শিরোনাম
সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
উত্তরা গণভবন

নাগলিঙ্গম গাছে শত শত ফুল

নাটোর প্রতিনিধি

নাগলিঙ্গম গাছে শত শত ফুল

নাটোরের উত্তরা গণভবনের দুর্লভ নাগলিঙ্গম গাছে ফুটেছে শত শত ফুল। অপরূপ সৌন্দর্যের পাশাপাশি সুগন্ধ ছড়াচ্ছে ফুলগুলো। ইতিমধ্যে নাগলিঙ্গম দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে। নাগলিঙ্গম গাছের দেখা খুব বেশি মেলে না। দেশে মাত্র অল্প কিছু এই দুর্লভ গাছ রয়েছে। প্রতিবছর মার্চ থেকে জুলাই মাসে নাগলিঙ্গম ফুল ফোটে। গাছের কান্ড থেকে শেকড়ের মতো বের হয়। সেই শেকড়ে ফুল ফোটে। একটি শেকড়ে অনেক ফুল থাকে। ফুলে ফুলে গাছের কান্ড আচ্ছাদিত হয়ে যায়। এই ফুলের রং লাল, গোলাপি আর হলুদ মিশ্রিত। আকারে বড়। পাপড়ি ছয়টি এবং তুলনামূলক ভারী। ফুলের মধ্যভাগে রয়েছে গর্ভাশয়। গর্ভাশয়টি সাপের ফণার মতো দেখতে। সাপ বা নাগিনির মতো ফণা তোলা পরাগচক্রের কারণেই হয়তো ফুলের নামকরণ নাগলিঙ্গম। ফুল শুকিয়ে গেলে তাতে গোলাকৃতির বাদামি-খয়েরি বর্ণের ফল হয়। এই ফল হাতির পেটের রোগের জন্য উপকারী। নাগলিঙ্গমের ফল হাতির প্রিয় খাবার। এ জন্য কোথাও কোথাও এটি হাতিফল নামেও পরিচিত। ভারতে এই ফুলের নাম শিবলিঙ্গম ফুল নামে পরিচিত। এই ফুল সুগন্ধ ছড়ায়। যে কোনো সময় এই গাছের পাশ দিয়ে গেলেই এর তীব্র ঘ্রাণের মাদকতা  মানুষকে মোহিত করে। ছয়টা পাপড়ি আচ্ছাদনে নজরকাড়া ফুলগুলো খুব সহজেই নজর কাড়ে। ফুলের রঙ কমলাও নয়, আবার বাদামিও নয়, বরং এ দুইয়ের মিশ্রণের পাপড়িগুলোতে আবার বেগুনি রঙের বর্ণচ্ছটা। আর পরাগচক্রে সাদা বেগুনি হলুদের সমাহার। নাটোর উত্তরা গণভবনের নাগলিঙ্গম গাছটি বিশাল আকৃতির। প্রায় পঞ্চাশ ফুট উচ্চতার গাছটি যেন আকাশছোঁয়ার চেষ্টায় আছে। কান্ডফুঁড়ে ছড়ার মতো বের হওয়া মঞ্জরিতে রাশি রাশি ফুল ফুটে থাকে। অনেকেই গণভবন পরিদর্শনে এলে, প্রায় শত বছরের পুরনো এই  নাগলিঙ্গম গাছ ও ফুলে আকৃষ্ট হন। নাগলিঙ্গম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে। লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন এখানে দর্শনার্থীদের প্রবেশাধিকার ছিল না। দীর্ঘদিন মানুষের পদচারণা না থাকায় গণভবনের বিভিন্ন গাছ ফুল ও ফলে ভরে উঠেছে। সম্প্রতি দর্শনার্থীদের জন্য গণভবন উন্মুক্ত করে দিলে আবারও মানুষের পদচারণা ও কোলাহল বেড়ে যায়। বিনোদনপিপাসুরা ছুটে আসছেন গণভবনে। বর্ষার নাগলিঙ্গম ফুল ফুটে থাকায় সহজেই নজর কাড়ছে অনেকের। তাই তারা ছুটে যাচ্ছেন এই গাছের কাছে। মনকাড়া সৌন্দর্যে বিমোহিত হচ্ছেন তারা। গ্রহণ করছেন অজানা এক মাদকতার সৌরভ। গাছের তলায় ফুল ও পাতা ঝরে পড়ে  অপরূপ রূপে বিছানার চাদরের মতো মনে হয়। ইতিহাসবিদদের মতে, দিঘাপতিয়া রাজা দয়ারাম রায়ের চতুর্থ বংশধর রাজা প্রমোদ নাথ রায় খুব শৌখিন প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। তার সময়ে বিদেশ থেকে কিছু বিরল প্রজাতির ফুল ও ফলসহ ঔষধি গুণাগুণসম্পন্ন গাছ এনে এখানে রোপণ করা হয়। ধারণা করা হয়, তার সময়েই এই নাগলিঙ্গম রোপণ করা হয়েছিল। রাজার প্রিয় ফুলের তালিকায় ছিল বসন্ত আর গ্রীষ্মের এ ফুল। জনশ্রুতি রয়েছে, দক্ষিণ আমেরিকার আমাজান জঙ্গল থেকে দুটি নাগলিঙ্গম গাছ এনে রোপণ করা হয়েছে। এর একটি এখন জীবিত রয়েছে। এই গাছ ও ফুল-ফলের ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। এ গাছ পেটের পিড়া, মুখের ব্রণ সারাতে বেশ কাজ করে। ডায়রিয়ার সমস্যা হলে এই গাছের পাতার রস খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়। নাগলিঙ্গম পাতা পিষে প্রলেপ দিলে বাতব্যথা দূর হয়। নাগলিঙ্গম গাছের বাকল সিদ্ধ করে খেলে অর্শ রোগ ভালো হয়ে যায়। ম্যালেরিয়া রোগ নিরাময়ে নাগলিঙ্গমের পাতার রস খেলে উপকার পাওয়া যায়। নাটোর উত্তরা গণভবনের হিসাব সহায়ক নূর মোহম্মদ বলেন, দিঘাপতিয়া রাজার এই রাজপ্রাসাদের মূল ভবনের এক পাশে এই নাগলিঙ্গমের দুটি গাছ ছিল। এর একটি অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। এখনো একটি গাছ জীবিত। জেলা প্রশাসন উত্তরা গণভবন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পাওয়ার পর ধ্বংসপ্রায় অনেক কিছুই সংস্কার বা মৃতপ্রায় গাছ বাঁচিয়ে তোলার সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর