শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৬ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

খুনির হাতে চুড়ি

মির্জা মেহেদী তমাল

খুনির হাতে চুড়ি

ব্যবসায়ী শ্যামল সাহা স্ত্রীকে নিয়ে গেছেন ভারতে। সেখান থেকে ঢাকার পল্লবীর বাসায় ফোন করছেন ছেলে অমিতের খোঁজখবর নিতে। কিন্তু বাসার ফোন কেউ ধরছে না। মোবাইল বন্ধ। পাশের ফ্ল্যাটে ছেলের বন্ধু শিহাবকেও ফোনে পাচ্ছেন না তিনি। টেনশন করছেন। শালাকে ফোন দেন, ‘কৃষাণ দেখ তো বাসায় গিয়ে। অমিত ফোন ধরছে না কেন!’ তিনিও ছিলেন ভাগ্নে অমিতের সঙ্গেই। বেশ কয়েকদিন একসঙ্গে থেকে সেদিন বিকালেই বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। দেশের বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল কৃষাণের। কিন্তু বোনজামাইয়ের জন্য সেই প্রোগ্রাম বাতিল করে বাসায় যান কৃষাণ। বাসার সামনে গিয়েই অবাক! দরজা খোলা। ঘাবড়ে যান কৃষাণ। অমিতকে ডাকতে ডাকতে ভিতরে ঢোকেন। সামনের ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে অমিত! চিৎকার দেন কৃষাণ। আশপাশের ফ্ল্যাটের লোকজন ছুটে আসেন। খবর দেওয়া হয় পুলিশ। লাশ নামানো হয়। টাই দিয়ে গলায় বাঁধা ছিল অমিতের দেহ। আলমারি খুলে নগদ টাকা, সোনা ও অন্য মালামাল লুটে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ভারত থেকে ছুটে আসেন অমিতের বাবা-মা। পুলিশ তদন্ত শুরু করে খুনি গ্রেফতারে। অমিতের ওই রুম থেকে পুলিশ একটি মদের খালি বোতল উদ্ধার করে। তদন্তে সহায়তা করবে এমন কোনো ক্লু পায় না পুলিশ। এ অবস্থায় পুলিশ ভীষণ চিন্তিত। ২০১২ সালের নভেম্বরের ঘটনা এটি। পুলিশ তদন্ত করতে গিয়ে প্রথমেই সন্দেহ করে মামা কৃষাণকে। কারণ তিনি ছাড়া আর কেউ জানত না অমিত একা থাকে। মালামাল লুটের জন্য তিনি এ কাজ করতে পারেন বলে পুলিশের সন্দেহ। তাকে আটক করে জেরা করা হয়। বলেন, কেন অমিতকে খুন করেছেন? এমন প্রশ্নে মামা কৃষাণ ঘাবড়ে যান। তিনি বলেন, ‘অমিতও তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে ভারত গিয়েছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা থাকায় চলে আসে। তার আগে একাই ছিলাম বাসায়। তখন মালামাল লুট করতে পারতাম। খুন কেন করব!’ এ যুক্তিতে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। পুলিশ জানতে পারে খুনের আগে একটি মেয়ে এসেছিল সেই ফ্ল্যাটে। অমিতের বন্ধু অনিকা। পুলিশ তাকে খুঁজে বের করে। অনিকা জানায়, ওই বাসায় সে গিয়ে দেখে আরও তিন যুবক সেখানে। তারা মাতাল অবস্থায় ছিল। অমিতকেও মদপান করানো হয়েছে। কিন্তু অমিতকে সিগারেট খেতেও সে দেখেনি আগে, অনিকা বলে- পুলিশ নিশ্চিত তারাই খুনি। অনিকা বলে, ‘আমি একজনকে ভালোভাবে দেখতে পেরেছি। আর দুজনকে দেখিনি ভালোভাবে। যাকে দেখেছি তার হাতে একটা চুড়ি ছিল।’ পুলিশ সব নোট রাখে। পুলিশ হাতে চুড়ি পরা সেই যুবককে গ্রেফতারে মাঠে নামে। বেশি দূর যেতে হয়নি তাদের। পাশের ফ্ল্যাটে অমিতের বন্ধু শিহাবের এক হাতে চুড়ি পরা ছিল। গ্রেফতার করে পুলিশ তাকে। তার দেওয়া তথ্যমতে গ্রেফতার করা হয় তার বন্ধু মিন্টু আর রুবেলকে। পুলিশের জেরা শুরু হয়। পুলিশি তদন্তে জানা যায়, লাশ উদ্ধারের পর ওই ভবনের চার তলার ফ্ল্যাট থেকে প্রথমে একজনকে এবং তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী অন্য দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা ওই বাসায় থাকত। বাসা ফাঁকা পেয়ে তারা অমিতের বাসায় এসে আড্ডা দিতে থাকে। তারা বাসায় বসে মদপান করে। নেশা করার একপর্যায়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। তখন ওই তিনজন অমিতের নাক-মুখ চেপে ধরে। তারা অমিতকে শ্বাসরোধে হত্যার পর ঘটনা আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করে। এ জন্য অমিতের গলায় টাই বেঁধে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু টাই খুলে গেলে অমিতের লাশ বিছানায় পড়ে। ওই বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় তারা অমিতের ল্যাপটপ ও আলমারি খুলে কিছু সোনার অলঙ্কার লুট করে। এসব মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। অমিত ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় সিমেস্টারের ছাত্র ছিলেন। নোয়াখালীর মাইজদীতে তাদের গ্রামের বাড়ি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর