শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
পুলিশের হাতে ভিডিও ফুটেজ

আরিফার খুনি সাবেক স্বামী রবিন, ছুরি উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর সেন্ট্রাল রোডে নারী ব্যাংক কর্মকর্তা আরিফুন্নেছা আরিফাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে তার সাবেক স্বামী ফখরুল ইসলাম রবিন। জব্দকৃত ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশ এমনটাই ধারণা করছে। ঘটনার পর রবিন গা ঢাকা দিলেও তারা হত্যায় ব্যবহূত ছুরি উদ্ধার করেছে।

গত বৃহস্পতিবার সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য সেন্ট্রাল রোডের ১৩ ওয়েস্ট অ্যান্ড স্ট্রিটের বাসা থেকে বের হওয়ার সময় যমুনা ব্যাংকের কর্মকর্তা আরিফাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাতেই রবিনকে আসামি করে নিহতের ভাই আবদুল্লাহ আল আমিন বুলবুল বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় একটি মামলা করেন। নিহতের পরিবার বলছে, সাবেক স্বামী রবিন ফোনে অনুনয়ের কারণে তাকে সেন্ট্রাল রোডের বাসায় আসার অনুমতি দেন আরিফা। নিজেই নেমে গিয়ে রবিনকে বাসায় নিয়ে আসেন। রবিনের সঙ্গে ছিল বেশ কয়েকটি ব্যাগভর্তি জিনিসপত্র। তার দুটি হাতে নিয়ে ফেরেন আরিফাও। কিন্তু বাসার ভিতরে ঢোকেনি রবিন। বারান্দা থেকে সিঁড়ি ঘরে পৌঁছার মাত্র তিন মিনিট পরেই পাওয়া যায় আরিফার আর্তচিৎকার। তখন দৌড়ে বের হয়ে যান রবিন। কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসির আরাফাত খান জানান, ওই বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৪৪ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডে আরিফা ফোনে কথা বলতে বলতে বাইরে বের হন। প্রায় তিন মিনিট পর সকাল ৮টা ৪৭ মিনিটে সাবেক স্বামী রবিনসহ ভিতরে ঢোকেন তিনি। এ সময় দু’জনের হাতে ছিল ব্যাগ। মাত্র তিন মিনিট পরেই ৮টা ৫১ মিনিট ২৮ সেকেন্ডে দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখা যায় রবিনকে। পুলিশের ধারণা, সাবেক স্বামী রবিনই আরিফাকে খুন করে পালিয়ে যান। ঘটনার পর থেকে রবিন পলাতক রয়েছেন। হত্যায় ব্যবহূত ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। রবিনকে ধরতে অভিযান চলছে। নিহতের ভাই বুলবুল বলেন, ‘তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে ছোট ছিল আরিফা। চার বছর আগে রবিনকে বিয়ে করেন আরিফা। ছয় মাস আগে মাদকাসক্ত রবিনকে ডিভোর্স দেন। এরপর থেকে আরিফা মায়ের সঙ্গে সেন্ট্রাল রোডের বাসায় থাকতেন। কিন্তু রবিন ডিভোর্সের পর থেকেই আরিফাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল।’ তিনি জানান, এ ব্যাপারে কলাবাগান থানায় জিডিও করা হয়। তখন আরিফা পুলিশকে জানান, নিজের জীবন নিয়ে তিনি শঙ্কিত। তার সাবেক স্বামী রবিন তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে গতকাল আরিফার ভাই আবদুল আল আমিন বলেন, ‘টাকা পরিশোধের নামে বুধবার আরিফার অফিসে গিয়ে রবিন আরিফাকে বলে, তোর পাওনা টাকাগুলো নে। তোর কাছে আমি আর ঋণি থাকব না। আমার বাসায় তোর যে জিনিস পত্রগুলো আছে ওগুলোও ফেরত দিব। কবে নিবি বল? রবিনের অনেক অনুনয় বিনয়ের পরে আরিফা বৃহস্পতিবার সকালে তাকে আসতে বলে। পরে বৃহস্পতিবার সকালে রবিন আরিফার জিনিসপত্র নিয়ে বাসার সামনে এলে আরিফা সেগুলো আনতে নিচে যায়। এরপর রবিনের কাছ থেকে ব্যাগ নিয়ে দুজনে ওপরে আসার পথে পরিকল্পিতভাবে আরিফাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায় রবিন।’ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সমির চন্দ্র সূত্রধর জানান, সেন্টাল রোডের যে বাসায় আরিফা থাকতেন, তার পাশের একটি বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। রবিনই যে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন, সে বিষয়ে ভিডিও দেখে পুলিশ ‘অনেকটাই নিশ্চিত’ হয়েছে। এদিকে গতকাল সকালে আরিফাকে তার গ্রামের বাড়ি জামালপুর সদরের হাজরাবাড়িতে দাফন করা হয়েছে বলে নিহতের এক স্বজন জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর