বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পিঁয়াজ পচল কেন খতিয়ে দেখছে সরকার

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

গত ১৫ দিনে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ আড়তের প্রায় এক- তৃতীয়াংশ পিঁয়াজ পচে যাওয়ার পর এখন এর কারণ খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে আমদানিকৃত পিঁয়াজ পচে যাওয়ার পর কীভাবে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায় তার উপায় নিয়েও ভাবছে সরকার।

জানা গেছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটি নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, দ্রুত এর সমাধান বের করতে গতকাল দুই অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন বাণিজ্য সচিব। পাশাপাশি একজন অতিরিক্ত সচিব চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজার পরিদর্শন শেষে গত মঙ্গলবার যে সুপারিশ দিয়েছেন সেগুলোর যথার্থতাও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ওই পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাতুনগঞ্জের প্রতিটি আড়তে বিপুল পরিমাণ পিঁয়াজ এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু পিঁয়াজে গাছ তৈরি হয়েছে এবং ৩০ শতাংশে পচন ধরেছে। বিপুল পরিমাণ পিঁয়াজ আমদানির ফলে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি হওয়ায় আমদানিমূল্যের অর্ধেক দামে পণ্যটি বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন গতকাল বিকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখন আমাদের সামনে দুটি এজেন্ডা গুরুত্বপূর্ণ। এক : হঠাৎ করে কেন এত বেশি পিঁয়াজ পচে গেল তা খতিয়ে দেখা; অন্যটি হচ্ছে- ক্ষতিগ্রস্ত আমদানিকারকদের কীভাবে সহায়তা দেওয়া যায় সে বিষয়ে সরকারের যৌক্তিক অবস্থান তৈরি করা। সচিব জানান, এত বেশি পিঁয়াজ (মজুদের প্রায় ৩০ শতাংশ) একেবারে পচে যাওয়ার কথা নয়। ব্যবসায়ীরা নষ্ট পিঁয়াজ আমদানি করেছেন, নাকি কনটেইনারে নি¤œমানের পিঁয়াজ সরবরাহ করা হয়েছে- সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

সচিবের টেবিলে ১১ সুপারিশ : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান গত ১৯ ও ২০ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর ও খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজার পরিদর্শন শেষে গত মঙ্গলবার বাণিজ্য সচিবকে যে প্রতিবেদন দেন তাতে ১১টি সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের বিষয়ে ৫টি সুপারিশ ও খাতুনগঞ্জ পরিদর্শনের ওপরে ৬টি সুপারিশ রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো হচ্ছে : পিঁয়াজসহ অন্যান্য পচনশীল পণ্যের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে পৃথক সংরক্ষণাগার তৈরি করা; পিঁয়াজের উৎপাদন, ঘাটতি, আমদানি ও চাহিদার সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে টিসিবি এবং বেসরকারি আমদানিকারকদের এলসি খোলার বিষয়টি সমন্বয় করা; ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করা; পিঁয়াজ সংরক্ষণের বিষয়ে বন্দরের ফি মওকুফ এবং বিদ্যুৎ বিল নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করা; বন্দরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পচনশীল পণ্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত  রেফার্ড কনটেইনারে রাখার উদ্যোগ নেওয়া; আমদানিকারকদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষায় আমদানিমূল্যে টিসিবির মাধ্যমে পিঁয়াজ কিনে নেওয়া এবং ব্যবসায়ীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ঝুঁকি বীমার সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখা। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, টিসিবির মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের আমদানি করা পিঁয়াজ কেনার সুযোগ নেই। কারণ আগামী মার্চ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির ক্রয় পরিকল্পনা আগেই তৈরি করা হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে পিঁয়াজসহ পচনশীল পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ঝুঁকি বীমার বাধ্যবাধকতার বিষয়টি নিয়ে ভাবছে সরকার। এর ফলে কোনো ব্যবসায়ী পণ্য আমদানির সময় বীমার প্রিমিয়াম দেবেন। ওই পণ্য পচে গেলে বা নষ্ট হলে বীমা খাত ক্ষতিপূরণ দেবে। গতকাল এ বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব আলোচনা করেছেন বলেও জানা গেছে। এ ছাড়া পিঁয়াজ আমদানিকারকদের নীতিগত সহায়তার বিষয়ে আলোচনার জন্য তাদের একটি অ্যাসোসিয়েশন গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

কর্মকর্তারা জানান, পিঁয়াজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনা করা হবে এমন কোনো প্রতিনিধি বা সংগঠন নেই তাদের। এ কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটিকে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের একটি সাংগঠনিক কাঠামো তৈরির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে। যাতে সরকারের নীতি সহায়তার বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ তৈরি হয়।

সর্বশেষ খবর