বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

রাজপথে ভয়ঙ্কর ঈগল গ্রুপ

মির্জা মেহেদী তমাল

রাজপথে ভয়ঙ্কর ঈগল গ্রুপ

শফিকুল ইসলাম ফার্মগেট থেকে নিজ গাড়িতে বাসায় ফিরছিলেন। পেছনের সিটের বাম দিকে তিনি বসা। জরুরি প্রয়োজনে মোবাইল ফোনে ব্রাউজিং করছেন। গাড়ি কারওয়ান বাজার হয়ে বাংলমোটরের দিকে যাচ্ছে। ওই পথে যানজট সব সময় থাকে। সেদিনও তাই। ধীরগতিতে চলছে গাড়ি। শফিকুল হঠাৎ কেঁপে উঠলেন। তিনি কিছুই বুঝতে পরলেন না। নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে আছেন। হঠাৎ কোথা থেকে কী হলো, বুঝতে পারছেন না। শুধু দেখছেন হাতে মোবাইল ফোনটি নেই। মাথা ঘুরিয়েই পেছনে দেখতে পান, একটি কিশোর এঁকেবেঁকে ছুটছে। তার হাতে শফিকুলের মোবাইল ফোন। গাড়ির জানালার কাচ অর্ধেক নামানো ছিল। ওর মধ্য দিয়েই হাত ঢুকিয়ে ঈগলের মতো ছোঁ মেরে মোবাইলটি ছিনিয়ে নিয়ে পালাচ্ছে। শফিকুল বুঝতেই পারলেন না। কী হয়ে গেল! সম্বিত ফিরে পেতেই তিনি চিৎকার করছেন। কিন্তু ততক্ষণে সেই কিশোর লাপাত্তা। কারওয়ান বাজারের অলিগলির ভিতর কোথায় চলে গেছে কে জানে! শফিকুল গাড়ি থেকে নেমে কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করলেন। লোকজনের ভিড় জমল। কিন্তু কেউ কোনো সাহায্যে এগিয়ে এলো না।

আবদুল মতিন একটি সিএনজিচালিত অটোতে করে শাহবাগ যাচ্ছিলেন। কারওয়ান বাজার এলাকা অতিক্রমের সময় সিএনজির গতি কমে যায়। সামনে অসংখ্য গাড়ি। যানজটে আটকা। পেছনেও গাড়ি। আবদুল মতিনের হাতে মোবাইল ফোন। অটোর দুই পাশের দরজা লাগানো। হঠাৎ ধুপ করে একটা শব্দ! মতিনের বামপাশ দিয়ে সাঁই করে কী একটা ঢুকল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আবারও সেটা বেরিয়ে গেল। কয়েক মুহূর্ত মাত্র। মতিন দেখল তার হাতের মোবাইলটি নেই। তখনই মতিন চিৎকার শুরু করলেন ছিনতাই ছিনতাই বলে। কিন্তু ব্যস্ত সড়কে কে শোনে কার কথা। অটো সাইডে থামল। লোকজন তখন তাকে বলল একটা ছেলে দৌড়ে গলির মধ্যে ঢুকে পড়েছে। বুঝতে বাকি রইল না যে, সে-ই ছিল ছিনতাইকারী। অটোর বাম পাশের র‌্যাকসিনে দেখা যায় ধারালো কিছু দিয়ে কাটা। সেটা দিয়েই হাত ঢুকিয়ে ছিনতাইকারী মোবাইল ফোন সেট ছিনিয়ে নেয়।

