মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিয়ে করে লুট

মির্জা মেহেদী তমাল

বিয়ে করে লুট

দলিল লেখক রেজাউল করিম রিয়াজের গলা কাটা লাশ উদ্ধার করা হয় নিজ ঘরের ভিতর থেকে। লাশের পাশেই ছিল বড় একটি গর্ত। সিঁধ কাটা। ডাকাতদের কাজ বলে রেজাউলের স্ত্রী আমিনা আক্তার পুলিশকে জানায়। ডাকাতরা সিঁধ কেটে ভিতরে ঢুকে সবাইকে জিম্মি করে। হাত-পা বেঁধে মালামাল লুটে নেয়। তার স্বামী চিৎকার করলে তাকে গলা কেটে ডাকাতরা পালিয়ে যায়। পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। ঘটনাটি বরিশালের। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখতে পায়, গর্তের পাশেই একটি মাকড়সার জাল রয়েছে। কিন্তু সেটি অক্ষত। বেশ কয়েক দিন আগের। পুলিশের সন্দেহ হয়। মাকড়সার জাল অক্ষত থাকার কথা নয়। পুলিশের সন্দেহ গিয়ে ঠেকে স্ত্রী আমেনার দিকে। তাকে জেরা করে পুলিশ। তার স্বামীকে সে নিজেই হত্যা করেছে। সঙ্গে ছিল তার প্রেমিক। স্বামীর সহকারী মাসুম এবং আরও এক সহযোগী। আমিনা আক্তার স্বীকার করেন, পরকীয়া সম্পর্ক জেনে ফেলায় স্বামীকে হত্যা করে সে। আদালতেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় আমিনা আক্তার। পুলিশ জানতে পারে, আমিনা আক্তার লিজার পরকীয়া সম্পর্ক জেনে ফেলায় খুন হন দলিল লেখক স্বামী রেজাউল করিম রিয়াজ। এ ছাড়া স্বামীর সম্পদের ওপরও লোভ ছিল লিজার। স্বামীকে হত্যার পর সেই সম্পদ আত্মসাতের পরিকল্পনাও ছিল লিজার। রিয়াজের সঙ্গে বিয়ের আগে লিজার আরও দুটি বিয়ে হয়েছিল। ওই দুই স্বামীর জমিজমা ও টাকা কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। এরপর তাদের তালাক দেন। একইভাবে রিয়াজের অর্থসম্পদ হাতিয়ে নেওয়া ছিল লিজার উদ্দেশ্য। তবে এর আগেই পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক জেনে ফেলায় খুন করা হয় স্বামী রিয়াজকে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেছেন লিজা। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. বশির আহম্মেদ জানান, শুরু থেকেই পুলিশের সন্দেহ ছিল লিজার দিকে। আটকের পর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে লিজা পুলিশকে জানায়, রিয়াজের দ্বিতীয় এবং লিজার তৃতীয় বিয়ে ছিল। আগের দুই স্বামীর কাছ থেকে জমি এবং অর্থ হাতিয়ে নিয়ে লিজা তাদের তালাক দেন। দ্বিতীয় স্বামীকে তালাক দিয়ে ৪ বছর আগে তিনি রিয়াজকে বিয়ে করেন। ৪ বছরেও কোনো সন্তান না হওয়ায় তাদের দাম্পত্য জীবনে কলহ লেগেই ছিল। এর মধ্যে কয়েক মাস আগে রিয়াজের সহকারী মাছুমের সঙ্গে লিজার পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে লিজার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কের সৃষ্টি হয় মাছুমের। সম্প্রতি লিজার পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়টি জেনে ফেলে রিয়াজ। এ নিয়ে রিয়াজ গালাগালি করে লিজাকে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নগরীর পলাশপুরে রিয়াজের ১৭ শতাংশ জমি আত্মসাৎ এবং পরকীয়া সম্পর্ক বাধাহীন করতে দলিল লেখক রিয়াজকে হত্যার পরিকল্পনা করে লিজা ও মাছুম।  লিজার স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. বশির আহম্মেদ বলেন, গত ১৯ এপ্রিল ঘটনার রাতে লিজা দুধের সঙ্গে দুটি ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে তার স্বামীকে খাওয়ায়। রাত আড়াইটার দিকে লিজা, মাসুম ও তাদের সহযোগী হালিম ওরফে হাইল্ল্যা ধারালো দা ও ছুরি দিয়ে গলা কেটে এবং কুপিয়ে তাকে হত্যা করে।

হত্যাকান্ডের পরদিন গত ১৯ এপ্রিল নিহতের ভাই মনিরুল ইসলাম রিপন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর