শনিবার, ২০ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভয়ঙ্কর প্রেমের ফাঁদ জঙ্গিদের

মির্জা মেহেদী তমাল

ভয়ঙ্কর প্রেমের ফাঁদ জঙ্গিদের

দুই মাস আগে চট্টগ্রামের তরুণী সাফিয়া আক্তার তানজীর সঙ্গে ফেসবুকের একটি গ্রুপে কয়েকজন মেয়ের পরিচয় হয়, যাদের একজন নাঈমা। এই নাঈমার মাধ্যমে তানজীর পরিচয় হয় বরিশালের একটি স্কুলের শিক্ষকের সঙ্গে। তার নাম সহিফুল ওরফে সাইফ। এই সাইফের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বিভিন্নভাবে তানজীকে উৎসাহিত করেন নাঈমা। তানজীও সেই ফাঁদে পা দেন। একপর্যায়ে ২৬ জুন সাইফকে বিয়ে করার জন্য নাঈমার সঙ্গে বাড়ি ছাড়েন তানজী।

বাড়ি ছেড়ে বরিশালে পৌঁছানোর পর তানজীকে নাম পরিচয় গোপন করে নাঈমার বোন হিসেবে একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেন সাইফ। তানজীর বাবা-মায়ের নামের জায়গায় বসানো হয় নাঈমার বাবা-মায়ের নাম। এরই মধ্যে তানজীর সঙ্গে সাইফের বিয়েও হয়। এই সময়ের মধ্যে তানজীকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্নভাবে প্ররোচনা চালান সাইফ ও নাঈমা।

এদিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকা থেকে সাফিয়া আক্তার তানজী (২২) নামে এই তরুণী নিরুদ্দেশ হওয়ার ঘটনায় ছায়া তদন্ত শুরু করে র‌্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-২-এর একটি টিম ৮ জুলাই দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বরিশালের একটি মাদ্রাসায় অভিযান চালিয়ে তানজীকে উদ্ধার করে এবং গ্রেফতার করা হয় জান্নাতুল নাঈমাকে। তবে পালিয়ে যান সাইফ। পরবর্তীতে নাঈমার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে গত ৯ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মো. আফজাল হোসেনকে (২৩) গ্রেফতার করা হয়। নাঈমা ও আফজাল জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য। তারা সদস্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ছিল। জঙ্গিরা নারী সদস্য সংগ্রহে এমন নতুন কৌশল নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে মেয়েদের ধর্মভীরু নারীদের টার্গেট করে তাদের সঙ্গে প্রেম ও বিয়ের মাধ্যমে নিজেদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে। নতুন এই প্রক্রিয়ায় প্রেমিক হিসেবে একজন সুদর্শন পুরুষ সামনে থাকলেও এর পেছনে জড়িত থাকেন একাধিক নারী। র‌্যাব জানায়, কৌশলগত কারণে জঙ্গিরা নারী সদস্য বৃদ্ধি করতে চাচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে ধর্মভীরু নারীদের টার্গেট করত তারা। এরপর বিয়ের ফাঁদে ফেলে জঙ্গিবাদে জড়াত সেই নারীকে। সম্প্রতি নাঈমা ও ফারুক নামের দুজনকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানা গেছে।

র‌্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার (ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি-৩) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী জানান, নাঈমা ও আফজাল ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন নারীকে আনসার আল ইসলামের সদস্য করেছে। তাদের শনাক্ত করা ও পলাতক সাইফকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। নাঈমাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, ‘জান্নাতুল নাঈমা চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। ২০১৬ সাল থেকে সে নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে আসছে। ফেসবুকের একটি গ্রুপে বিভিন্ন নারী সদস্যদের মাধ্যমে প্ররোচিত হয়ে সে আনসার আল ইসলাম জঙ্গি সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত হয়। সে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের মহিলা সদস্য বৃদ্ধিতে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছে।’ গ্রেফতার মো. আফজাল হোসেন সম্পর্কে র‌্যাব জানায়, সে দীর্ঘদিন ধরে আনসার আল ইসলামের সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে রাজধানী ঢাকার কাছের একটি এলাকার স্থানীয় সংগঠক। জিজ্ঞাসাবাদে সে সংগঠনের নির্দেশনা অনুসারে মহিলা সদস্যদের দলে অন্তর্ভুক্তিসহ নারী সদস্যদের দ্বারা নাশকতা পরিকল্পনার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর