২ আগস্ট, ২০২২ ১৮:৩৩

পার্থকে জুতা নিক্ষেপ নারীর, ‘রুপি আমার নয়’ দাবি অর্পিতার

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

পার্থকে জুতা নিক্ষেপ নারীর, ‘রুপি আমার নয়’ দাবি অর্পিতার

বাম থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডির হতে গ্রেফতার হওয়া পশ্চিমবঙ্গের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে লক্ষ্য করে জুতা ছুড়ে মারলেন এক নারী। মঙ্গলবার শারীরিক পরীক্ষার জন্য ইডির পূর্বাঞ্চলীয় কার্যালয় সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্স থেকে দক্ষিণ কলকাতার জোকার ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শারীরিক পরীক্ষা করিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরোনোর সময় পার্থকে লক্ষ্য করে উড়ে আসে একটি জুতা। যদিও তার আগেই পার্থকে তার গাড়িতে ঢুকিয়ে নেন ইডির তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। 

এই ঘটনার পর ওই স্থলে শুরু হয় তুমুল শোরগোল। ঘটনাস্থলে পড়ে থাকে ওই জুতা। আরেকটি জুতা পড়ে হাঁটতে থাকেন ওই নারী। 

জানা গেছে পার্থকে উদ্দেশ্য করে ছুঁড়ে মারা জুতার মালিক দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার আমতলার বাসিন্দা শুভ্রা ঘরুই। ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়া পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তার ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখার্জি দুজনেই রয়েছেন ইডির হেফাজতে। ৪৮ ঘণ্টা পর পর তাদের উভয়কেই সিজিও কমপ্লেক্স থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে জোকার হাসপাতালে। ফলে আগে থেকেই হাসপাতাল চত্বর নিরাপত্তার বলয়ে মুড়ে ফেলা হচ্ছে। পার্থ-অর্পিতাকে কেন্দ্র করে চিকিৎসক, নার্স এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যেও চরম ব্যস্ততা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর এসবের মধ্যে পরে সাধারণ রোগীদের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। সঠিক সময়ে সেবা পেতে রোগীদের বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করে থাকতে হচ্ছে। আর সেই অসন্তোষ থেকেই রোগীদের এই ধরনের আচরণ বলে মনে করা হচ্ছে। 

এ ব্যাপারে জুতা নিক্ষেপকারী ওই নারী বলেন, 'আমার রোগী অসুস্থ। আমি ওষুধ নিতে এসেছি। আমাকে ছেড়ে দিন। আমি ওনাকে জুতা মারতে এসেছি, জুতা মেরে আমি খালি পায়ে ঘরে যাচ্ছি।'

কিন্তু কেন জুতা মারলেন এই প্রশ্নের উত্তরে হঠাৎই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তিনি। উল্টো তার প্রশ্ন, 'কেন জুতা মারলাম আপনারা জানেন না? কত গরিব মানুষের রুপি নিয়ে... কোটি কোটি রুপি নিয়ে ফ্ল্যাট কিনে রেখে দিয়েছেন। আবার জিজ্ঞাসা করছেন কেন? ওকে গলায় দড়ি দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে আসা উচিত। কেন ওকে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ি চড়িয়ে, হুইল চেয়ারে করে নিয়ে আসা হচ্ছে? আমি বেশি খুশি হতাম ওই জুতা যদি ওর টাকে লাগতো।'
 
ওই নারী আরও বলেন, 'শুধু আমার নয়, অনেকেরই রাগ আছে। কত মানুষ খেতে পায় না, কত মানুষকে চাকরি দেবে বলে রুপি নিয়েছে, ফ্লাট কিনছেন, উনি ফুর্তি করেছেন।'
 
যদিও এই ঘটনাকে কোনভাবেই সমর্থন করেননি বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, 'এই ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত নয়। এভাবে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হলেও তা সমর্থনযোগ্য নয়। তবে এটা বোঝা যাচ্ছে যে এই সরকারের প্রতি মানুষের ক্ষোভ কতটা।'
 
এ ব্যাপারে তৃণমূল সাংসদ শান্ত নগর বলেন, 'তিনি যদি নির্দোষ প্রমাণিত হন, তবে পুনঃবিবেচনা করা হবে। কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে পার্থ চ্যাটার্জি এখন ইডির হেফাজতে আছে, তাই তাকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব ইডির।'

এদিকে অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে পাওয়া বিপুল সম্পত্তি তার নয় বলে আবারও দাবি করেছেন অর্পিতা। এদিন জোকার হাসপাতালে ঢোকার মুখে অর্পিতা মুখার্জি বলেন, 'এই রুপি আমার নয়। আমার অজান্তে আমার ঘরে এই রুপি ঢুকানো হয়েছে।' ফলে অর্পিতার এই বক্তব্যকে ঘিরে নতুন করে জল্পনা শুরু হলো। 

যদিও ইডি সূত্রে খবর টালিগঞ্জ এবং বেলঘরিয়ায় অর্পিতার দুটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধারকৃত প্রায় ৫০ কোটি রুপির পিছনে কি রহস্য লুকিয়ে রয়েছে, তার হদিস পেতে তিনটি ডাইরির দিকে নজর ইডির। জানা গেছে, অর্পিতার ওই ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছে তিনটি ডায়েরি, যার মধ্যে দুটির ডায়েরিতে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেনের হিসাব, রুপি বাহকদের নাম, ফোন নাম্বারসহ বিভিন্ন তথ্য নাকি ওই ডাইরিতে রয়েছে। ওই ডাইরিতে নোট করে রাখা হাতের লেখা কার সেই ব্যক্তিকে খুঁজে পেতে প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
  
ডাইরি ছাড়াও পার্থ-অর্পিতার যৌথ নামে দুটি কোম্পানির হদিস মিলেছে। ওই দুটি সংস্থারই ডিরেক্টর হিসেবে নাম রয়েছে পার্থ এবং অর্পিতার। ২০১১-১২ সালে রেজিস্ট্রেশন হয় ওই কোম্পানি দুটির। 

এদিকে মঙ্গলবার নতুন করে একাধিক ঠিকানায় অভিযান চালায় ইডির কর্মকর্তারা। এর মধ্যে বরানগরের টবিন রোডে অর্পিতার নেইল আর্ট পার্লার, লেক ভিউ রোডের নেইল আর্ট পার্লার ছাড়াও রয়েছে মাদুরদহে দুইটি আবাসন, বৈষ্ণবঘাটা, পন্ডিতরা রোড, কেন্দুয়া মেইন রোডসহ বেশ কয়েকটি জায়গা।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর