নবীজি (সা.)-এর সাহচর্যপ্রাপ্ত সাহাবি ও আজাদকৃত গোলাম হজরত সাফিনাহ (রা.)। সাফিনাহ শব্দের শাব্দিক অর্থ জাহাজ। তিনি এই নামে প্রসিদ্ধ হওয়ার পেছনে একটি বিশেষ ঘটনা রয়েছে। ইতিহাসবিদদের মতে, মূলত তাঁর নাম ছিল মিহরান, মিফলাহ, আবস, আহমার অথবা রূমান।
এক বর্ণনা মতে, তিনি উম্মে সালামা (রা.)-এর আজাদকৃত গোলাম, রাসুল (সা.)-এর নয়। অপর বর্ণনা মতে, তিনি হজরত উম্মে সালামা (রা.)-এর গোলাম ছিলেন বটে, তবে তিনি রাসুল (সা.)-কে হাদিয়াস্বরূপ দান করেন। পরবর্তী সময়ে রাসুল (সা.) তাঁকে আজাদ করে দেন।
ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল (রহ.) বিশিষ্ট তাবেঈ সাঈদ ইবনে জুমহান (রহ.) সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, হাজ্জাজের যুগে আমি ‘বতনে নাখলা’ নামক স্থানে সাফিনাহ (রা.)-এর সাহচর্যে তিন দিন ছিলাম।
তখন আমি তাঁকে রাসুল (সা.)-এর অনেক হাদিস সম্পর্কে জিজ্ঞসা করি। পরিচয়পর্বে আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনার নাম কী? প্রতি উত্তরে তিনি বললেন, তা তো আমি বলব না। তবে রাসুল (সা.) আমার নাম রেখেছেন ‘সাফিনাহ’। এখন এটাই আমার নাম।
এরপর আমি প্রশ্ন করলাম, কেন এই নাম দিয়েছেন তিনি? বললেন, কোনো এক সফরে রাসুল (সা.) ও তাঁর সাহাবিদের পক্ষে সামানপত্র বহন করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। তখন প্রিয় নবী (সা.) আমাকে বললেন, তোমার চাদর বিছাও। আমি চাদর বিছালাম। সবাই আমার চাদরে নিজেদের সামানপত্র জমা করল। অতঃপর তা আমার ওপর (কাঁধে বা মাথায়) তুলে দিলেন।
তখন রাসুল (সা.) আমাকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘ওঠাও! তুমি একটি সাফিনাহ তথা জাহাজ।’ সাফিনাহ (রা.) বলেন, আল্লাহর কসম! সেদিন এক-দুটি উট নয়, যদি ছয়-সাতটি উটের বোঝাও আমি বহন করতাম, তবে তা আমার জন্য ভারী অনুভব হতো না। অপরাপর বর্ণনায় অন্যান্য কারণ উল্লেখ রয়েছে। (আনসাবুল আশরাফ ১/৪৮০পৃ., ক্র. ৫৭০; আস-সীরাতুন নাবাবিয়্যাহ্ ৪/৬২৩—৬২৫ পৃ.)
লেখক : মুহাদ্দিস, আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাইজদী, নোয়াখালী