ফার্মগেট থেকে সোনারগাঁও মোড়। মাত্র এক দেড় কিলোমিটারের এই পথটি এখন ডেঞ্জার জোন। এ পথ দিয়ে চলার সময় প্রতিদিনই এ ধরনের ছিনতাইকারীর কবলে পড়ছেন মানুষ। গাড়ি বা অটোর মধ্যে বসে থাকাটাও এ স্থানে এখন আর নিরাপদ নয়। শফিকুল আর মতিনের মতো অসংখ্য মানুষ ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে মূল্যবান সামগ্রী হারাচ্ছেন। কুলির ছদ্মবেশী এই কিশোর শিশুরাই এই ছিনতাই করছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, মুহূর্তের মধ্যে ছোঁ মেরে হাতের মোবাইল ছিনিয়ে নিতে পারদর্শী হওয়ায় এদের এখানে ঈগল গ্রুপ বলা হয়। তাদের নিশানা অব্যর্থ। ঈগল গ্রুপের শতাধিক ছিনতাইকারী এই এলাকায় সক্রিয়। তাদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা যায় না। অভিযোগ করলেই সেখানে তার ব্যবসা বন্ধ। ওতপেতে থাকে ওরা। ছদ্মবেশে। চারপাশে। নানা কৌশলে। সুযোগ বুঝে ছোঁ মারছে। হামলে পড়ছে। মুহূর্তেই ছিনিয়ে নিচ্ছে সব কিছু। নানা অভিনব কৌশল ছিনতাইকারীদের। হাজারো ফাঁদ পেতে বসে থাকে তারা। রাস্তায় গাড়িতে বা অটোতে বসে থেকেই ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন। প্রতিদিন ঘটছে ছিনতাইয়ের বিচিত্র ঘটনা। টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোন সেটসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই হচ্ছে। কখনো একা ও সংঘবদ্ধভাবে সক্রিয় ছিনতাইকারীরা। দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই এই এলাকায় ছিনতাই হচ্ছে। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, এই ছিনতাইকারীরা ভাসমান। কুলির বেশে থাকে। তাদের ধরা যায় না। এই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি বা অটোতে থাকলেও মোবাইল ফোন বা অন্য মূল্যবান সামগ্রী সাবধানে রাখা জরুরি। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বিচিত্র ধরনের ছিনতাই। সহজ উপায়ে অবৈধভাবে মুহূর্তের মধ্যে লাভবান হওয়ার জন্য সাধারণ মানুষের মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিচ্ছে দুবর্ৃৃত্তরা। বাদ যাচ্ছে না কিছুই। প্রতিদিন টাকা-পয়সা ছিনতাইয়ের বহু ঘটনা ঘটছে। নারীর গলার স্বর্ণের হার, কানের দুল, হাতের চুড়ি, আঙুলের আংটি ছিনতাইও নিত্যদিনের বিষয়। এতে কেবল নারীর কানই ছিঁড়ছে না; চুড়ি ও আংটির সঙ্গে গেছে হাতের কবজি ও আঙুল। হচ্ছে রক্তাক্ত। অবশ্য সিটিগোল্ড বা ইমিটেশনের অলঙ্কারে মাঝে মাঝে ছিনতাইকারীরাও বোকা বনছে। ছিনতাই হচ্ছে পকেটের মানিব্যাগ। সেই সঙ্গে যাচ্ছে ক্রেডিট কার্ড, ব্যাংকের চেক, আইডি কার্ডও। যাচ্ছে মূল্যবান কাগজপত্র কিংবা তথ্য। কথা বলতে বলতেই হাওয়া হচ্ছে হাতের মোবাইল সেট। ছিনতাই হচ্ছে ল্যাপটপ। হাতের ব্যাগের সঙ্গে হারাচ্ছে প্রয়োজনীয় দলিল, পাসপোর্ট-ভিসা, কাপড়-চোপড়সহ অনেক কিছু। সেই পাসপোর্ট-ভিসা ছিনতাইকারীর কোনো কাজে না এলেও তা ফেরত দেওয়ার মতো হৃদয়বান নয় তারা। নারীর ভ্যানিটি ব্যাগের সঙ্গে টাকা ও মোবাইলের পাশাপাশি খোয়া যাচ্ছে প্রসাধনীও।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর