সুন্দরী তরুণী। বাক্যবিলাসেও সাবলীল। গায়ে দামি পোশাক। হাতেও দামি মোবাইল। হাঁটা-চলায় যেন এক পরী। তার কথার জাদুতে মুগ্ধ হন সবাই। প্রেমের ফাঁদ পেতে ব্যবসায়ী বা শিল্পপতিকে তার বাসায় ডেকে নেন। এরপর এ ‘পরীই’ কখনো গোপন ক্যামেরায় আবার কখনো প্রকাশ্যেই অশ্লীল ছবি তুলে ফাঁসিয়ে দেন। বিকাশে আদায় করে নেন লাখ টাকা। দীর্ঘদিন থেকে এভাবে প্রতারণা করে চলেছে নারী প্রতারকদের একটি চক্র। চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার বেপারিপাড়া এলাকা থেকে রওশন আক্তার নামে এ চক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতার রওশন হালিশহর এলাকার একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম হাউসে ভুয়া তথ্য দিয়ে চাকরির আবেদন করেন। এরপর নানা কৌশলে ফার্ম হাউসটির একজন কর্মকর্তার মোবাইল ফোন নম্বর জোগাড় করেন। ব্ল্যাকমেইল করতে মোবাইল ফোনের পাশাপাশি ফেসবুকও বেছে নেন রওশন। ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারে নিজের সুন্দর ছবি দিয়ে এমডির কাছে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান রওশন। কথা চলতে থাকে। ভাব-সাবও জমতে থাকে। চলে প্রেমের অভিনয়ও। মা-বাবার সঙ্গে দেখা করার কথা বলে কর্মকর্তাকে বেপারিপাড়ার বাসায় নিয়ে যান রওশন। গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি প্রার্থী, তাই রওশনের ভালোমন্দ জেনে নিয়োগ দিতে হবে। এ চিন্তা থেকে রওশনের পাতা ফাঁদে পা দেন কর্মকর্তা। রওশনের বাসায় ঢোকার কিছুক্ষণ পর তার ঘনিষ্ঠ হন। গোপন ক্যামেরায় চলে ভিডিও ধারণ। এরপর তার তিন সহযোগী দরজা খুলে ঘরে ঢুকে পড়েন। কর্মকর্তাকে মারধর করে মোবাইল, টাকা ছিনিয়ে নেন তারা। এরপর কর্মকর্তার পাশে বসিয়ে রওশনের নগ্ন ছবি-ভিডিও করেন সহযোগী রনি। এরপর কর্মকর্তার কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেন। বাধ্য হয়ে বিকাশের মাধ্যমে এক লাখ টাকা তাদের এনে দেন কর্মকর্তা। আরও এক লাখ না দিলে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে কর্মকর্তাকে ছেড়ে দেন তারা। প্রতারণার শিকার ব্যক্তির অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করে ডিবি। পরে বেপারিপাড়ার একটি বাসা থেকে প্রতারক রওশন আক্তারকে গ্রেফতার করে। রাজধানী ঢাকার উত্তরায় এমন একটি মজমা বসিয়ে ছিল পুয়াদ নামে এক ব্যক্তি। প্রেমের ফাঁদে ফেলে সুন্দরী যুবতীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন ছিল ফুয়াদের নেশা। শুধু নেশা বললে ভুল হবে, এটা ছিল তার পেশাও। গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত যৌন দৃশ্য দেখিয়ে ওই সব যুবতীকে দিনের পর দিন ব্ল্যাকমেইল করে আসছিলেন। একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরে নিজ বাসা থেকে ফুয়াদ বিন সুলতানকে গ্রেফতারের পর র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই দেয় চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। ওই বাসা থেকে অনেক অশ্লীল পর্নো সিডি ও গোপন ক্যামেরা ও এডিটিংয়ের কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম উদ্ধার করে র্যাব। শুধু বান্ধবীই নয়, পেশাদার সুন্দরী যৌন কর্মীদেরও তিনি অর্থের বিনিময়ে ডেকে নিতেন নিজ ফ্ল্যাটে। গোপন ক্যামেরা বসিয়ে ধারণ করতেন সঙ্গমদৃশ্য। আপত্তিকর এসব দৃশ্য দেখিয়ে দিনের পর দিন ব্ল্যাকমেইল করে আসছিলেন ওই নারীদের। অন্যদিকে, ফুয়াদের ছিল যৌনসঙ্গী সরবরাহ করার একটি বিশেষায়িত ওয়েব সাইট। ওই সাইটে প্রবেশ করতে হতো ডলার খরচ করে। ওয়েব সাইটে দেওয়া সুন্দরী মেয়েদের ছবি দেখে পছন্দ হওয়ার পর রেট অনুযায়ী সরবরাহ করা হতো। তবে ভেন্যু ছিল তার নিজের দুটি ফ্ল্যাট। ফুয়াদের ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন এমন অনেক ব্যক্তির সেক্স দৃশ্য ধারণ করে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন মোটা অঙ্কের অর্থ। অনেকের দৃশ্য তিনি ইন্টারনেটেও ছেড়ে দিয়েছিলেন। আবার অনেক ভিডিও দিয়ে তিনি তৈরি করেছেন পর্নো ছবি। অর্থের বিনিময়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সাইটে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করতেন তিনি। কয়েকটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গোয়েন্দা নজরদারি চালানোর পর নিশ্চিত হয়ে ফুয়াদকে গ্রেফতার করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ফুয়াদ রাজধানীর তিতুমীর কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স পাস করার পর শুরুতে কয়েকটি দেশি ও বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করেছেন। ছাত্রাবস্থায়ই তিনি প্রেমের ফাঁদে ফেলে অনেক মেয়ের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে তাদের ব্ল্যাকমেইল করে আসছিলেন। হঠাৎ করে চাকরি ছেড়ে দিয়ে যৌন ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ে জড়িয়ে পড়েন। ২০১১ সালের শুরুতে উত্তরা এলাকায় বাসা ভাড়া করে যৌন কাজের জন্য ঘণ্টা হিসেবে ভাড়া দিতেন। ২০১৪ সালের দিকে তিনি ইন্টারনেটের ব্যবসা শুরু করেন। ওই সময়ই তিনি তার যৌন নেশাকে পেশায় পরিণত করেন। বিভিন্ন সময় ধারণ করা ভিডিও এডিট করে টার্গেটকৃত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। বিনিময়ে হাতিয়ে নিতেন মোটা অঙ্কের অর্থ। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, গোপন ক্যামেরায় গোপন ব্যবসার চক্র এখন সারাদেশে ছড়িয়ে আছে। সচেতনতার অভাবে নারী বা পুরুষ প্রত্যেকেই চক্রের শিকারে পরিণত হচ্ছে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, একমাত্র সাবধানতা আর প্রয়োজনীয় সতর্কতাই একমাত্র পারে আমাদের অনাকাক্সিক্ষত বিপদ এবং বিব্রতকর কোনো পরিস্থিতি থেকে নিরাপদে রাখতে।
শিরোনাম
- শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তায় ডর্টমুন্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালে রিয়াল
- টেক্সাসে ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৭
- নয়জনের দল নিয়েই বায়ার্নকে হারিয়ে সেমিফাইনালে পিএসজি
- মিশরে দুই মিনিবাসের সংঘর্ষে ৯ জন নিহত, আহত ১১
- তানভীরের জবাব: ক্যাপ্টেনের ভরসাই আত্মবিশ্বাসের চাবিকাঠি
- করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন জনপ্রিয় অভিনেতা কেনেথ কলি
- সকালের মধ্যে সাত জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের সম্ভাবনা
- ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে এগিয়ে যেতে হবে: আমিনুল
- ইমন-হৃদয়-তানভীরের ত্রয়ী দাপট কলম্বোতে
- শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সমতা ফেরাল বাংলাদেশ
- মান্না ছিলেন বাংলাদেশের জেমস বন্ড: জাহিদ হাসান
- জ্ঞানীরা পিআর সিস্টেমে নির্বাচন চায় : ফয়জুল করিম
- পাহাড়ি ফল ঐতিহ্যের অংশ : উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা
- পল্লী বিদ্যুতের সাব-যোনাল অফিস স্থানান্তরের প্রতিবাদে গাইবান্ধায় বিক্ষোভ
- প্রবাসী ভাইয়ের লাশ আনতে গিয়ে প্রাণ গেল দুই ভাইয়ের
- নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে : নার্গিস বেগম
- বিচার ও সংস্কারের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে হবে : নাহিদ
- চট্টগ্রামে স্বেচ্ছাসেবক দলের আনন্দ মিছিল
- উত্তাল বঙ্গোপসাগরে আশ্রয় নিল শত শত ট্রলার, চার বন্দরে সতর্কতা
- বিএনপি নামলে নির্বাচন পেছানোর সাহস কারো নেই : গয়েশ্বর
গোপন ক্যামেরায় গোপন ব্যবসা
মির্জা মেহেদী তমাল
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর