সোমবার, ৭ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

ভয়ংকর কিশোর গ্যাং ডি কোম্পানি

অস্ত্রসহ ১২ জন আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভয়ংকর কিশোর গ্যাং ডেয়ারিং কোম্পানি ‘ডি কোম্পানির’ প্রধান পৃষ্ঠপোষক রাজীব চৌধুরী বাপ্পী ওরফে লন্ডন বাপ্পীসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করেছেন র‌্যাব-১ এর সদস্যরা। শনিবার রাতে ঢাকার উত্তরা ও গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি চাপাতি, দুটি রামদা, তিনটি লোহার রড ও একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়।

সম্প্রতি টঙ্গী পূর্ব থানার আরিচপুরে নৃশংসভাবে দুটি হামলা চালিয়েছে এই ‘ডি কোম্পানি’র সদস্যরা। এই গ্যাংয়ের উদ্দেশ্য ছিল হামলা, ভাঙচুর, মারামারি এবং নৃশংস হত্যার মতো ঘটনা ঘটিয়ে পুরো টঙ্গী এলাকা নিয়ন্ত্রণ করা। গতকাল ঢাকার কারওয়ান বাজারে অবস্থিত র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, এই গ্যাংয়ের অন্যতম সদস্য মইন আহমেদ নীরব ওরফে ডন নীরব ও রাজীব আহমেদ নীরব ওরফে টম নীরব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং মেসেঞ্জারের মাধ্যমে দুই শতাধিক কিশোরকে সক্রিয় রাখত। ডন নীরব ও টম নীরব ছাড়াও যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে এরা হলো- মো. তানভীর হোসেন ওরফে ব্যাটারি তানভীর, মো. পারভেজ ওরফে ছোট পারভেজ, মো. তুহিন ওরফে তারকাঁটা তুহিন, মো. সাইফুর ইসলাম শাওন, মো. রবিউল হাসান, মো. শাকিল ওরফে বাঘা শাকিল, মো. ইয়াসিন আরাফাত ওরফে বিস্কুট ইয়াসিন, মো. মাহফুজুর রহমান ফাহিম ও ইয়াছিন মিয়া ওরফে ইয়াছিন। র‌্যাব কর্মকর্তা আল মঈন বলেন, ১ জুন রাত সাড়ে ৯টার দিকে ‘ডি কোম্পানি’র সদস্যরা টঙ্গীর আরিচপুর এলাকার ভূঁইয়াপাড়া জামে মসজিদের সামনে মো. তুহিন আহমেদ ও তুষার আহমেদকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে এবং পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। এ ঘটনায় পরদিন তুহিন আহমেদ বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংবাদ প্রকাশের পর দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ঘটনার পর পরই র‌্যাব তদন্ত শুরু করে এবং আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা করে। গ্রেফতার কিশোররা মাদক সেবন, স্কুল-কলেজে বুলিং-র‌্যাগিং, ইভ টিজিং, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ নানা অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িত ছিল।

র‌্যাব সূত্র জানায়, এ গ্রুপের প্রধান রাজীব চৌধুরী বাপ্পী এর আগেও অস্ত্রসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। এ ছাড়া একটি অপহরণ মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। সম্প্রতি সে জামিনে বেরিয়ে ফের বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তার ভাই পাপ্পু ওরফে লন্ডন পাপ্পু একসময় লন্ডনে ছিল। লন্ডন থেকে ফিরে এলাকায় মাদকের কারবার, মারামারি, হত্যাচেষ্টা ও বিভিন্ন অপরাধে গ্রেফতার হয়ে সে এখন কারাগারে। জামিনে বেরিয়ে সে ফের বেপরোয়া হওয়ার পরিকল্পনা করছে। তারা ‘ডি কোম্পানি’ প্রতিষ্ঠা করেছে পুরো টঙ্গী এলাকা নিয়ন্ত্রণ করবে বলে। এমনকি দুটি হত্যার ঘটনাও ঘটাবে বলে গ্রেফতার কিশোরদের কাছ থেকে তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। এ জন্য তার ভাই বাপ্পী অস্ত্র মজুদ রেখেছে। ‘ডি কোম্পানি’সহ টঙ্গীতে আরও কয়েকটি কিশোর গ্যাংয়ের সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব। ওইসব গ্রুপ মারামারি, ভাঙচুরসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত। গ্রুপগুলোর সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

র‌্যাব সূত্র জানায়, ‘ডি কোম্পানি’র সঙ্গে আরও দুই শতাধিক কিশোর জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে তারা। এর মধ্যে রয়েছে টঙ্গীর বনমালা রোডের জুয়েল মাহমুদ পারভেজ, টঙ্গী বাজারের সাগর, জিল্লুর, শিহাব, আমান, ছোট রিমন, তার ভাই রিফাত, জয়, মিম, মইন, জিল্লু। এ ছাড়া আরেকটি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছে টঙ্গীর মরকুন গোদারাঘাট এলাকার আসাদ শিকদার। এ গ্রুপে রয়েছে রাব্বি, রিফাত, রাকিব, হাবিবসহ অর্ধশতাধিক সদস্য। দত্তপাড়া হাজী মার্কেট এলাকার সজল সরকারের নেতৃত্বে রয়েছে আরেকটি গ্রুপ। এ গ্রুপে রয়েছে সাব্বির ওরফে কবিডি, আলী, শৈশব, মহসিনসহ ২০-৩০ জন। মধুমিতা ভরান এলাকায় মহিন নেতৃত্ব দিচ্ছে আরেকটি গ্রুপের। এ গ্রুপের সদস্য বিপ্লব, জয়, মিম, সৈকতসহ অনেকে। গোপালপুর এলাকায় রয়েছে সাদ্দাম মজুমদারের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাংয়ের একটি গ্রুপ। এ গ্রুপেও রয়েছে ২০-৩০ জন।

সর্বশেষ খবর