সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

এখনো লাগামহীন দ্রব্যমূল্য

মোস্তফা কাজল

এখনো লাগামহীন দ্রব্যমূল্য

বাজারে এখনো লাগামহীন দ্রব্যমূল্য। রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে পিয়াজ ১৭০, শসা ১৫০, নতুন আলু ১১০, টমেটো ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এর সঙ্গে বেড়েছে চালের দামও। শুধু এ কয়েকটা জিনিসের মধ্যে থেমে নেই দামের ঊর্ধ্বগতি, মসুর ডাল ৯৯, লবণ ৫০, রসুন ১৮০ ও আদা ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শীতের সব সবজি বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। ফলে দামের ঊর্ধ্বগতি দেখে বাজেট ঠিক রাখতে পারছে না সাধারণ মানুষ। গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটি সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী। প্রতি কেজি পুরান আলু ২৮ থেকে ৩০ টাকায়, পিয়াজের কলি ১২০, শালগম ৭০, কাঁচা পেঁপে ৪০, শিম ৮০, কাঁচামরিচ ৮০, বেগুন ৬০, মুলা ৪০, গাজর ১০০, বরবটি ৬০, পটোল ৫০, ঢেঁড়স ৬০, কাঁকরোল ৭০, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বাজারে প্রতি পিস ফুলকপি ৫০-৬০ টাকায়, বাঁধাকপি ৪০ টাকায় এবং প্রতি পিস লাউ ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মো. আবদুল খালেক বলেন, পণ্যবাহী ট্রাক না চলায় চাহিদা অনুযায়ী পণ্য রাজধানীর বাজারে আসতে পারেনি। ফলে শীতকালীন সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। শীতকালীন সবজির কোনো সংকট নেই। পণ্যবাহী ট্রাকে সবজি নিয়মিত আসতে থাকলে দাম আগের জায়গায় চলে আসবে। বাজার করতে আসা ক্রেতা মালেকা বেগম বলেন, ‘নিত্যপণ্যের মূল্য এতটাই ঊর্ধ্বমুখী যে পরিকল্পনা অনুযায়ী বাজার করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিনই নতুন কোনো একটা কিছু ঘটছে আর শাক-সবজি, ফলমূল, চাল-ডাল সবকিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে। এতে যাদের টাকা আছে তাদের সমস্যা না হলেও মধ্যবিত্তের ভীষণ সমস্যা হচ্ছে।’ তবে গোশতের বাজার গত সপ্তাহের মতো স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতি কেজি গরুর গোশত ৫২০ থেকে ৫৫০ টাকায়, খাসির গোশত ৭৫০ টাকায় এবং বকরির গোশত ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মুরগির দাম কমেছে। গতকাল ব্রয়লার মুরগি কেজি ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়, লেয়ার ২১০ টাকায়, পাকিস্তানি কক ২৪০ টাকায়, দেশি মুরগি ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। এদিকে বিভিন্ন জেলায় নতুন পিয়াজ উঠতে শুরু করায় এবং বিদেশ থেকে আমদানির ফলে পিয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। এদিকে দুই সপ্তাহে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। এসব চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ছয় থেকে সাত টাকা। গতকাল মসুর ডাল ৯৯, লবণ ৫০, রসুন ১৮০ ও আদা ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শীতকাল সবে শুরু হয়েছে। শীতের সবজি বাজারে বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। সবজির বাজারে কি রাজনীতির ভূত চড়েছে? এই মধ্যস্বত্বভোগী কারা? কোথাও বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই। রাজধানী ঢাকায় কাঁচাবাজারগুলোতে দুই সিটি করপোরেশনের সাইনবোর্ড ঝুলে থাকলেও বাজার সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। সাইনবোর্ডে বিক্রির তালিকায় চক দিয়ে মূল্য লেখা হচ্ছে না। এদিকে সবজি চড়া দামে বিক্রি হলেও কৃষক ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ এলাকা থেকে আসা বিভিন্ন সবজি পাঁচগুণ বেশি দামে কিনছেন রাজধানীর ক্রেতারা। একদিকে চাষিরা সবজির উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না, অন্যদিকে আকাশচুম্বী দামের কারণে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। রাজধানীতে যেমনই হোক, গ্রামাঞ্চলে সবজির দাম ক্রেতাদের নাগালেই আছে। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় সবজি চাষিদের মধ্যে হতাশাও আছে। সবজির বাম্পার ফলনের ফলে গ্রাম এলাকায় তুলনামূলক কম দামেই বিক্রি হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. শামছুল আলম বলেন, গ্রাম ও শহরের বাজারে পচনশীল সবজির দাম অর্ধেক ব্যবধান হতে পারে। কয়েক দিনের ব্যবধানে সবজি নষ্ট হয়ে যায়। এ হিসাবে বাজারের অর্ধেক দাম যদি কৃষক পেয়ে থাকেন তাহলে বলতে হবে বাজার কার্যকর আছে। আর অর্ধেক দাম যদি চাষিরা না পান, তবে বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভাবতে হবে। পণ্য পরিবহনে বাধা দূর করতে পদেক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করে আসা সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির বলেন, নজরদারির অভাবে রাজধানীর বাজারে সবজির দাম বাড়ছে। বেশ কয়েকটি পণ্যের প্রতিটিতে শতভাগ বাড়ছে সবজির দাম। তিনি বলেন, সাধারণ চাষিদের বাজারে প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কেউ সবজি ঢাকায় আনতে চাইলে রাজধানীর প্রবেশপথে নিজেদের মনগড়া দামে এসব সবজি কিনে নিচ্ছে ফড়িয়ারা। বাজার নিয়ন্ত্রণে সবার প্রবেশাধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি নজরদারি আরও বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

সর্বশেষ খবর