সোমবার, ১১ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
নদী বাঁচাও ৩০

লৌহজং নদীর বুকে চাষাবাদ

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ঢালান শিবপুর থেকে মির্জাপুরের বংশাই নদী পর্যন্ত প্রায় ৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ লৌহজং নদী। শহরের ওপর দিয়ে বয়ে চলা নদীর দুই পাশে এখন অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার ঘর-বাড়ি। এতে করে লৌহজং নদী দখল হয়ে সরু খালে পরিণত হয়েছে

নাসির উদ্দিন, টাঙ্গাইল

লৌহজং নদীর বুকে চাষাবাদ

এক সময়ের খরস্রোতা লৌহজং নদী এখন সরু খালে পরিণত হয়েছে। কোথাও কোথাও নদীর তলদেশে হচ্ছে চাষাবাদও। এটি যমুনার শাখা নদী। ভূঞাপুর থানা সদরের গাবসাড়া হতে সরু হয়ে ভূঞাপুর থানা সদরের ১ কিলোমিটার উত্তরে পাঁচটিকরীতে এটি ঝিনাই নদীর সঙ্গে মিশেছে দক্ষিণ-পূর্বাভিমুখী হয়ে। নদীটি টাঙ্গাইল শহর-করটিয়া, বাসাইল সীমান্ত দিয়ে মির্জাপুর-জামুর্কী হয়ে বংশাই নদীর সঙ্গেও মিলিত হয়েছে। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ঢালান শিবপুর থেকে মির্জাপুরের বংশাই নদী পর্যন্ত প্রায় ৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ লৌহজং নদী। শহরের ওপর দিয়ে বয়ে চলা এ নদীর দুই পাশে এখন অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার ঘর-বাড়ি। এতে করে লৌহজং নদী দখল হয়ে সরু খালে পরিণত হয়েছে। ২০১৪ সালে দখল হয়ে যাওয়া টাঙ্গাইলের লৌহজং নদী রক্ষার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন টাঙ্গাইলের জনসাধারণ। যদিও কয়েক মাস লৌহজং নদী দখলমুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহরে মাইকিং, নদীর ধারে মানববন্ধনসহ ফেসবুকে জনমত গঠনের বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ২৯ নভেম্বর নদী দখল মুক্ত করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা ‘লৌহজং নদী রক্ষা করিÑপরিবেশবান্ধব টাঙ্গাইল গড়ি’ স্লোগান সংবলিত হলুদ গেঞ্জি পরে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে নদীর কাছে জমায়েত হন। হাজার হাজার মানুষ নদীর দখলদার উচ্ছেদ ও অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দিয়ে নদীর খনন কাজ শুরু করেন। যদিও এর আগেই অনেক দখলদার তাদের ঘরবাড়ি নিজ নিজ উদ্যোগে ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যান। এভাবে ২/৩ মাস নদীর খনন কাজ করে এবং ২ কিলোমিটার নদী উদ্ধার ও দখলদার উচ্ছেদ করা হয়। নদীর দুই পাশে উচ্ছেদকৃত জমি উদ্ধার করে রাস্তা নির্মাণসহ নদীর তলদেশ খনন কাজ করা হয়। স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে নদীর পানি প্রবাহ শুরু হওয়ার আগেই সেই উদ্ধার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আস্তে আস্তে উদ্ধার হওয়া সেই ২ কিলোমিটারও আবার দখল হতে শুরু করেছে। এ ছাড়া টাঙ্গাইলের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত যমুনা, ধলেশ্বরী, ঝিনাই, বংশাই, বৈরান, এলানজানি, লাঙ্গুলিয়া, টোক নদীর দশাও প্রায় একই। দখল-দূষণে এসব নদীও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এদিকে বর্তমান জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম জেলাবাসীকে আশ্বাস দিয়েছেন, বন্ধ হয়ে যাওয়া নদীর খনন কাজ ও নদীর দুই পাশে দখলদারদের উচ্ছেদ করে ৭৬ কিলোমিটার নদী দখলমুক্ত করা হবে। ওয়াকিবহালদের মতে, লৌহজং নদীটি পুনঃখনন জরুরি। পরিবেশ ও নদী গবেষক গৌতম চন্দ্র চন্দ জানান, বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। পরিবেশ সুন্দর রাখতে নদীর ভূমিকা অপরিসীম। নদী সচল না থাকলে বিভিন্ন বর্জ্য জমে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। খুব শিগগিরই উল্লিখিত লৌহজং নদীটি দখলমুক্ত করে সংস্কার করলে টাঙ্গাইল জেলার পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে বহুলাংশে রক্ষা পাবে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর