শিরোনাম
শনিবার, ১১ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
রমনা বটমূলে বোমা

শেষ হচ্ছে মুফতি হান্নানের আপিল শুনানি

আহমেদ আল আমীন

প্রায় দেড় যুগ আগে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় করা মামলায় হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ আসামিদের আপিল, জেল আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি এখন শেষ পর্যায়ে। সংশ্লিষ্টদের মতে, মামলাটির কার্যক্রম এ মাসের মধ্যেই শেষ হতে পারে। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের সাজা বহালের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চে এ মামলার ওপর শুনানি হচ্ছে। আগামী ১৪ মার্চ পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে আরেকটি মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মুফতি হান্নানের রিভিউ আবেদন আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর সিলেটে হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় আসামি মুফতি হান্নানসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে আপিল বিভাগ। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের দেওয়া ওই রায়ের বিরুদ্ধে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রিভিউ আবেদন করেন মুফতি হান্নান। রিভিউ আবেদনে দণ্ড বাতিল করে তার খালাস চাওয়া হয়েছে। গত ৮ জানুয়ারি রমনা বটমূলে বোমা হামলার মামলায় আপিলের শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে ৬১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মুফতি হান্নানসহ তিন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে উপস্থাপন করেছে। এ মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা হলেন মোহাম্মদ আলী, সুজিত চ্যাটার্জি,  মো. আজিজুল হক হাওলাদার ও রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী এস এম শফিকুল ইসলাম। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, রমনা বটমূলে হামলার ঘটনায় করা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিলের শুনানি এক সঙ্গে হচ্ছে। আমরা আসামিদের দণ্ড বহালের পক্ষে হাই কোর্টে আবেদন জানাব। এ মাসের মধ্যেই মামলাটির বিচার কার্যক্রম শেষ হবে বলে আমরা আশা করছি। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে এ মামলায় রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেলের চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমেই মামলাটি শেষ হবে। ২০০১ সালের পয়লা বৈশাখে ঢাকার রমনা বটমূলে ছায়ানট আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালিয়ে ১০ জনকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় আহত হন অনেকে। বোমা হামলা চালিয়ে হত্যার ঘটনায় নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন সার্জেন্ট অমল চন্দ্র চন্দ রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করেন। হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নানসহ ১৪ জঙ্গিকে হত্যা মামলায় আসামি করা হয়। হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় বিচার শেষে ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন রায় দেন। রায়ে মুফতি হান্নানসহ আটজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন সাজা দেয় আদালত। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া অন্য আসামিরা হলেন—আকবর হোসেন, আরিফ হাসান সুমন, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মো. তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, আবদুল হাই ও শফিকুর রহমান। এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল, সাব্বির, শেখ ফরিদ, আবদুর রউফ, ইয়াহিয়া ও আবু তাহের। জানা গেছে, পেপারবুকের তথ্য অনুসারে ১৪ আসামির মধ্যে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া পাঁচ আসামি এখনো পলাতক। তারা হলেন তাজউদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম, আবু বকর, শফিকুর ও আবদুল হাই। আসামিদের ডেথ রেফারেন্সের সঙ্গে সাতজনের করা ছয়টি আপিলের শুনানি হচ্ছে। এর মধ্যে মুফতি হান্নান, আকবর হোসেন, সুমন, শাহদাত উল্লাহ ও আবু তাহের পৃথক আপিল করেছেন। তবে শেখ ফরিদ ও মো. ইয়াহিয়া দুজনে একটি আপিল করেছেন। সঙ্গে রয়েছে মুফতি হান্নান, আকবর হোসেন ও সুমনের জেল আপিল। বিচারিক আদালতে হত্যা মামলায় রায় হলেও বিস্ফোরক আইনে হওয়া মামলাটি এখনো বিচারাধীন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর