বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা
ক্যাসিনো ব্রাদার্সের মানি লন্ডারিং

ছয়জনকে পলাতক দেখিয়ে চার্জশিট

মাহবুব মমতাজী

ক্যাসিনো ব্রাদার্স এনামুল হক এনু ও রূপন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে করা পাঁচটি মানি লন্ডারিং মামলার মধ্যে চারটির চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ছয়জনকে পলাতক দেখিয়ে গতকাল আদালতে জমা দেওয়া হয় ওয়ারী, গেন্ডারিয়া ও সূত্রপুর থানায় করা তিনটি মামলার চার্জশিট।

আগেরদিন ২১ জুলাই জমা দেওয়া হয়েছে সূত্রপুর থানায় করা আরও একটি মামলার চার্জশিট। এনামুল হক এনু, রূপন ভূঁইয়া এবং ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ফুটবলার জয় গোপাল সরকারসহ এসব মামলায় ১০ জনকে চারটি মামলাতেই পৃথকভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদের বাইরে থাকা দুজনকে দুটি মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। এখন চার্জশিট জমায় অপেক্ষায় রয়েছে ওয়ারী থানায় করা আরও একটি মামলার। চার্জশিটে থাকা পলাতক আসামিরা হলেন- হারুন অর রশিদ, পাভেল রহমান ও আবুল কালাম আজাদ ওরফে আজাদ রহমান। এ ছাড়া এনু-রূপনের ভাই শহীদুল হক ভূঁইয়া, রশিদুল হক ভূঁইয়া এবং মেরাজুল হক ভূঁইয়া শিপলু। গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এনামুল হক এনু, রূপন ভূঁইয়া, জয় গোপাল সরকার, তুহিন মুন্সী, নবীর হোসেন শিকদার ও সাইফুল ইসলামকে। সিআইডি সূত্র জানায়, গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর গেন্ডারিয়া থানায় করা ২৮ নম্বর মামলার চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া একই দিনে ওয়ারী থানায় করা ৩৪ নম্বর, পরদিন সূত্রাপুর থানায় করা ২৭ ও ২৯ নম্বর মামলার চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। চার্জশিটে এনু-রূপনের জব্দ হওয়া ৯১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে গত পাঁচ বছরে দুইশ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে বলে তুলে ধরা হয়েছে। ওইসব অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ২০৮ কোটি ৪৪ লাখ ১১ হাজার ৬৫০ টাকা। তোলা হয়েছে ২০৫ কোটি ৮৪ লাখ ৮১ হাজার ৮৪ টাকা। এখন স্থিতি রয়েছে ১৯ কোটি ১১ লাখ ৩৬ হাজার ৩৯৪ টাকা। পুরান ঢাকার বংশাল, ইংলিশ রোড, নয়াবাজার, মতিঝিল, শান্তিনগর, গুলশান, ধোলাইখাল, নবাবপুর এলাকায় সাতটি বেসরকারি ব্যাংকে এসব টাকা জমা রাখা হয়। ক্যাসিনোর টাকায় ঢাকা ও তার আশপাশে ২০টি বাড়ি, ২৫ কাঠা জমি এবং ১২৮টি ফ্ল্যাট কেনা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

ক্যাসিনোর টাকায় কেনা ফ্ল্যাট : পুরান ঢাকার ৩১ নম্বর বানিয়ানগরে ছয়টি ফ্ল্যাট রয়েছে। পুরান ঢাকার ১০৫ নম্বর লালমোহন সাহা স্ট্রিটে পাঁচটি ফ্ল্যাট, ১০৬ নম্বর লালমোহন সাহা স্ট্রিটে ১০টি ফ্ল্যাট, ১১৬ নম্বর লালমোহন সাহা স্ট্রিট ছয়টি ফ্ল্যাট, ১১৯ লালমোহন সাহা স্ট্রিটে ছয়টি ফ্ল্যাট, ১১২ নম্বর লালমোহন সাহা স্টিট ছয়টি ফ্ল্যাট ও ১০৩ ও ১২০ নম্বর লালমোহন সাহা স্ট্রিটের দুই কাঠা প্লটের মালিক এনু-রূপন। ওয়ারীর ৭০ নম্বর দক্ষিণ মৈসুন্দি এলাকায় ১৪টি ফ্ল্যাট, গেন্ডারিয়ার ৬৫/২ শাহ সাহেব লেনের ১৭টি ফ্ল্যাট, ৭১ নম্বর শাহ সাহেব লেনের চারটি ফ্ল্যাট, ৮ নম্বর শাহ সাহেব লেনের ১৩টি ফ্ল্যাট, ১ নম্বর নারিন্দা লেনের পাঁচটি ফ্ল্যাট, ১৪ নম্বর নারিন্দা লেনে চারটি, ১৫ নম্বর নারিন্দা লেনের ১১টি ফ্ল্যাট, ১৪ নম্বর নারিন্দা লেনের দুটি ফ্ল্যাট এবং ৬ নম্বর গুরুদাস সরদার লেনের ১২টি ফ্ল্যাটের মালিক এনু-রূপন। ৬৫ নম্বর শাহ সাহেব লেনের টিনশেড ভবন, ১৩৫ নম্বর ডিস্টিলারী রোডে একতলা টিনশেড বাড়ি, ওয়ারী থানার পেছনে ৪৪/বি ভজহরি শাহ স্ট্রিটে চার কাঠার প্লট, ৮৮ নম্বর মুরগীটোলায় ৯ কাঠা, কেরানীগঞ্জে তেঘরিয়ায় ১৫ কাঠা জমির ওপর বাড়ি, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান এলাকায় ১০ কাঠার প্লট, শরীয়তপুর নড়িয়ায় ১২ কাঠা, পালং থানায় ২০ শতক এবং নড়িয়ায় ১৪ শতক জমির মালিক এনু-রূপন। ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালে এসব সম্পদের বেশিরভাগই কেনা হয়েছে। মামলার তদন্তে সংশ্লিষ্ট সিআইডির অতিরিক্ত এসপি নাজিম উদ্দিন আল আজাদ এ প্রতিবেদককে জানান, ওই দুই ভাইয়ের এসব ফ্ল্যাট ও জমি জব্দের জন্য আদালতের আদেশের জন্য আবেদন করছেন। এ ছাড়া ওইসব সম্পদ যাতে হস্তান্তর কিংবা বিক্রি যেন না হয় সে জন্য সাব-রেজিস্ট্রি অফিসেও তারা চিঠি দিয়েছেন। এসব সম্পদ নিয়ে সিআইডির পক্ষ থেকে এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে আরও একটি মামলা করা হবে।

 প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর এনু ও রূপনের পুরান ঢাকার বানিয়ানগরের বাসায় এবং তাদের দুই কর্মচারীর বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। সেখান থেকে ৫ কোটি টাকা এবং সাড়ে ৭ কেজি সোনা জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় সূত্রাপুর ও গেন্ডারিয়া থানায় তাদের নামে ছয়টি মামলা হয়। পরে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এনু-রূপনের লালমোহন সাহা স্ট্রিটের বাসায় ফের অভিযান চালায় র‌্যাব। ওই বাড়ি থেকে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা জব্দ করা হয়। আর ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার এফডিআরের কাগজ এবং এক কেজি সোনা জব্দ করা হয়। এনু-রূপনের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলের পদ কেনারও অভিযোগ রয়েছে। এনু গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন, আর রূপন ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এনু-রূপন গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন।

সর্বশেষ খবর