মঙ্গলবার, ২ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

ভালোবাসা দিবসেই জীবন দিয়েছিল ওরা

মির্জা মেহেদী তমাল

ভালোবাসা দিবসেই জীবন দিয়েছিল ওরা

নানার বাড়িতে খালাতো দুই বোনের লাশ পাওয়া যায়। একজন দশম শ্রেণির ছাত্রী, অপরজন নবম শ্রেণির। লাশ দুটির সামনে মেলে কীটনাশকের বোতল। ভালোবাসা দিবসে দুজনই নানার বাড়িতে বেড়াতে এসে বিষপানে আত্মহত্যা করে। পাশাপাশি কবরে দুই বোনকে সমাহিতও করা হয়। কী কারণে এরা এক দিনেই আত্মহত্যা করেছে? ভালোবাসা দিবসকেই এরা বেছে নিল কেন? ২০১৮ সালে রংপুর নগরীর দর্শনা শেখপাড়া এলাকায় দুই স্কুলছাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর এমন নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করে। মানুষের মুখে নানা কথাবার্তা বাতাসে উড়ে বেড়ালেও সঠিক কোনো কারণ কেউ জানতে পারেনি। থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়। তদন্ত বেশি দূর এগোয়নি। তবে তিন বছর আগেকার এই আলোচিত ঘটনাটি আবারও সামনে চলে আসে নতুন করে তদন্ত শুরু হওয়ার পর। তদন্তে নতুন মোড় নেয়। পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে ত্রিভূজ প্রেমের করুণ পরিণতির গল্প। আর এর পেছনে যে খলনায়ক ছিল পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকেই বেরিয়ে আসে ভালোবাসা দিবসে দুই বোনের করুণ মৃত্যুর কাহিনি। সাদিয়া জান্নাতি ও লৎফুন্নাহার খাতুন। একজন দশম শ্রেণির এবং অপরজন নবম শ্রেণির ছাত্রী। সম্পর্কে খালাতো বোন হলেও এরা ছিল বন্ধুর মতো। একসঙ্গে স্কুলে যেত। একসঙ্গেই চলত। দুজনই প্রেম করত। প্রেমের গল্প করলেও প্রেমিককে কেউ কাউকে দেখাতে পারেনি। এভাবেই চলছিল তাদের সম্পর্ক। তাদের অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছিল না পরিবারের সদস্যরা।  এই দুই বোনের মৃত্যুর পর এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। প্রায় আড়াই বছর তদন্ত করার পরও ঘটনার রহস্য উদঘাটন হয়নি। পরে পিবিআই মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে। দায়িত্ব পাওয়ার পর পিবিআই দীর্ঘ সময় অনুসন্ধান করে। মামলার রহস্য উন্মোচিত করে তারা। রহস্য উন্মোচিত হয় দুই খালাতো বোনের মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের পর। কারণ তাদের দুজনেরই মৃত্যুর আগে ধর্ষিত হওয়ার বিষয়টি জানা যায় ওই প্রতিবেদনে। তারপর গভীর অনুসন্ধানে রহস্য বুঝতে পেরে সন্ধেহভাজন মেরাজুল ইসলামকে গ্রেফতার করলে পুরো বিষয়টি জানা যায়। পিবিআই জানায়, রংপুর শহরের শেখপাড়া এলাকার আনছার আলীর ছেলে মেরাজুল ইসলাম (২১)। একই গ্রামের আলমগীর হোসেনের মেয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া জান্নাতির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হয়। জান্নাতির খালাতো বোন পূর্ব শেখপাড়া এলাকার মঞ্জুর হোসেনের মেয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী লুৎফুন্নাহার খাতুনের সঙ্গেও প্রেম শুরু করে মেরাজুল। দুই বোনের কেউই বিষয়টি টের পায়নি। এক পর্যায়ে মেরাজুল দুই বোনের সঙ্গেই শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে দুজনের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে যায় মেরাজুল। দুই বোনের কেউই জানত না যে, মেরাজুল তাদের দুজনের সঙ্গেই প্রেম করছে। বিষয়টি এক সময় দুজনের মধ্যে জানাজানি হয়ে যায়। দুই বোনের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। অপমান সইতে না পেরে শেখপাড়ায় নানা বাড়িতে গিয়ে একই সঙ্গে বিষপান করে আত্মহত্যা করে তারা। 

সর্বশেষ খবর