শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

সরছে গাবতলী বাস টার্মিনাল

মেট্রোরেলের ভূগর্ভস্থ স্টেশন নির্মাণ, বৈঠক রবিবার

মোস্তফা কাজল

সরছে গাবতলী বাস টার্মিনাল

স্থানান্তরিত হচ্ছে রাজধানী ঢাকার সর্ববৃহৎ নগর ও আন্তজেলা বাস টার্মিনাল গাবতলী। এক বছরের মধ্যে সরিয়ে নেওয়া হবে এ বাস টার্মিনাল। ইতিমধ্যে সরিয়ে নেওয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। এ টার্মিনালের উত্তরাংশে মেট্রোরেলের জন্য নির্মাণ করা হবে ভূগর্ভস্থ স্টেশন ভবন। এসব কারণে টার্মিনাল-সংলগ্ন সিটি পল্লী বস্তির পাঁচ একর জমি অথবা আমিনবাজারের ট্রাক টার্মিনালে স্থানান্তর করা হতে পারে এ বাস টার্মিনাল। এমন ধরনের একটি প্রস্তাব সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে গতকাল পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি পাঠিয়েছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমান সরকার ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে কাজ করছে। এ ছাড়া উন্নত বিশ্বের নিরাপদ ও আরামদায়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করতে মেট্রোরেলের মতো প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সুবিধার্থে সাময়িকভাবে সরিয়ে নেওয়া হতে পারে গাবতলী বাস টার্মিনাল। জানা গেছে, মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন-৫-এর অন্তর্ভুক্ত এ রুটের সম্ভাব্য অ্যালাইনমেন্ট, স্টেশন ও ভূগর্ভস্থ লাইন নির্মাণের সম্ভাব্যতা সম্পর্কিত বিস্তারিত চূড়ান্ত প্রতিবেদন মে মাসের মধ্যে শেষ হবে। এরপর নকশা প্রণয়ন ও অর্থায়ন নিশ্চিতের পর শুরু হবে নির্মাণকাজ। ২০২৫ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। আগামী রবিবার এ বিষয়ে ডিটিসিএ ভবনে প্রকল্পের অগ্রগতি বৈঠক ডাকা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (আরএসটিপি) প্রস্তাবিত মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (মেট্রোরেল) বা এমআরটি লাইন-৫-এর জন্য গাবতলী বাস টার্মিনালের উত্তরাংশে ভূগর্ভস্থ স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এটি নির্মিত হবে ওপেন কাট পদ্ধতিতে। পরবর্তী সময়ে টার্মিনালের দক্ষিণাংশেও ভূগর্ভস্থ স্টেশনের সংস্থান রাখতে হবে। বলিয়ারপুর-আমিনবাজার থেকে গাবতলী হয়ে মিরপুর ১০ পর্যন্ত যাবে এমআরটি লাইন-৫। সেখান থেকে বনানী-গুলশান হয়ে ভাটারা পর্যন্ত যাবে। এর মধ্যে হেমায়েতপুর থেকে আমিনবাজার ও নতুনবাজার থেকে ভাটারা পর্যন্ত লাইনটি যাবে উড়ালপথে (এলিভেটেড)। মাঝে আমিনবাজার থেকে নতুনবাজার পর্যন্ত যাবে আন্ডারগ্রাউন্ডে। সব মিলিয়ে লাইনটির দৈর্ঘ্য হবে ১৯ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এমআরটি লাইন-৫-এর বিস্তারিত সমীক্ষা সম্পর্কিত চূড়ান্ত খসড়া প্রতিবেদনে গাবতলীতে ভূগর্ভস্থ স্টেশন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। স্টেশনটি পড়েছে টার্মিনালের উত্তরাংশে। গাবতলী দিয়ে এমআরটি-৫ ছাড়াও আরেকটি লাইন যাবে। আশুলিয়া-সাভার-গাবতলী থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ লাইনটি এমআরটি-২ নামে পরিচিত হবে। এটির আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন হবে গাবতলী বাস টার্মিনালের দক্ষিণ পাশে। এ জন্য দক্ষিণ পাশেও পরবর্তী সময়ে ভূগর্ভস্থ স্টেশনটি সম্প্রসারণের সংস্থান রাখতে হবে। রাজধানীর অন্যতম বড় বাস টার্মিনাল গাবতলী। এখান থেকে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার দূরপাল্লার বাস চলাচল করে। সাড়ে পাঁচ একরের এ টার্মিনালের উত্তরাংশে মেট্রোরেলের জন্য ভূগর্ভস্থ স্টেশন নির্মাণের সময় ব্যস্ততম টার্মিনালটি থেকে বাস চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে। এ জন্য বাস টার্মিনালটি সাময়িক সময়ের জন্য অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার চিন্তা করছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। এ বিষয়ে ডিটিসিএর একজন কর্মকর্তা জানান, ভূগর্ভস্থ স্টেশন নির্মাণের কারণে সাময়িক সময়ের জন্য গাবতলী বাস টার্মিনাল অন্য স্থানে সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন হবে। এ জন্য আমরা টার্মিনালের ৫০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে স্থান নির্বাচনের চেষ্টা করছি। দু-একটি জায়গা আমাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। সবকিছু চূড়ান্ত করার পর টার্মিনালটি নির্বাচিত জায়গায় সাময়িক সময়ের জন্য সরিয়ে দেওয়া হবে। ওই কর্মকর্তা বলেন, কাজ শেষ হলে টার্মিনালের অপারেশন আবার আগের জায়গা থেকেই চলবে। জানা গেছে, বলিয়ারপুর-আমিনবাজার থেকে নতুনবাজার-ভাটারা পর্যন্ত এমআরটি লাইন ২০২৫ সালের মধ্যে চালু হতে পারে। লাইনটি নির্মাণে ব্যয় হতে পারে ১৭ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। এ অনুযায়ী প্রাথমিক কাজগুলো এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে চলছে রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৬-এর নির্মাণকাজ। আটটি প্যাকেজে বাস্তবায়ন হচ্ছে লাইনটি। এর মধ্যে প্যাকেজ-১-এ ডিপো উন্নয়নের কাজ করছে টোক্যু কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। এখন পর্যন্ত ৮৪ শতাংশ কাজ শেষ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্যাকেজ-২-এর মাধ্যমে চলছে ডিপো এলাকার পূর্ত কাজ। এ প্রকল্পের অগ্রগতি ১০ শতাংশ। প্যাকেজ ৩ ও ৪-এ চলছে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত উড়ালপথ (ভায়াডাক্ট) ও স্টেশন নির্মাণের কাজ। ১৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এমআরটি লাইন-৬ বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা জাইকা ও ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। আরএসটিপির প্রস্তাব অনুযায়ী, ঢাকায় মোট পাঁচটি মেট্রোরেল লাইন হবে। এগুলো হলো—উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এমআরটি-৬, কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এমআরটি-১, বলিয়ারপুর-আমিনবাজার থেকে ভাটারা পর্যন্ত এমআরটি-৫, আশুলিয়া থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এমআরটি-২ ও কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ রুটে এমআরটি-৪। ২০২৫ সালের মধ্যে এসব লাইন বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে বর্তমান সরকারের।

সর্বশেষ খবর