রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভুট্টাখেতে বিমান নামানো পাইলট এখন হিরো

প্রতিদিন ডেস্ক

ভুট্টাখেতে বিমান নামানো পাইলট এখন হিরো

রাশিয়ার যে পাইলট কয়েক দিন আগে একটি বিমানকে শস্যখেতে জরুরি অবতরণ করিয়েছেন, তিনি এখন অনেকের কাছেই নায়ক হিসেবে প্রশংসিত হচ্ছেন। বিমানটি জরুরি অবতরণ করানোর সময় সেটিতে জ্বালানি পরিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। কিন্তু তারপরও বিমানের ২৩৩ জন যাত্রীর বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি। ভুট্টাখেতে বিমান অবতরণ করানোর বিষয়ে গতকাল বিবিসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, রাশিয়ার মানুষ এ ঘটনাটিকে ২০০৯ সালে নিউ ইয়র্কের হাডসন নদীতে একটি বিমানের জরুরি অবতরণের সঙ্গে তুলনা করছেন। নিউ ইয়র্কের সে ঘটনায় বিমানটি উড্ডয়নের সময় ইঞ্জিনে পাখির আঘাত লাগে। এরপর পাইলট হাডসন নদীতে বিমানটিকে জরুরি অবরতণ করিয়েছিলেন।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার ইউরাল এয়ারলাইনসের ৩২১ এয়ারবাসটি রাশিয়ার ক্রাইমিয়ার সিমফেরোপলে যাচ্ছিল। বিমানটি ওড়ার অল্পক্ষণের মধ্যেই একঝাঁক চিলের সঙ্গে ধাক্কা খায় এবং এর ফলে বিমানের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। ইউরাল এয়ারলাইনসের বিমানটির ওজন ছিল ৭৭ টনের মতো। পাইলট দামির ইউসুপভ সাংবাদিকদের বলেন, বিমানের যাত্রী এবং ক্রুরা অল্পের জন্য বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছেন। বিমানটি যখন দ্রুতগতিতে আকাশে উঠছিল, তখন প্রথম একটি ইঞ্জিন বন্ধ হয়। এরপর দ্বিতীয় ইঞ্জিনটিও আকস্মিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তখন বেশ ঠা া মাথায় বিমানটিকে জরুরি অবতরণ করিয়েছেন পাইলট দামির ইউসুপভ।

ইউসুপভ বলেন, ‘যখন একটি ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায় তখন আমি ভাবছিলাম যে বিমানটিকে হয়তো বিমানবন্দরে ফিরিয়ে নিতে পারব। যখন আমি দেখলাম, বিমানের দ্বিতীয় ইঞ্জিনটিও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তখন বিমানটি মাটিতে পড়ে যাচ্ছিল। আমি কয়েকবার আমার মত পরিবর্তন করেছি। কারণ, আমি বিমানটিকে উপরে তোলার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু ফ্লাইট রাডারে দেখা যাচ্ছিল বিমানটি মাত্র ৭৯৭ ফুট উপরে আছে। আমি বিমানটিকে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করলাম। ততক্ষণ বিমানটিকে সে উচ্চতায় ধরে রাখতে চেষ্টা করছিলাম। তখন ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ার বিষয়টি দেখলাম। চেষ্টা করছিলাম একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে। কিন্তু হাতে একেবারেই সময় ছিল না। তখন বিমানের পাইলট এবং কো-পাইলট ইঞ্জিনে তেলের সরবরাহ বন্ধ করতে সক্ষম হন। তারপর ভুট্টা খেতে জরুরি অবতরণের পর যাত্রীদের দ্রুত বের করে আনা হয়।’ ইউসুপভ বলেন, ‘বিমানটি ধীরে ধীরে শস্য খেতে নামিয়ে আনি। তখন বিমানটির চাকাও খোলা যায়নি। কীভাবে জরুরি অবতরণ করতে হয়, সে বিষয়টিতে আমি প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম ইউরাল এয়ারলাইনসের ফ্লাইট সিমুলেটরে। নিজেকে আমার নায়ক মনে হচ্ছে না। আমার যেটা করণীয় ছিল, আমি সেটাই করেছি।’

জানা গেছে, বিমানের অবতরণ মোটেও স্বাভাবিক ছিল না। প্রায় ৭০ জন যাত্রীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সৌভাগ্যবশত ভুট্টা খেতটি নরম আবরণের মতো কাজ করেছে। বৃষ্টিতে ভিজে ভুট্টা খেতটি কিছু স্যাঁতসেঁতে অবস্থায় ছিল। ফলে ঘর্ষণের কারণে আগুন ধরেনি। রাশিয়ার একজন শীর্ষ পাইলট ইউরি সাইতনিক বলেন, ‘বিমানের ক্রুরা সবকিছু বইয়ের নিয়ম অনুসারে করেছেন। প্রথমে ইঞ্জিন বন্ধ করেছেন, এরপর বিমানটিকে ধীরে ধীরে মাটিকে নামিয়ে এনেছেন। জরুরি নির্গমন পথ দিয়ে যাত্রীদের দ্রুত নামিয়ে আনা হয়।’ ১১ বছর বয়সী এক বিমানযাত্রী বলেন, ‘একজন বিমানবালা বললেন, বিমান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। তখন আমরা সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্কিত হয়ে গেলাম।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর