রবিবার, ১ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

মোটরসাইকেল খুলে দিল খুনের রহস্য

মির্জা মেহেদী তমাল

মোটরসাইকেল খুলে দিল খুনের রহস্য

২০১৫ সালের ৯ মার্চ কুমিল্লার সদর দক্ষিণে আবদুল্লাহ আল-ফরহাদ রিফাত (২০) নামের এক কলেজছাত্রের মাথা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিন সকালে উপজেলার ধনপুর এলাকার সোনাইছড়ি খালে প্রথমে মাথাবিহীন দেহ পাওয়া যায়। পরে ৪০ গজ দূর থেকে মাথা উদ্ধারের পর তার পরিচয় মেলে।

রিফাত স্থানীয় উপজেলার জোড়কানন পশ্চিম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বানিপুর গ্রামের মৃত মিজানুর রহমানের ছেলে। তিনি একই এলাকার চৌয়ারা ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।

লাশ উদ্ধারের পর রিফাতের মা জোসনা বেগম অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে সদর দক্ষিণ মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। প্রথমে থানা পুলিশ এবং পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মামলাটির তদন্ত করে তিনজনকে গ্রেফতার করে। তবে সাক্ষ্য-প্রমাণ না থাকায় গত বছর ওই তিনজনকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে সিআইডি।

এরপর মামলার বাদী আদালতে নারাজি আবেদন করলে আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেয়। পিবিআই মামলাটির তদন্ত শুরু করে গত বছরের ৬ অক্টোবর। অবশেষে দীর্ঘ ছয় বছর পর এ হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়। এ মামলায় গ্রেফতার এক ব্যক্তি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। মামলাটি ছিল একেবারেই ক্লুলেস। সর্বশেষ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এ মামলায় সদর দক্ষিণ থানার ধনপুর গ্রামের মৃত সফি মিয়ার ছেলে শাহজালালকে  আটক করে পিবিআই। এরপর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহজালাল হত্যার ঘটনার বিস্তারিত পিবিআইকে জানায়। পরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে সে। জিজ্ঞাসাবাদে শাহজালাল জানিয়েছে, ঘটনার দিন বানিপুর গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান রানা ও পাশের গোয়ালমথন গ্রামের আবদুল খালেক মিন্টুর ছেলে নাসির উদ্দিন নিহত রিফাতের মোটরসাইকেলটি তার কাছে নিয়ে আসে। এরপর ওই দুজন তাকে জানায়, রিফাতকে মারধর করে তারা মোটরসাইকেলটি নিয়ে এসেছে। মোটরসাইকেলটি তারা ভারতে বিক্রি করে দেওয়ার কথা বলে। এরপর শাহজালাল মোটরসাইকেলটি ভারতের এক লোকের কাছে বিক্রি করে দেয়। বিক্রির পর শাহজালাল জানতে পারেন তারা রিফাতকে মারধর নয়, খুন করেছে। পিবিআই জানায়, শাহজালাল স্বীকারোক্তিতে খুনে জড়িত যে দুজনের কথা বলেছে তারা বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছে। ওই দুজন নিহত রিফাতের সঙ্গে চলাফেরা করত। তবে এ খুনের পেছনে মোটরসাইকেল ছাড়াও চাঞ্চল্যকর আরও কিছু কারণ রয়েছে। রিফাতের মা জোসনা বেগমেরে বক্তব্য, লাশ উদ্ধারের তিন দিন আগে ২০১৫ সালের ৬ মার্চ দুপুরে রিফাত মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, সে বন্ধুদের সঙ্গে ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় দাওয়াত খেতে গেছে। সেদিন সন্ধ্যার পর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইলফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর ৯ মার্চ সকালে উপজেলার সোনাইছড়ি খালের মধ্যে স্থানীয়রা তার মৃতদেহ দেখতে পায়। আমি ছেলের খুনিদের ফাঁসি চাই।

সর্বশেষ খবর