বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ডিসেম্বরে খুলছে মেয়র আনিসের ৭ ইউটার্ন

প্রকল্প কাজের ৭০ শতাংশ শেষ, ইতিমধ্যে চালু হয়েছে তিনটি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ ও জয়শ্রী ভাদুড়ী

ডিসেম্বরে খুলছে মেয়র আনিসের ৭ ইউটার্ন

নির্মাণকাজ শেষে কাওলা এলাকায় ইউটার্ন ব্যবহার শুরু হয়েছে। চলছে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ -রোহেত রাজীব

রাজধানীর যানজট সমস্যা কমাতে সাতরাস্তা থেকে উত্তরা পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ন নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। এর মধ্যে একটি ইউটার্ন সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বাদ পড়ে। তার মৃত্যুর পরে বাধাবিপত্তিতে মুখ থুবড়ে পড়ে এই প্রকল্প। অবশেষে নতুন মেয়র আতিকুল ইসলামের প্রচেষ্টায় প্রকল্পের কাজ ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এর মধ্যেই চালু হয়েছে তিনটি, বাকিগুলো আগামী ডিসেম্বরে চালু হবে বলে জানা গেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইউটার্নের কাজ পুরোদমে চলছে। এর মধ্যেই তিনটি চালু হয়েছে। এর সুফল পেতে শুরু করেছে নগরবাসী। ইংরেজি নতুন বছরে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে নগরবাসীকে এই ১০ ইউটার্ন উপহার দেব। আমাদের প্রত্যাশা এই ইউটার্নগুলো যানজট সমস্যা লাঘব করে নগরজীবনকে সচল করে তুলবে।’ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে সাতরাস্তা থেকে উত্তরা পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ন নির্মাণের পরিকল্পনা করেন মেয়র আনিসুল হক। প্রকল্প বাস্তবায়নে সড়ক ও জনপথের ৩১ দশমিক ২৫ বিঘা, রেলওয়ের ১ দশমিক ৬১ বিঘা এবং সিভিল এভিয়েশনের ১ দশমিক ৮৩ বিঘা জমির প্রয়োজন পড়ে। সংস্থাগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেন মেয়র। এর মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। মেয়রের সঙ্গে আলোচনায় কোনো খরচ ছাড়াই জমি ব্যবহারে অনুমতি দেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কিন্তু আনিসুল হকের মৃত্যুর পর প্রকল্পের কাজ শুরু করতে গেলে বাধা দেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। প্রয়োজনীয় জমির জন্য অর্থ দাবি করলে প্রকল্প খরচ বেড়ে দাঁড়ায় কয়েক গুণ। এ প্রকল্প ব্যয়ের ২৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকার মধ্যে ১৯ কোটি ৮৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা সরকার দেবে আর বাকি টাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হবে। প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় থেমে যায় যাবতীয় কার্যক্রম। তখন এই সমস্যার সমাধান চেয়ে ২০১৭ সালের নভেম্বরে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর চিঠি দেয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। পরে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে এই প্রকল্পে ব্যবহারে জমি প্রদানে রাজি হয়। এর পরেই শুরু হয় প্রকল্পের কাজ। প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কাওলায় কাজ শেষে খুলে দেওয়া হয়েছে ইউটার্ন। চলাচল করছে যানবাহন। ইউটার্নের সড়ক বিভাজনে চলছে সবুজায়ন প্রকল্প। সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য লাগানো হয়েছে গাছ। গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত শ্রমিক হামিদ আলী বলেন, ‘গাছ লাগানো শেষ হয়েছে। গাছে নিয়মিত পানি দিয়ে পরিচর্যা করা হয়।’ তেজগাঁওয়ের বিজি প্রেস এলাকায় পুরোদমে চলছে কাজ। নির্মাণকাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। শ্রমিক হোসেন মিয়া বলেন, ‘দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। দুই মাসের মধ্যে আমাদের নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যাবে। এরপরে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হবে।’ প্রকল্প পরিচালক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহাবুব আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই প্রকল্পের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যেই তিনটি ইউটার্ন চালু হয়েছে। চালু হওয়া ইউটার্নে চলছে সবুজায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। বিজি প্রেসের সামনে, বনানী চেয়ারম্যানবাড়িসহ সব ইউটার্নের কাজ সমানতালে চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জোয়ার সাহারা এলাকায় আর্মি গলফ ক্লাবের সামনে যে ইউটার্ন হওয়ার কথা ছিল সেখানে কিছু ত্রুটির বিষয়ে বলেছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। এ জন্য প্রকল্পে ১১টি ইউটার্নের জায়গায় ১০টি ইউটার্ন নির্মাণ হচ্ছে। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সব ইউটার্নের কাজ শেষ হবে। এই প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত। সবকিছু ঠিক থাকলে মেয়াদের আগেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারব।’ মেয়র আনিসুল হকের কাছে প্রথম এই প্রকল্পের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন প্রকৌশলী কামরুল হাসান। প্রকল্প বাস্তবায়নে ঢাকাবাসী কী সুবিধা পাবে জানতে চাইলে এই প্রকল্প পরামর্শক বলেন, রাজধানীর সবচেয়ে ব্যস্ত সড়কগুলোর মধ্যে সাতরাস্তা থেকে উত্তরা অন্যতম। সারাক্ষণ এই রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে। টার্নিং ইয়ার্ড থিওরিতে এটা নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘এখানে ইউটার্ন নির্মাণ হলে গাড়িগুলো কোনো সিগন্যালে না পড়েই ঘুরতে পারবে। আর এই ইউটার্নের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এ জন্য কোনো গাড়িকে অন্য গাড়ির জন্য দাঁড়াতে হবে না, সিগন্যালে আটকে গতিও কমাতে হবে না। খুব অল্প খরচে এবং কোনো দীর্ঘ খোঁড়াখুঁড়ির ঝঞ্ঝাটে না পড়েই যানজটমুক্ত সড়ক পাবে নগরবাসী।’

সর্বশেষ খবর