শনিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

ছদ্মবেশী প্রেমিকের ভয়ংকর প্রেম

মির্জা মেহেদী তমাল

ছদ্মবেশী প্রেমিকের ভয়ংকর প্রেম

নদীর পাড়ে ঘুরতে গেছে সুরভী আর মাসুদ। মাসুদের চোখে চোখ রেখে সুরভী বলে, আমাকে তুমি বিয়ে করবে তো? কষ্ট দেবে কখনো? মাসুদ বলে, কী যে বল এসব! তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবই না। আসো, একটু কাছে। সুরভী হঠাৎ বলে ওঠে, এই চলো। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। অনেক দূর থেকে আসা। আমার ভয় করছে। মাসুদ বসেই থাকে। ওঠে না। হঠাৎ পাশের একটি ঝোপ থেকে পাঁচ যুবক বেরিয়ে এসে তাদের সামনে দাঁড়ায়। ভয় পায় সুরভী। কী ব্যাপার আপনারা কারা? প্রশ্ন সুরভীর। ওরা হাসে। মাসুদ চুপচাপ। কী ব্যাপার মাসুদ ওঠো তো। সুরুভী আবারও মাসুদকে ওঠতে বলে। মাসুদ এবার মুখ খোলে। বলে, ডার্লিং বস। ওরা আমার বন্ধু। ভয় নেই। আমরা আমরাই তো। এই একটু মজাটজা করব আমরা। সুরভী চিৎকার করে বলে, মাসুদ কী বলছ এসব। তুমি না আমাকে ভালোবাস! মাসুদ উঠে দাঁড়ায়। সুরভীর কাছে যায়। বলে ভালোবাসি বলেই তো এখানে এনেছি তোমাকে। আস বলেই সুরভীকে জাপটে ধরে মাসুদ।

নির্জন নদীর পাড়। সুরভীর চিৎকার বেশি দূর যায় না। পূর্বপরিকল্পনামতো মাসুদ এবং তার পাঁচ বন্ধু মিলে সুরভীকে ঝাউবনে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। সুরভী চিৎকার করার চেষ্টা করলে এবং পুলিশকে ঘটনা বলে দেওয়ার হুমকি দেয়। মাসুদের বন্ধু হান্নান, কালু ও রেজাউল মিলে মেয়েটির গলা টিপে ধরে। মাসুদ ও মামুন চেপে ধরে থাকে মেয়েটির হাত-পা। পরে লাশ ফেলে পালিয়ে যায় তারা। ঘটনাটি ২০১৭ সালের জানুয়ারির। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার সুরভী আকতার নামের এক কলেজছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে

যমুনার দুর্গম চরে বেড়াতে নিয়ে যায়। সেখানে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। কথিত প্রেমিক মাসুদ রানা (২৫) ও তার পাঁচ বন্ধু মিলে সুরভীকে ধর্ষণের পর হত্যা করে।

সুরভী বগুড়ার গাবতলী উপজেলার তরণীহাট ডিগ্রি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। তিনি সারিয়াকান্দি উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের দিনমজুর সুরুত জামানের মেয়ে।

সুরভী ৪ জানুয়ারি কলেজের কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। পরে ৬ জানুয়ারি তার বাবা মেয়ে নিখোঁজের ঘটনায় সারিয়াকান্দি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। ১০ জানুয়ারি সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদীর দুর্গম চর দক্ষিণ ধারাবর্ষার একটি ঝাউবনে এক তরুণীর লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন থানা-পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ উদ্ধারের পর সুরভীর স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। পরে সুরত জামান বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন এবং খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে তরণীহাট ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ১৮ জানুয়ারি প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন। এই সমাবেশ ও মানববন্ধন নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

পুলিশ জানতে পারে মাসুদের সঙ্গে মুঠোফোনে প্রেম হয়েছিল সুরভীর। সারিয়াকান্দি থানা পুলিশ জানায়, কলেজছাত্রী সুরভীর মুঠোফোনের কললিস্ট এবং খুনের আগে কয়েক মাসের কথোপকথনের রেকর্ড থেকে জানা যায় যে খুন হওয়ার মাস তিনেক আগে থেকে মাসুদ রানার সঙ্গে নিয়মিত কথা হতো। সেই তথ্যের ভিত্তিতে মাসুদের খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, লাশ উদ্ধারের পরদিন থেকেই তিনি লাপাত্তা।

সুরভীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথোপকথনের সূত্র ধরে সারিয়াকান্দি থানা-পুলিশ রাজধানী ঢাকা থেকে মাসুদ এবং তার বন্ধু মামুনকে গ্রেফতার করে। মাসুদ বগুড়ার ধুনট উপজেলার কালেরপাড়া গ্রামের এবং মামুন একই উপজেলার হটিয়ারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তারা দুজনেই পেশায় রাজমিস্ত্রি। হত্যাকান্ডে জড়িত অপর তিনজন হলো- গাবতলী উপজেলার সোনামুয়া গ্রামের সিএনজি চালক আবদুল হান্নান (৩০), ধুনট উপজেলার কালেরপাড়া গ্রামের কালু মিয়া (৩৫) এবং রেজাউল করিম (২৮)।

পরে গ্রেফতার হওয়া মাসুদ এবং তার বন্ধু মামুন হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে মাসুদ জানান, সিএনজিচালক হান্নান তার পূর্বপরিচিত। তার কাছ থেকেই সুরভী আকতারের মুঠোফোন নম্বর পান। এরপর মুঠোফোনেই পরিচয় থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন মাসুদ রানা। ৪ জানুয়ারি সকালে সুরভীকে দেখা করতে বলেন। হাকিম তার সিএনজিতে সুরভীকে সেখানে পৌঁছে দেন। এরপর নদী পাড়ি দিয়ে সুরভীকে নিয়ে মাসুদ বোহাইল চরে পৌঁছান। সন্ধ্যা হয়ে এলে বাড়ি ফেরার তাগাদা দেন সুরভী। এ সময় পূর্বপরিকল্পনামতো মাসুদ এবং তার পাঁচ বন্ধু মিলে সুরভীকে ঝাউবনে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। সুরভী চিৎকার করার চেষ্টা করলে এবং পুলিশকে ঘটনা বলে দেওয়ার হুমকি দিলে হান্নান, কালু ও রেজাউল মিলে মেয়েটির গলা টিপে ধরে। মাসুদ ও মামুন চেপে ধরে থাকে মেয়েটির হাত-পা। পরে লাশ ফেলে পালিয়ে যায় তারা। পুলিশ জানায় প্রেমের ফাঁদে ফেলে সুরভীকে দলবেঁধে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। আসামিরা এখন জেল হাজতে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর