সোমবার, ১১ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

অভিযোগের পাহাড় সদর দফতরে

দুই বছরে ২৯ হাজার পুলিশের শাস্তি । ঘুষ নিয়োগবাণিজ্য নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অপরাধ

আলী আজম

অভিযোগের পাহাড় সদর দফতরে

পুলিশের বিরুদ্ধে সদর দফতরে অভিযোগের পাহাড় তৈরি হয়েছে। ঘুষ, হয়রানি, নারী নির্যাতন ও চাঁদা দাবি ছাড়াও পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে জীবননাশের হুমকির অভিযোগ পাচ্ছে পুলিশ সদর দফতর কর্তৃপক্ষ। ই-মেইল, মোবাইল ফোন বা সরাসরি এসব অভিযোগ আসছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতি মাসে গড়ে ১২০০ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া চাকরিতে যোগদান করে অল্প সময়ের ব্যবধানে যারা অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন, তাদের ব্যাপারেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে তদন্তের পর বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের একটি সূত্র এসব তথ্য দিয়ে বলেছে, অপরাধে জড়িত সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের তিরস্কার থেকে শুরু করে প্রমোশন ও টাইম স্কেল স্থগিত, চাকরিচ্যুতি, বাধ্যতামূলক অবসর ও পদাবনতির মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ২৮ হাজার ৯৯১ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর মধ্যে কনস্টেবল থেকে এসআই পদমর্যাদার ২৫ হাজার ৯২ জন, ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার ৫৫ জন এবং এএসপি থেকে তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার সাতজন রয়েছেন। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে লঘুদন্ড, গুরুদন্ড, চাকরিচ্যুতি, বাধ্যতামূলক অবসরসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, ‘পুলিশের যে কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তদন্তের জন্য তা সংশ্লিষ্ট ইউনিটে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেলে তারা শাস্তির সুপারিশ করে। পরে পুলিশ সদর দফতর থেকে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা ছাড়াও প্রয়োজনে ফৌজদারি মামলা করা হয়।’ তিনি বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে পুলিশের সব পর্যায়ের সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ছাড়া অপরাধ প্রবণতা কমাতে পুলিশ সদস্যদের মোটিভেশনাল ট্রেনিংও দেওয়া হচ্ছে, যেখানে অপরাধ করলে সাজা পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক বনে যাওয়া পুলিশের এক শিক্ষানবিস এসআইকে ক্লোজ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়েছে। কুমিল্লা পুলিশ লাইনসের সাবেক এই আরও-১ শিক্ষানবিস এসআই জয়নাল আবেদীন মাত্র সাড়ে তিন বছরেই কোটিপতি হয়ে গেছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, এ জেলায় কর্মরত কনস্টেবল, এএসআই ও এসআইদের প্রথম শ্রেণির বিভিন্ন থানা ও ডিবিতে বদলি এবং কনস্টেবল পদে নিয়োগ-বাণিজ্যের মাধ্যমে তিনি গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা তার নামে ও বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির হদিস পেয়েছেন। এসআই জয়নাল চাকরিতে যোগদানের পর সাড়ে তিন বছর কুমিল্লায় গুরুত্বপূর্ণ আরও-১ পদে কর্মরত থাকায় বদলির বিষয়টি ছিল তার হাতে। যে কারণে কোতোয়ালি মডেল থানা, ডিবি, সদর দক্ষিণ মডেল থানা, চৌদ্দগ্রাম থানা, দেবীদ্বার থানা, মুরাদনগর থানা ও ডিএসবিতে বদলি হতে এসআইদের কাছ থেকে জয়নাল জনপ্রতি তিন লাখ টাকা এবং কনস্টেবলদের কাছ থেকে এক লাখ টাকা করে নিতেন। আর আর্থিক সুবিধা না পেলে হোমনা, মেঘনা, তিতাস, মনোহরগঞ্জ থানায় বদলি করতেন। এসপি জেলার বাইরে থাকলেও অসদুপায় অবলম্বন করে স্বাক্ষর দেখিয়ে পদোন্নতি দেওয়ার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে রয়েছে।

কুমিল্লার পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, এসআই জয়নাল আবেদীনের অভিযোগের বিষয়ে আইজিপি সরাসরি তদারক করেছেন। একজন অতিরিক্ত এসপি বিষয়টি তদন্ত করেছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে এসআই জয়নালের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ রয়েছে সে বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি এসপি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর