শিরোনাম
রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

বার্ষিক ফিতে আটকা সৌদি প্রবাসীরা

উচ্চ ফি এড়াতে অনেকেই হচ্ছেন অবৈধ

মুহাম্মদ সেলিম, সৌদি আরব থেকে ফিরে

সৌদি আরব সরকারের নির্ধারিত বার্ষিক ফি পরিশোধ করতে গিয়ে পিষ্ট প্রবাসীরা। এ উচ্চ ফি এড়াতে কয়েক লাখ শ্রমিক গত দুই বছরে ভিসা ও অন্যান্য কাগজপত্র নবায়ন করাননি। ফলে সৌদি আরবে তারা অবৈধভাবেই অবস্থান করছেন। যে কোনো সময় তাদের ফিরে আসতে হতে পারে বাংলাদেশে।

প্রবাসী বাংলাদেশিরা জানান, কয়েক বছর আগেও ভিসা ও অন্যান্য খরচ বাবদ প্রত্যেক শ্রমিকের দুই বছরে সৌদি আরবের সরকারকে দিতে হতো এক থেকে দেড় হাজার দিরহাম। কিন্তু বর্তমানে সৌদি সরকার ফি বাড়িয়েছে ১০ থেকে ১৫ গুণ। তাই প্রত্যেক শ্রমিককে আকামা, তামিন, আমেন মনজিলা, কপিল পায়দা (সৌদিদের সম্মানি) বাবদ প্রতি বছর খরচ হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার দিরহাম। উচ্চ ফি এড়াতে অনেক বাংলাদেশি ভিসা ও অন্যান্য কাগজপত্র নবায়ন করছেন না দুই বছর ধরে। তাই কয়েক লাখ বাংলাদেশি সৌদিতে অবস্থান করছেন অবৈধভাবে। যাদের যে কোনো সময় ফিরে আসতে হতে পারে দেশে।

১৫ বছরের বেশি সময় ধরে মক্কায় অবস্থান করছেন বাংলাদেশি নুর নবী। তিনি বলেন, ‘আগে দুই বছরে ভিসা  ও অন্যান্য খরচ বাবদ দেড় হাজার দিরহাম খরচ হতো। এখন এক বছরেই খরচ হচ্ছে ১৫ হাজার দিরহাম। তাই গত দুই বছর কোনো কাগজপত্রই নবায়ন করতে পারিনি। এখন অবৈধ হয়েই বসবাস করছি। আমার মতো অনেক বাংলাদেশি এভাবে অবস্থান করছেন সৌদিতে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতা বলেন, ‘আগে দুই বছরের জন্য ভিসা ফিসহ অন্যান্য খরচ বাবদ সৌদি সরকারকে একজন শ্রমিকের দিতে হতো এক থেকে দেড় হাজার দিরহাম। এখন সেই খরচ বেড়ে হয়েছে ১০ গুণ। আগে যেখানে দুই বছর পরপর লাইসেন্স ও ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন করতে হতো এখন প্রতি বছরই নবায়ন করতে হয়। একদিকে ফি বাড়িয়ে, অন্যদিকে বৈধ কাগজপত্রের কার্যকাল দুই বছর থেকে কমিয়ে করা হয়েছে এক বছর।’ মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি কর্মরত আছেন। ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩৯ লাখ শ্রমিক পাড়ি জমিয়েছেন। যার প্রায় সবাই গেছেন শ্রমিক হিসেবে। তবে মক্কা, মদিনা, রিয়াদসহ সৌদি আরবের বিভিন্ন রাজ্যে ব্যবসায়ী হিসেবেও বেশ প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশিরা। গৃহস্থালি তৈজসপত্রের শোরুম, আবাসিক হোটেল, খাবার হোটেল, গাড়ির যন্ত্রাংশ, চিকিৎসা পণ্য, আবাসন উপকরণ, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও বিদ্যুৎ-চালিত সামগ্রী, কার্পেট ও কনফেকশনারি ব্যবসা একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বাংলাদেশিদের। এমনকি এসব রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বাঙালি মার্কেটও রয়েছে অসংখ্য। এসব মার্কেটে মালিক থেকে শুরু করে শ্রমিক সবই বাঙালি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতা বলেন, ‘সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় রয়েছেন স্বল্প বেতনের শ্রমিকরা। তারা জায়গাজমি বিক্রি করে এ দেশে এসেছেন ভাগ্য ফেরাতে। ভাগ্য ফেরানো দূরের কথা, তাদের এখানে বেঁচে থাকাটাই কঠিন হচ্ছে। বার্ষিক বিভিন্ন ফি বাড়লেও অনেকের বেতন বাড়েনি। তাই চাইলেও প্রতি বছর ভিসা ও অন্যান্য কাগজপত্র নবায়ন করাতে পারছেন না। তাই বৈধভাবে এসে ফি পরিশোধ করতে না পারায় অবৈধ হচ্ছেন লাখ লাখ প্রবাসী।’

সর্বশেষ খবর