শনিবার, ১০ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

রংপুরে পানিবন্দী ১০ হাজার মানুষ

সিরাজগঞ্জে অর্ধশতাধিক বসতভিটা বিলীন

প্রতিদিন ডেস্ক

রংপুরে পানিবন্দী ১০ হাজার মানুষ

গঙ্গাচড়ায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওযায় ভেঙে যাওয়া বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ছবিটি গতকাল পূর্ব বিনবিনা থেকে তোলা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নেমে আসায় এক রাতের পানিতে ভাটি অঞ্চল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় তিস্তা নদীর তীরবর্তী গ্রামে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের আনুমানিক ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে সিরাজগঞ্জে যমুনার তীব্র ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, ফসলি জমি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর, লক্ষীটারি, কোলকোন্দ, নোহালী ও গজঘণ্টাসহ পাঁচ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে বন্যা দেখা দিয়েছে। লক্ষীটারি ইউনিয়নের চরইশরকুল, ইছলি, পূর্ব ইছলি, পশ্চিম ইছলি ও শংকর, বাগেরহাটহ ছয়টি গ্রামের সাড়ে ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে কিছু পরিবার    অন্যত্র আশ্রয় নিলেও এখনো অনেকেই পানির মধ্যে অবস্থান করছেন।

বাগেরহাট এলাকার এক কৃষক বলেন, ‘বৃষ্টি নাই। এক রাইতোতে হঠাৎ পানি উঠিল। হামরাগুলা দিশেহারা হয়া পড়নো’। লক্ষীটারি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহেল হাদী বলেন, উজান থেকে ভারত পানি ছেড়ে দেওয়ায় এক রাতেই পানি উঠল। আমার ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তাদের এখন শুকনো খাবার প্রয়োজন। এত তাড়াতাড়ি শুকনো খাবার দেওয়াও সম্ভব নয়। তারপরও চেষ্টা চলছে পানিবন্দী মানুষের সাহায্য করা।

গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা এলাকার এক ব্যক্তি বাড়ির মালামাল বস্তায় করে শুকনো জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেকেই রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন। এক নারীকে দেখা গেল, রাস্তার ওপর চুলায় রান্না করছেন। এ সময় আরেক নারীও রাস্তার ওপর কাজ করছিলেন। তাদের একজন বললেন, ‘রাইতোত পানি ওঠা শুরু হইল। উপায় না পায়া রাইতোতেই পানি পার হয়া এই রাস্তাত আশ্রয় নিছি।’

কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব আলী বলেন, আমার এলাকায় প্রায় ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তাদের তালিকা করা হচ্ছে। শুকনো খাবার দেওয়া হবে।

এ ছাড়া গজঘণ্টা ইউনিয়নের ছালাপাক, মহিষাসুর, রমাকান্ত, আলালচর, জয়দেব এলাকা এবং নোহালী ও আলমবিদিতর এ দুই ইউনিয়নেও সাড়ে ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। গতকাল বেলা ১১টায় কিছুটা কমে ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তিস্তা ব্যারেজের সব কটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রেখে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে যমুনায় পানি কমা-বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। বিলীন হচ্ছে বসতভিটা-ফসলি জমি। নিঃস্ব হয়ে পড়ছে মানুষ। করোনা সংকটের মধ্যে এসব মানুষের কর্ম না থাকায় মহাসংকটে দিন কাটছে। তারা নদীর ধারে ঝুপড়ি তুলে অসহায়ের মধ্যে দিনযাপন করছে।

জানা যায়, গত দেড় সপ্তাহ যমুনা নদীর পানি কখনো বাড়ছে, কখনো কমছে। এতে একদিকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে, অন্যদিকে নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। এক সপ্তাহে এনায়েতপুরের আড়কান্দি থেকে পাঁচিল পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকা ভাঙনে অর্ধশতাধিক বসতভিটা ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনরোধে পাউবো জিওব্যাগ ফেললেও কোনো কাজে আসছে না। সব নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। চৌহালী বাঘুটিয়ার বিনানুই চর বিনানুই এলাকায় তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। সদর উপজেলা পাঁচঠাকুরিতেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙনের তীব্রতা আরও বাড়ছে। ভাঙনের শিকার মানুষগুলো নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। তার ওপর করোনা সংকট মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। কর্মহীন মানুষগুলো চরম দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন জানান, যমুনার প্রবল ঘূর্ণাবর্তে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর