মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

জঙ্গি হামলা নয়, ডাকাতির জন্য সারওয়ার আলীকে হত্যাচেষ্টা

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই

নিজস্ব প্রতিবেদক

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা. সারওয়ার আলীর বাসায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গতকাল ভোরে রাজধানীর উত্তরা থেকে এ ঘটনায় গ্রেফতার মো. ফরহাদ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআইর কাছে এমনই তথ্য দিয়েছেন। ভুক্তভোগী ঘটনাটিকে জঙ্গি হামলা বলে দাবি করলেও পিবিআই ডাকাতি মনে করছে। গতকাল বিকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে এসপি মো. বশির আহমেদ বলেন, ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ফরহাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার কলমাকান্দায়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, ঘটনার সঙ্গে সাতজন জড়িত। মূল পরিকল্পনাকারী ডা. সারওয়ার আলীর স্ত্রীর চাকরিচ্যুত গাড়িচালক নাজমুল। তিনি বলেন, গ্রেফতার ফরহাদ দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। গত ৩ জানুয়ারি তাকেসহ আরও একজনকে দৈনিক ৫০০ টাকা চুক্তিতে কাজে নেওয়া হয়। পরে এ চক্রে আরও চারজন যোগ হয়ে আশকোনার একটি রেস্টুরেন্টে বসে ডাকাতির পরিকল্পনা করেন। ঘটনার দিন বিকালেও আশকোনার রোজ ভ্যালি হোটেলের ৩০৩ নম্বর কক্ষে সাতজন পরিকল্পনা করেন এবং সন্ধ্যার পর ঘটনাস্থলে যান। এসপি বলেন, প্রাথমিকভাবে এ ঘটনাকে ডাকাতি বলে মনে হচ্ছে। টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিতে তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে ফরহাদ জানিয়েছেন। তবে কোনো জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা মূল পরিকল্পনাকারীকে গ্রেফতার করলে জানা যাবে। এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এ দুজন ছাড়া অন্যদের নাম-পরিচয় জানানো সম্ভব হচ্ছে না।

ওই দিনের ঘটনা বর্ণনা দিয়ে এসপি মো. বশির আহমেদ বলেন, উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ওই বাসার চতুর্থ তলায় সারওয়ার আলী এবং তৃতীয় তলায় তাঁর মেয়ে থাকেন। দুর্বৃত্তদের দুজন প্রথমে তৃতীয় তলায় গিয়ে মেয়ে, মেয়ের স্বামী ও সন্তানকে জিম্মি করেন। তাদের আঘাত করে সারওয়ার আলীর অবস্থান জানতে চান। চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটের কথা বললে একজন ওপরে যান এবং দরজা নক করেন। দরজা খোলা হলে তারা প্রথমে সারওয়ার আলীর স্ত্রী ও পরে সারওয়ার আলীকে জিম্মি করেন। পরে তৃতীয় তলা থেকে আরও একজন আসেন। এ সময় তারা চিৎকার করলে দ্বিতীয় তলায় থাকা এক ব্যক্তি এবং তার ছেলে গিয়ে তাদের বাঁচান। সারওয়ার আলীর মেয়ে ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে পুলিশের সহায়তা চাইলে পুলিশ তৎক্ষণাৎ সেখানে উপস্থিত হয়। তবে এর আগেই দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, বাসায় দুজনই গিয়েছিলেন বাকি পাঁচজন আশপাশে ছিলেন। গ্রেফতার ফরহাদও বাসার আশপাশে অবস্থান করছিলেন। তবে পুলিশ যে দুজনকে গ্রেফতার করে আদালতে জবানবন্দি রেকর্ড করেছে তারা এ সাতজনের বাইরে। তবে গ্রেফতার ওই দুজনেরও এ ঘটনায় সহযোগিতা রয়েছে। হামলার সঙ্গে দুজন শিক্ষিত যুবক রয়েছেন। এ ছাড়া কোনো এক বিষয়ে ডা. সারওয়ার আলীর সঙ্গে তর্ক করার কারণে গাড়িচালক নাজমুলকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, গত ৫ জানুয়ারি রাতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ড. সারওয়ার আলীর উত্তরার বাসভবনে দুই দুষ্কৃতিকারী ঢোকেন। সারওয়ার আলীকে তারা আঘাত করতে না পারলেও এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তাঁর স্ত্রী মাখদুমা নার্গিস, তাঁদের মেয়ে সায়মা আলী ও জামাতা হুমায়ুন কবির এবং দুই প্রতিবেশী। হত্যাচেষ্টার অভিযোগে বাসার দারোয়ান মো. হাসান ও আগের ড্রাইভার নাজমুলসহ অজ্ঞাত চার-পাঁচজনকে আসামি করে উত্তরা পশ্চিম থানায় ৬ জানুয়ারি মামলা করেন ডা. সারওয়ার আলী। ফরহাদ ছাড়াও এ ঘটনায় ওই বাড়ির দারোয়ান হাসান ও ড্রাইভার হাফিজুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর