রবিবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা

হুমকিতে বনানী লেক

হুমকিতে বনানী লেক

গুলশান লেকের বনানী অংশ কোনোভাবেই রক্ষা করা যাচ্ছে না। সেখানে নানা রঙের নকশা আঁকাআঁকি, পরিকল্পনা গ্রহণ, বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ বরাদ্দ সত্ত্বেও দখল-দূষণে নয়নাভিরাম লেকটি হারিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি বাড্ডা অংশে সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে রাজউক গুলশান লেকটি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। কিন্তু বনানী অংশে লেকের দুই পাড় অরক্ষিত থাকায় প্রতিনিয়ত দখল হতে চলেছে। দখলদারদের উচ্ছেদ করে লেকের দুই পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বার বার উচ্ছেদ অভিযান চললেও ওয়াকওয়ে আর নির্মাণ হয় না। আর এ কারণেই রক্ষা হয় না বনানীর লেক।
ওয়াকওয়ের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণ না থাকার সুযোগে বনানী লেকে রাতের আঁধারে ময়লা-আবর্জনা, ইট-সিমেন্টের সুরকি ফেলে ভরাট করে দখলবাজরা। ভরাটকৃত জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হয় বস্তিসহ নানা স্থাপনা। অভিজাত বাসাবাড়ির বারান্দা নির্মিত হচ্ছে লেকের জায়গায়। বানানো হচ্ছে ক্লাব, গ্যারেজ, ওয়ার্কশপ। বাধা দেওয়ার কেউ নেই। টহল পুলিশের হাতে কিছু দিয়েই ইটের খোয়া, বালুর বস্তা, ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করা হচ্ছে লেক। পরিবেশবাদী সংগঠন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ঢাকার অন্য লেক ও জলাশয়গুলোর মতো বনানী লেক দখল ও ভরাট হতে হতে একবারে নিঃশেষ প্রায়। অবাধ দখল, খাল-লেক রক্ষায় সরকারের উদাসীনতার কারণে দর্শনীয় এ লেকের অস্তিত্ব আজ বিলীন প্রায়। তিনি বলেন, বনানী লেকটি ঢাকার মধ্যভাগে অবস্থিত হওয়ায় পরিবেশগতভাবে এর গুরুত্ব রয়েছে। যেখানে একসময় স্বচ্ছ পানি থাকত এখন সেখানে সাইনবোর্ড আর ইটের ব্যারিকেড। বিভিন্ন অজুহাতে লেকের পাড়ে ইট-সুরকির স্তূপ করে ভরাট করা হচ্ছে। ভরাট স্থানে ব্যক্তিমালিকানার সম্পত্তি দেখিয়ে আবাসিক এলাকা ও বড় বড় বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে। লেক উদ্ধারের সরকারি ঘোষণা শুধু ঘোষণা হয়ে থাকছে, পরিকল্পনার কোনো কিছুই বাস্তবায়ন হচ্ছে না। পশ্চিম পাশে স্থানে স্থানে লেক পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ হলেও ময়লা-আবর্জনার গন্ধে সেখানে পা ফেলা দুষ্কর। লেক দখলদারদের শাস্তি হচ্ছে না বলে দিন দিন দখলদারিত্বের বিস্তৃতি ঘটছে। মাঝে-মধ্যে উদ্ধারকাজ চললেও বন্ধ করা যাচ্ছে না দখল ও দূষণের তাণ্ডব। উচ্চ আদালত লেক দখল ও দূষণমুক্ত রাখতে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। গুলশান লেকের অস্তিত্ব রক্ষায় রাজউক প্রকল্প নিলেও তার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কিনা সংশয় রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় গুলশান-বাড্ডা শুটিং ক্লাব থেকে মরিয়ম টাওয়ার-২ পর্যন্ত ৪০ ফুট চওড়া সড়ক বা ড্রাইভওয়ে এবং লেকের উভয় পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণের কথা থাকলেও সড়কের বাস্তবায়ন বিঘ্নিত হচ্ছে দখলদারদের দৌরাত্ম্যে। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালীরা দাবি করছেন, লেকের পাড়ে এমনকি ভিতরে তাদের জমি রয়েছে। এ জমি ভরাট করে তারা সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করছেন। পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষিত গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক এবং সংলগ্ন বনানী ও মহাখালীর বিভিন্ন উৎস থেকে লেকের পানি দূষণ ঘটছে, লেক ভরাট হচ্ছে। এই লেক রক্ষার ব্যাপারে হাইকোর্ট ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই একটি নির্দেশনা দেন। এতে লেকের সীমানা জরিপসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের জরুরি উদ্যোগ নেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়। তদানীন্তন ডিআইটি (বর্তমান রাজউক) ১৯৬১ সালে গুলশান মডেল টাউন প্রকল্প ও বনানী-বারিধারা প্রকল্প গ্রহণ করে। উভয় প্রকল্পেই লেক রয়েছে। এর একটি হচ্ছে বনানী মডেল টাউন ও গুলশান মডেল টাউনের মধ্যে, অপরটি গুলশান মডেল টাউন ও বারিধারা মডেল টাউনের মধ্যে। লেক দুটির আয়তন ২০০ একর। এর ৬০ শতাংশ হচ্ছে গুলশান-বারিধারা লেক এবং ৪০ শতাংশ হচ্ছে গুলশান-বনানী লেক। বিভিন্ন সময় সরকারি ও বেসরকারিভাবে দখল ও ভরাটের ফলে লেক দুটির আয়তন অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে। পবার এক পর্যবেক্ষণ সূত্রে জানা যায়, বনানী, গুলশান, বারিধারা, বাড্ডা, কালাচাঁদপুরে গৃহস্থালি বর্জ্য, বিল্ডিং মেরামত ও পুনঃ সংস্কার থেকে সৃষ্ট বর্জ্য লেকে ফেলে ভরাট করা হচ্ছে এবং সেখানে গাছ লাগিয়ে, নার্সারি গড়ে, চায়ের দোকান দিয়ে, বাঁশের ঘর ও আধা-পাকা ঘর তুলে দখল করা হচ্ছে। কড়াইল বস্তি এলাকায় অনেক কাঁচা শৌচাগার রয়েছে ও বস্তি এলাকার পয়ঃবর্জ্য সরাসরি লেকে ফেলা হচ্ছে। এসব এলাকার বাড়ির মালিকরা তাদের পয়ঃবর্জ্য সরাসরি লেকে ফেলছেন। শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতাল ও ক্লিনিকের অপরিশোধিত বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর