বুধবার, ৩১ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

ল্যাব নয়, করোনা সম্ভবত প্রাণী থেকে এসেছে : ডব্লিউএইচও

প্রতিদিন ডেস্ক

কভিড-১৯ সম্ভবত কোনো প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে এসেছিল এবং ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথম শনাক্ত হওয়ার এক বা দুই মাস আগে থেকে এটি ছড়ানো শুরু হয়েছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক খসড়া রিপোর্টে এ কথা বলা হয়েছে। গবেষণাগার থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম, কভিড-১৯ এর উৎস নিয়ে তদন্ত করা ডব্লিউএইচওর যৌথ আন্তর্জাতিক দল এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সিএনএন। চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই প্রতিবেদনের খসড়া সংস্করণ হাতে পায় সিএনএন, যাতে ২০১৯ সালের একেবারে শেষ দিকের আগে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছিল এমন কোনো তথ্য বা ইঙ্গিত নেই। প্রতিবেদনে ভাইরাসের সম্ভাব্য চারটি উৎসের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা হচ্ছে বাদুড় থেকে অন্য কোনো প্রাণী হয়ে ভাইরাসটি মানবদেহে প্রবেশ করেছিল। অন্তর্বর্তীকালীন বাহক ওই বন্যপ্রাণীটি সম্ভবত মানুষের হাতে ধরা পড়েছিল এবং পরে খামারে বেড়ে উঠেছিল।

বিজ্ঞানীরা বাদুড়কেই করোনাভাইরাসের মূল উৎস মনে করছেন, তবে এর কাছ থেকে মানুষের মধ্যে আসার আগে অন্য কোনো প্রাণী ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছিল, তদন্তে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ‘সার্স-সিওভি-২ এর সম্ভাব্য অন্তর্বর্তীকালীন বাহক প্রাণীটি এখনো অধরাই রয়ে গেছে’ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর পর যে সম্ভাবনাটি প্রকট, তা হলো বাদুড় বা প্যাঙ্গোলিনের মতো যেসব প্রাণী এ ধরনের করোনাভাইরাস বহন করতে পারে, তাদের কাছ থেকে এটি সরাসরি মানুষের দেহে এসেছে। জমাটবাঁধা বা হিমায়িত খাবার থেকে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটতে পারে, এমন সম্ভাবনা কম হলেও তা অসম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। আর ল্যাব থেকে দুর্ঘটনাবশত ভাইরাসটি ছড়িয়েছে- এ সম্ভাবনা সবচেয়ে কম বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের সাবেক পরিচালক ড. রবার্ট রেডফিল্ড এর আগে সিএনএনের ড. সঞ্জয় গুপ্তকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসটি কোনো ল্যাব থেকে ছাড়া হয়েছে বলে মত ব্যক্ত করেছিলেন।

আর ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদন বলছে, তেমনটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ‘২০১৯ সালের ডিসেম্বরের আগে কোনো গবেষণাগারেই সার্স-সিওভি-২ এর কাছাকাছি কোনো ভাইরাস বা এমন কোনো জিনোমের রেকর্ড নেই, যাদের সংমিশ্রণে সার্স-সিওভি-২ এর জিনোম পাওয়া যায়। এসব কারণে কোনো একটি গবেষণাগার থেকে মহামারীর সূত্রপাত, এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম’ বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ গবেষকরাও মাসের পর মাস ধরে এ কথাই বলে আসছেন। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায়ও দেখা গেছে, ভাইরাসটি কোনো ল্যাবে বানানো হয়নি, বরং এটি স্বাভাবিকভাবেই কোনো প্রাণীর কাছ থেকে মানুষের দেহে প্রবেশ করেছে এবং পরে ছড়িয়েছে; যেমনটা সার্স ভাইরাসের ক্ষেত্রেও হয়েছিল। ডব্লিউএইচওর এ খসড়া প্রতিবেদনে ভাইরাসের বিস্তারে হুনান সিফুড মার্কেটের ভূমিকা নিয়েও স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। হতে পারে উহানের ওই মার্কেটটি প্রাদুর্ভাবের মূল উৎস নয়; তবে ছাদযুক্ত ও খোলা নর্দমার ভিড়ঠাসা ওই মার্কেটের ক্রেতা-বিক্রেতারাই শহরটিতে কভিড-১৯ এর বিস্তার ত্বরান্বিত করেছিল বলে মনে করা হচ্ছে। হুনানের ওই মার্কেটে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শনাক্ত হওয়ার আগে অন্যান্য মার্কেট এবং অন্যত্রও ভাইরাসটি ছড়াচ্ছিল বলে তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথম প্রাদুর্ভাবের খোঁজ পাওয়ার আগে সংরক্ষিত বিভিন্ন মানুষের রক্তের নমুনা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তদন্তকারীরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন প্রাণীর ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বড় বড় জমায়েত নিয়ে বিস্তৃত গবেষণা করতে বলেছেন। চীনের ১৭ জন বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের আরও ১৭ জন বিশেষজ্ঞ নিয়ে গঠিত যৌথ আন্তর্জাতিক দল, ডব্লিউএইচও, গ্লোবাল আউটব্রেক অ্যালার্ট অ্যান্ড রেসপন্স নেটওয়ার্ক (জিওএআরএন) এবং ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন ফর অ্যানিম্যাল হেলথ (ওআইই) এ প্রতিবেদনটি লিখেছে বলে জানিয়েছে সিএনএন। পর্যবেক্ষক হিসেবে ছিল জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা (এফএও)।

সর্বশেষ খবর