হাফসা বিনতে আব্দুর রহমান (রহ.)। রাসুলুল্লাহ (সা.) কর্তৃক প্রেরিত হজের কাফেলার প্রথম আমির ও ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর (রা.)-এর নাতনি। তাঁর জ্যেষ্ঠ ছেলে আব্দুর রহমান (রা.)-এর মেয়ে। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-এর অতি প্রিয় ভাতিজি।
মায়ের দিক থেকে উম্মুল মুমিনিন উম্মে সালামা (রা.)-এর ভাগিনী। ছোটবেলা থেকে তিনি এই মহান ব্যক্তিদের মধ্যে বেড়ে ওঠেন। ফলে বংশগতভাবে অর্জিত গুণাবলির পাশাপাশি উত্তম দীক্ষায় তিনি শ্রেষ্ঠ নারী তাবেঈ হিসেবে পরিণত হন।
হাফসা বিনতে আব্দুর রহমান তার ফুফু উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-এর কোলেই লালিত-পালিত হন। আয়েশা (রা.) স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে তাকে বড় করে তোলেন। আদরের এই ভাতিজির বয়স অনুপাতে প্রতিটি প্রয়োজন পূরণে তিনি সদা তৎপর ছিলেন। হাফসা যখন বড় হন, তখন তিনিই তাকে বিবাহ দেন। বিবাহের পাত্র হিসেবে বেছে নেন তাঁরই বোন আসমা (রা.)-এর ছেলে কুরাইশদের প্রসিদ্ধ ব্যক্তিত্ব, মহাবীর মুনজির বিন জুবাইর বিন আওয়ামকে।
তার পিতা আব্দুর রহমান (রা.) বিবাহে উপস্থিত ছিল না। তিনি সফরে শেষে ফিরে এসে যখন বিবাহের সংবাদ শুনলেন তখন প্রথমে খুব রেগে গেলেন। এই বিবাহকে মানতে অস্বীকার করলেন। অতঃপর পুরো বিষয়টি তার কাছে ব্যাখ্যা করা হলে তার রাগ প্রশমিত হয় এবং তিনি সানন্দে মেনে নেন। (মুআাাত্তা ইমাম মালেক, হাদিস : ২০৪০)
এই বরকতময় বিবাহে হাফসা (রহ.) দুটি ছেলে ও একটি মেয়ের জন্ম দেন। যাদের নাম ছিল আব্দুর রহমান, ইবরাহিম, কারিনাহ। তারা সবাই নিজ মাতা-পিতার উত্তম তারবিয়াতের ছায়ায় বড় হয়ে যুগের শ্রেষ্ঠ মনীষীতে পরিণত হন।
হাফসা বিনতে আব্দুর রহমানের শৈশব কেটেছে আয়েশা (রা.)-এর তত্ত্বাবধানে, তাঁর পবিত্র সাহচর্যে। তার শিক্ষার ভিত গড়ে উঠছে উম্মাহর সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী নারীর মাদরাসায়। যার কারণে তিনি হয়ে উঠেছিলেন হাদিস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের অন্যতম। এ ছাড়া তিনি তার নিকটাত্মীয়দের থেকেও হাদিস বর্ণনা করেন। যাদের প্রত্যেকেই ছিলেন হিফজ ও ইতকানের ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত মুখ হিসেবে প্রসিদ্ধ। যেমন-তার পিতা আব্দুর রহমান বিন আবু বকর ও খালা উম্মুল মুমিনিন উম্মে সালামা (রা.)।
উল্লেখযোগ্য যে তার খালা উম্মে সালামা (রা.) ও ফুফু আয়েশা (রা.) উভয়ই সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী নারী ছিলেন। যাদের সংস্পর্শ তার হাদিসের ভাণ্ডার করেছেন আরো সমৃদ্ধ।
হাদিসবিশারদ আলেমরা তাকে ছিকাহ তথা নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তার সম্পর্কে ইমাম আজলানি (রহ.) বলেন, হাফসা বিনতে আব্দুর রহমান নির্ভরযোগ্য নারী তাবেঈ। ইবনে হিব্বান (রহ.)ও তাকে বিশ্বস্ত রাবিদের (বর্ণনাকারীদের) মধ্যে গণ্য করেছেন।
ইতিহাসের পাতায় এই মহীয়সী নারীর মৃত্যুর সময়কাল সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। তবে হাদিসশাস্ত্রে তিনি যে অবদান রেখে গেছেন তার কারণে তিনি হাদিসবিশারদ ওলামায়ে কিরাম ও মুহাদ্দিসিনদের হৃদয়ে যুগ যুগ ধরে অমর হয়ে থাকবেন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই