শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সিলেটের চা শিল্পে নতুন সম্ভাবনা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটের চা শিল্পে নতুন সম্ভাবনা

চায়ের দেশ বলে খ্যাত সিলেট। দেশের ১৬৪টি চা বাগানের ১৩৫টিই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বৃহত্তর সিলেটজুড়ে। অথচ আশ্চর্যজনক হলেও সত্য— সিলেটের দুইশ বছরের চা শিল্পের ইতিহাস থাকলেও এখানে গড়ে ওঠেনি কোনো চা নিলাম কেন্দ্র। বাধ্য হয়ে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সিলেটের চা বাগান সংশ্লিষ্টরা উত্পাদিত চা নিলামের জন্য বয়ে নিয়ে যান চট্টগ্রামে। এরকম অবস্থায় চা বাগানের মালিক, ব্যবসায়ী, শ্রমিক সবার দীর্ঘদিনের দাবি ছিল— সিলেটে চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনও হয়েছে। অবশেষে দাবি পূরণ হচ্ছে তাদের। সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্যদিয়ে সিলেটে চা শিল্পে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে। ব্রিটিশ হার্ডসনের হাত ধরে ১৮৪৯ সালে উপমহাদেশের প্রথম চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয় সিলেটের মালনীছড়ায়। এরপর একে একে গড়ে ওঠে খাদিমনগর চা বাগান, আহমদ টি এস্টেট, লাক্কাতুড়া চা বাগান, আলী বাহার চা বাগান প্রভৃতি। বর্তমানে সিলেট বিভাগের সিলেট জেলায় ২০টি, মৌলভীবাজারে ৯৩টি এবং হবিগঞ্জ জেলায় ২২টি চা বাগান রয়েছে। দেশের সিংহভাগ চায়ের জোগান সিলেট থেকেই হয়ে থাকে। এ ছাড়া প্রতি বছর চা রপ্তানি করে বাংলাদেশ হাজার কোটি টাকা আয় করে থাকে। সিলেটের এত সংখ্যক চা বাগান থাকা সত্ত্বেও এখানে চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপন না করে চট্টগ্রামে করা হয়। অথচ চট্টগ্রামে চা বাগান আছে মাত্র ২৩টি। তাই সিলেট বিভাগের কোথাও চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের দাবি ছিল সংশ্লিষ্টদের। সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, চা শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন, এমনকি রাজনৈতিক নেতারাও বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে এখানে চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। সভা, সেমিনার, মানববন্ধন, স্মারকলিপি পেশসহ বিভিন্নভাবে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন বৃহত্তর সিলেটের চা বাগান সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু তাদের সেই প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি। উপায়ন্ত না দেখে তাই সিলেটের চা সংশ্লিষ্টরা নিলামের জন্য চা নিয়ে যান চট্টগ্রামে। চা বাগান সংশ্লিষ্টদের দাবি, এতে বছরে ১০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হয়। দীর্ঘ পথযাত্রায় চায়ের মানও পুরোপুরি অক্ষুণ্ন থাকে না। এ ছাড়া সময় ও শ্রমের বিষয়টিও এখানে জড়িত। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন চা ব্যবসায়ীরা। ফলে সিলেটে চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সরকারের দিকে অনেকটা চাতক পাখির মতো চেয়ে ছিলেন চা বাগান মালিক, ব্যবসায়ীরা। তাদের সেই অপেক্ষার অবসান হচ্ছে অবশেষে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে দেশের দ্বিতীয় চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ মাসেই কেন্দ্রটি চালুর কথা। এ লক্ষ্যে গত ১২ সেপ্টেম্বর ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন গঠন সংক্রান্ত বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের কনফারেন্স কক্ষে উচ্চপর্যায়ের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুর রউফের সভাপতিত্বে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, চা সংসদ, চা বোর্ড এবং টি প্ল্যান্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় উপস্থিত থাকা টি প্ল্যান্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সদস্য সচিব জহর তরফদার গণমাধ্যমকে বলেন, দেশের দ্বিতীয় চা নিলাম কেন্দ্র শ্রীমঙ্গলে চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। অবকাঠামোগত সব সুযোগ-সুবিধাই শ্রীমঙ্গলে রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সভায় ব্রোকার্স ট্রেড অর্গানাইজেশনের টিও লাইসেন্সের অনুমোদন সাপেক্ষে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম কেন্দ্র চালুর নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ায় চা বাগান মালিক, চা ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে সিলেটের চা ব্যবসায়ী ‘পাহাড়ি টি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মুনীর পাশা বলেন, শ্রীমঙ্গলে নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্তে সিলেটের চা শিল্পে নতুন সম্ভাবনার পালক যুক্ত হচ্ছে। নিলাম কেন্দ্র চালু হয়ে গেলে একদিকে পরিবহন ব্যয়, সময় ও শ্রম বাঁচবে, অন্যদিকে চায়ের গুণগত মানও পুরোপুরি অক্ষুণ্ন থাকবে।

সর্বশেষ খবর