২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ২১:৩৮

বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মমতা বললেন, 'খেলা হবে'

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মমতা বললেন, 'খেলা হবে'

মমতা ব্যানার্জি

অমর একুশের মঞ্চ থেকে ভারতের কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপিকে নিশানা করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বিজেপিকে ওপেন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তিনি বললেন ‘...খেলা হবে।' কিন্তু খেলা শেষে তাকে যদি কারাগারেও প্রেরণ করা হয়, তবে কারাগার থেকেই বঙ্গবন্ধুর মতো ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেবেন তিনি।

রবিবার কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে এই মন্তব্য করেন মমতা ব্যানার্জি। সাম্প্রতিককালে তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতাসহ দলের সকলের মুখেই ‘জয় বাংলা’ স্লোগান শোনা যাচ্ছে। এমনকি নারায়ণগঞ্জের এমপি শামীম ওসমানের ‘খেলা হবে’ স্লোগানটিকেও এবারের নির্বাচনী প্রচারণার হাতিয়ার করেছে তৃণমূল। আর দুইটি স্লোগান নিয়েই ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলকে বিরোধী বিজেপিও কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না। তাদের অভিযোগ আসলে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান আমদানি করেই বাংলাকে `বাংলাদেশ' বানানোর চক্রান্ত করছে মমতার সরকার। আর সেই ইস্যুতেই পাল্টা বিরোধীদের নিশানা করতে ভাষা দিবসের মঞ্চকে বেছে নিলেন মমতা।
  
তিনি বলেন ‘আজ একুশ, তাই এই একুশেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছি। দেখা যাক, কার জোর কতটা বেশি। একুশে খেলা হবে। আমি থাকবো গোল রক্ষক। এই খেলাতে কারা হারে, আর কারা জেতে আমি দেখতে চাই। আর তাতে যদি আমাকে যদি জেলেও পাঠায় তবে জেল থেকেই বঙ্গবন্ধুর মতো ডাক দেবো ‘জয় বাংলা, জয় হিন্দ, জয় বন্দেমাতারাম’। আমরা হারতে শিখিনি, হারাতে আমাদের পারবে না। ভাষা দিবসে এটাই আমাদের অঙ্গীকার।’ 

মুখ্যমন্ত্রী বলেন ‘এই দিনটা আমাদের কাছে কেবলমাত্র ঐতিহাসিকই নয়, আমাদের মনের আবেগের সাথেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত।’  
  
বাংলা ভাষার প্রতি শদ্ধা জানিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান বলেন ‘আমি বাংলা ভাষাকে ভালোবাসি। তাই অন্য ভাষাকে অশ্রদ্ধা করি না। আমি বাংলা ভাষাকে ভালোবাসি বলেই অন্য ভাষাকে সম্মান দেই। এটাই বাংলা ভাষার সবচেয়ে বড় গৌরব এবং ঐতিহ্য।’ 

ভাষা দিবসের মঞ্চ থেকে পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তনে বিলম্ব নিয়েও কেন্দ্র সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে মমতা বলেন ‘আমি বাংলা ভাষাকে ভালবাসি। কিন্তু আমি বাংলাকে ‘বঙ্গাল’ বলব কেন? বাংলা আমার মা। বাংলাকে আমরা বাংলা বলবো। আমরা বাংলা রাজ্যটাকে বাংলা করতে চেয়েছিলাম, কেন? আমাকে বলা হল হিন্দিতে আগে ‘বঙ্গাল’ বলা হতো। তারপর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যখন আমাদের জানানো হলো যে সবটাই একনাম হবে, কোথাও বেঙ্গলও লেখা যাবে না। তখন আমরা বিধানসভায় নতুন নাম পাস করিয়ে ফের দিল্লিতে নাম পাঠালাম। ‘বাংলা’ নামটাই হিন্দি, ইংরেজি ও বাংলাতে পাঠানো হলো। কিন্তু কেনো জানিনা, চার বছর হয়ে গেল...বাংলা নামটা এখনও পর্যন্ত হয়ে উঠল না। যারা বাংলাকে সুড়সুড়ি দেয়, বাংলাকে নিয়ে গড়াগড়ি দেয়, বাংলাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করেন তারা কিন্তু একবারও ভেবে দেখলেন না যে, বাংলা রাজ্যাটার নামটার সাথে ‘বাংলা’ শব্দটা ওতপ্রোত ভাবে মিশে আছে।’ 
 
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নাম ‘বাংলা প্রদেশ’ করার প্রস্তাব দিয়ে মমতার অভিমত ‘আজ যদি উড়িয়া নামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ওড়িষা হতে পারে, মারাঠীদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মহারাষ্ট্র হতে পারে, তবে কেন বাংলার নামে ‘বাংলা’ হবে না? কেউ যদি বলে যে ‘বাংলাদেশ’ আছে বলেই ‘বাংলা’ নাম দেওয়া যাবে না, কারণ এতে বাংলাদেশের মতো শোনাবে। তবে আমি বলব সেটা তো একটা দেশ। আমাদেরটা তো রাজ্য। তবে তো পাকিস্তানেও একটা প্রদেশ আছে, যার নাম পাঞ্জাব। সেক্ষেত্রে ভারতে পাঞ্জাব থাকল কি করে? আমরা তো ‘বাংলাদেশ’ বলছি না ‘বাংলা’ রাজ্য বলছি। ‘বাংলা প্রদেশ’ হতে পারে, সেখানে ‘দেশ’ বলার তো কোনো প্রয়োজন নেই। যেমন অন্ধপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ বা হিমাচল প্রদেশ আছে। ওদের মধ্য, নিম্ন বা ঊর্ধ্ব থাকলে হবে কিন্তু ‘বাংলা’ হলে হবে না।’ 

তার অভিযোগ ‘বাংলা রাজ্যের প্রতি বঞ্চনা হচ্ছে, একটা বিমাতৃসুলভ আচরণ দেখানো হচ্ছে। ওদের (বিজেপি) লক্ষ্য হল যদি বাংলার কেউ বড় হয়ে যায, তাকে নিচে টেনে নামানো। এমনকি এক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, রাজা রামমোহন রায়, রামকৃষ্ণ পরমহংসকেও রেয়াত করা হয়নি। এই জিনিস কেন হবে?’

মমতার হুঁশিয়ারি ‘আমি তো এমনও শুনেছি যে, দিল্লি­র কোন কোন নেতা বলছেন বাঙালির মেরুদন্ড কিভাবে ভেঙে দিতে হয়, আমরা জানি। আমি বলবো, একটু চেষ্টা করে দেখুন! আপনাদের ধমকানি চমকানি বা জেল দেখিয়ে আমাদের আর ভয় দেখাবেন না।’ 
তিনি আরো বলেন ‘আজকে ভাষা দিবসের দিন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে একটা কথা বলছি আমার দেহে যতক্ষণ প্রাণ থাকবে, আমি কোন ধমকানি চমকানি কে ভয় পাইনি, পাবো না। আমাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া অত সহজ নয। বাংলা আমার মাতৃভাষা। এই ভাষা আমার অলংকার। এই ভাষা আমাকে শিখিয়েছে, বীরের মতো, বাঘের বাচ্চার মত লড়বি। বাঘের বাচ্চা যেন বিড়াল-ইঁদুরকে দেখে ভয় না পায়।" 

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর