৫১৮, ইমদাদুল ফাতাওয়া : ৩/২২, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ১০/১৭০)
প্রয়োজন ছাড়া শুধুমাত্র পুরস্কার পাওয়ার আশায় বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে এমন পণ্যকে কেনাকে ইসলামি আইনবিদরা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচনা করেছেন। (জাদিদ তিজারত আওর রোজমাররাহ মুআমালাত কি শরয়ী আহকাম : পৃষ্ঠা ১৪৪)
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