সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ধর্ষিতার উদ্ধারকারীদেরই আটক করল পুলিশ

সাভার প্রতিনিধি

আশুলিয়ায় গণধর্ষণের পর সড়কের ওপর ফেলে যাওয়া এক কিশোরী পোশাকশ্রমিককে উদ্ধারের পর হাসপাতালে ভর্তি করেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক। এমনকি এ ঘটনায় কথিত প্রেমিক ও ধর্ষণকারী রাসেলকে আটক করে পুলিশে সোপর্দও করেন তারা। অথচ ঘটনার প্রায় এক মাস পর আশুলিয়া থানা পুলিশ উদ্ধারকারী দুই যুবককে ডেকে এনে গ্রেফতার দেখিয়ে গতকাল আদালতে পাঠিয়েছে। হতভাগা দুই যুবকের নাম ইমরান (২৬) ও সোহাগ (১৭)। তারা জামগড়া এলাকায় ভাড়াবাড়িতে থেকে স্থানীয় পোশাক কারখানায় কাজ করেন। মামলার বাদী ও ধর্ষিতা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বখাটে রাসেল ও তার বন্ধুরা তাকে কৌশলে ডেকে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এরপর তাকে তারা অচেতন অবস্থায় স্থানীয় একটি সড়কে ফেলে রেখে যায়। পরে স্থানীয় ইমরান ও সোহাগসহ কয়েকজন যুবক তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। ধর্ষিতা নারী পোশাকশ্রমিক আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, প্রতিবেশী ইমরান ও সোহাগসহ কয়েকজন যুবক তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে না ভর্তি করলে হয়তো তাকে অচেতন অবস্থায় সেখানেই মৃত্যুবরণ করতে হতো। এমনকি পরিবার তার সন্ধান পেত কি না এ নিয়েও তিনি সন্দেহ পোষণ করেন। তবে ওই দুই যুবককে আটক করার পর তিনি ও তার মা থানায় এসে বিষয়টি আশুলিয়া থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি অপারেশন) ওবায়দুর রহমানকে বললেও তাদের ছাড়েনি পুলিশ। তবে কথিত প্রেমিক ও ধর্ষককে আটকের পর পুলিশে সোপর্দ করে দেওয়ার কারণে সে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে এই দুজনকে ফাঁসিয়েছে বলে অভিযোগ করে ধর্ষিতার পরিবার। এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি ইন্টিলিজেন্স) ওবায়দুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মামলার প্রধান আসামি ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে এই দুই যুবকও এ ঘটনায় জড়িত বলে প্রতীয়মান হয়। তাই ওই দুই যুবককে আটক করা হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ধর্ষিতার পরিবার এ ঘটনায় এ দুজন জড়িত নয় দাবি করলেও পুলিশের এখানে কিছুই করার নেই। এদিকে আটক যুবক ইমরানের মা লাল বানু ও সোহাগের মা রেখা বেগম অভিযোগ করে বলেন, তাদের ছেলেরা নির্দোষ। ধর্ষণের পর অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ইমরান ও সোহাগ ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। দুই যুবকের পরিবার অভিযোগ করে বলে, পুলিশ বিষয়টি তদন্ত না করেই তাদের সন্তানদের বিনা অপরাধে আটক করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। এ ছাড়া ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকলে ওই দুই যুবক পালিয়ে বেড়াতেন। অথচ পুলিশ তাদের ডেকে এনে আটক করে বলেও তারা অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, আশুলিয়ায় নর্থ হেয়ার বিডি কোম্পানি লি. কারখানার ওই নারী কর্মীকে কৌশলে তার কথিত প্রেমিক রাসেল মিয়া ১২ জানুয়ারি বিকালে জিরানী এলাকায় নিয়ে যায়। এরপর কয়েকজন মিলে পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করে সড়কের ওপর ফেলে রেখে যায়। পরে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের জিরানী এলাকায় অচেতন অবস্থায় দেখতে পেয়ে স্থানীয় কয়েকজন যুবক থানায় খবর দেন। এরপর ওই নারীশ্রমিকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ধর্ষক রাসেলকে আটক করে। এ ঘটনার পরদিন ধর্ষিতার মা বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় মামলা করেন।

সর্বশেষ খবর