সোমবার, ১৯ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

ঘরমুখো মানুষ স্বাস্থ্যবিধি উধাও

উত্তরবঙ্গের বাসে শিডিউল বিপর্যয়, যানজটে ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঘরমুখো মানুষ স্বাস্থ্যবিধি উধাও

রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে গতকাল ট্রেনে ওঠার অপেক্ষা -জয়ীতা রায়

লকডাউন শিথিল হলেও ঘরমুখো মানুষের অতিরিক্ত চাপ নেই বাস, লঞ্চ টার্মিনাল ও রেল স্টেশনে। অনেকটা স্বাভাবিক সময়ের মতোই চলছে লঞ্চ, ট্রেন ও বাস। ঢাকা টাঙ্গাইল-সিরাজগঞ্জ সড়কে যানজটের কারণে উত্তরবঙ্গের গাড়িগুলো সময়মতো যাতায়াত করতে পারছে না। এতে দূরপাল্লার অনেক রুটের শিডিউল ভেঙে পড়েছে। বাস মালিকরা বিকল্প বাস দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া গতকাল ফেরিঘাটগুলোতে ফেরি চলাচল ছিল স্বাভাবিক। রাজধানী ঢাকা থেকেও ঘরমুখী মানুষের স্রোত দেখা যায়নি। অনেকে বলছেন আজ থেকে যাত্রী বাড়বে। তাছাড়া ঈদের পর আবার ঢাকায় ফেরা নিয়ে শঙ্কা ও করোনার ভয়াবহ বিস্তারের কারণে ঘরমুখী যাত্রীর সংখ্যা কম বলে জানা গেছে।

লঞ্চ : রবিবার সকাল থেকে সদরঘাট টার্মিনালে ভিড় না থাকলেও দুপুরের পর থেকে ভিড় বাড়ে। তবে সেটা অস্বাভাবিক নয়। রাত ৯টায় যে লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার শিডিউল ছিল সন্ধ্যা ৬টার মধ্যেই সেগুলোর ডেক যাত্রীতে ভরে যায়। তবে সকালের দিকে যেসব লঞ্চ সেগুলো ছিল অনেকটা ফাঁকা। বিকালে কিছু ভিড় হলেও সেটাকে ঠিক ঈদের ভিড়ের মতো বলা যাবে না। ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমরা যাত্রীদের মাস্ক ছাড়া  টার্মিনালে প্রবেশ করতে দিচ্ছি না। লঞ্চের ভিতরে যাত্রীদের মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে মোবাইল কোর্ট কাজ করছে।’

ট্রেন : টিকিট ছাড়া স্টেশনের ভিতরে যাত্রী প্রবেশ করতে না দেওয়ায় কমলাপুর রেল স্টেশনের বাইরে ভিড় জমায় শত শত হাজার হাজার যাত্রী। তারা টিকিট না পেয়ে সেখানে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়। অনেকে বিমানবন্দর থেকে ট্রেনে ওঠার পরিকল্পনা করে কমলাপুর থেকে বিমানবন্দরের দিকে চলে যায়। এ ছাড়া কমিউটার ট্রেনের কাউন্টারে ব্যাপক ভিড়ের কারণে স্বাস্থ্যবিধি ভেঙে পড়ে। যাত্রীরা জানান, টিকিট বিক্রির ২৮টি কাউন্টারের মধ্যে ২৭টি বন্ধ। শুধু কমিউটার ট্রেনের একটি কাউন্টারে টিকিট দেওয়ার কারণে ভিড় বেশি ছিল।

কমালাপুর রেল স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সরোয়ার বলেন, ‘আমরা টিকিট হাতে মাস্ক পরিহিত অবস্থায় যাত্রীদের প্রবেশ করিয়েছি। ফলে স্টেশনের ভিতরে স্বাস্থ্য বিধি বজায় ছিল। স্টেশনের বাইরে টিকিটের জন্য বিপুল পরিমাণ মানুষ ভিড় করে। কিন্তু আমরা টিকিট না দেখে কাউকে প্রবেশ করতে দেইনি। আমাদের প্রতিটি ট্রেন সময়মতো ছেড়ে গেছে এবং সময়মতো স্টেশনে পৌঁছেছে।’

বাস : ঈদের আগে এই সময় যাত্রীর চাপ আর বাস শ্রমিকদের হাঁকডাকে মুখরিত থাকে টার্মিনালগুলো। কিন্তু এবার চিত্র কিছুটা ভিন্ন। বাসে এখনো কাক্সিক্ষত মাত্রায় যাত্রী পাচ্ছে না দূরপাল্লা ও স্বল্পপাল্লার গাড়িগুলো। ৪০ আসনের গাড়িতে যাত্রী নিবে ২০ জন তাতেও বাসের আসন পূর্ণ হতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন আজ থেকে বাসে যাত্রীর পরিমাণ বাড়বে। তবে ঈদের এক দিন পর থেকেই আবার লকডাউন শুরু হবে এই আশঙ্কায় ঘরমুখী মানুষের সংখ্যা অনেকটাই কম বলে মনে করছেন বাস মালিকরা।

সায়েদাবাদ টার্মিনাল বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, ‘রবিবার বিকাল পর্যন্ত টার্মিনালে তেমন ভিড় ছিল না। সোমবার সকাল থেকে হয়তো যাত্রী বাড়বে। বিধিনিষেধ মেনে বাসগুলোতে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে ছাড়ছে। তারপরও সব সিটে যাত্রী ভরতে এক দেড় ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে।’ গার্মেন্টসহ শিল্পকারখানা বেতন বোনাস দেওয়ায় আজ থেকে যাত্রীর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে জানান তিনি। সায়েদাবাদের মতো একই চিত্র গাবতলী ও মহাখালী টার্মিনালেও। গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে হানিফ পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার হারুন রশিদ বলেন, যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। হয়তো ফিরে আসার চিন্তা ও করোনার সংক্রামণ বাড়তে থাকায় অনেকে বাড়িতে যাচ্ছে না।’

উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজটের গাড়িগুলো শিডিউল মেনে চলতে পারছে না। শনিবার রাতে যেসব যাত্রী নিয়ে বাস ছাড়ার কথা তারা গেছেন রবিবার সকালে।’

খালেক পরিবহনের রংপুরের যাত্রী রফিকুল জানান, সকাল ৯টায় গাড়ি ছাড়ার কথা। আগেই ফোন দিয়ে জানানো হয়েছে বাস আসতে পারেনি। বিকাল ৩টার পর তাকে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। অনেক মানুষ কাউন্টারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

চুয়াডাঙ্গার বেসরকারি চাকরিজীবী আনোয়ারুল হক বলেন, ‘ঈদের এক দিন পর থেকেই আবার লকডাউন। ঘরে ফেরা নিয়ে শঙ্কা। তাই এবার ঈদ ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তার মতো একই বক্তব্য জানান আরও অনেকে।

দৌলতদিয়ায় স্বস্তি : রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, ঢাকামুখী যাত্রী ও যানবাহনের চাপ না থাকায় দৌলতদিয়া ফেরিঘাট দিয়ে স্বস্তিতে ঘরে ফিরছে ঘরমুখো মানুষ। রবিবার বিকালে ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঢাকামুখী পশুবাহী গাড়ির কোনো সিরিয়াল ছিল না। দূরপাল্লার বাস সোজা ফেরিতে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে। অনেক বাস ছিল যাত্রীশূন্য।

বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিমপাড়ে কচ্ছপগতি : সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, যানবাহনের বাড়তি চাপে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কের ২২ কিলোমিটার এলাকায় কচ্ছপ গতিতে চলছে গাড়ি। আবার মাঝে মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। মাত্র ২২ কিলোমিটার পার হতে সময় লাগছে প্রায় ৫ ঘণ্টা। এতে চালক ও যাত্রীদের দুর্ভোগ নিয়েই ঘরে ফিরতে হচ্ছে। অন্যদিকে, পণ্য পরিবহনের গাড়িতে দাঁড়িয়ে ঘরে ফেরা মানুষগুলোকে প্রচ- গরমে নাভিশ্বাস অবস্থা দেখা যায়। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোসাদ্দেক হোসেন জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিমপাড়ে মূলত অতিরিক্ত গাড়ির চাপ, রাস্তা সংস্কার ও নলকা সরু সেতু এ তিনটি কারণে মূলত যানজট দেখা দেয়।

টাঙ্গাইলে ২০ কিলোমিটারে যানজট : টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, অতিরিক্ত যানবাহন ও ঘরমুখো মানুষের চাপে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ২০ কিলোমিটার এলাকায় উত্তরবঙ্গমুখী লেনে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সিরাজগঞ্জের অংশে গাড়ির গতি ধীর হওযায় সেতুতে টোল আদায় মাঝে মাঝে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই কারণেই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তবে ঢাকাগামী লেনে স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলাচল করছে। রবিবার ভোর রাত থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু রাবনা বাইপাস পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে থেমে থেমে যানজট ছিল। এলেঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি ইয়াসির আরাফাত বলেন, গাড়ির চাপ বেশি থাকায় কিছুটা যানজট হচ্ছে।

পাটুরিয়ায় চাপ নেই : মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, যানবাহনের চাপ নেই পাটুরিয়া ঘাটে। যানবাহন ও যাত্রী পারাপারের জন্য ষোলোটি ফেরি চলাচল করছে এই নৌরুটে। ফেরি ও যাত্রী ছিল প্রায় স্বাভাবিক।

সর্বশেষ খবর