শুক্রবার, ২২ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

তিস্তায় হঠাৎ পানিতে দুর্ভোগ

তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি । লালমনিরহাট-রংপুর আঞ্চলিক সড়কে ধস । হুমকিতে সেতু

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর ও লালমনিরহাট প্রতিনিধি

তিস্তায় হঠাৎ পানিতে দুর্ভোগ

কুড়িগ্রামে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

হঠাৎ করে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করায় ধসে গেছে লালমনিরহাট-রংপুর আঞ্চলিক সড়ক। এতে করে হুমকিতে পড়েছে তিস্তা দ্বিতীয় সেতু। আকস্মিক এমন ঘটনায় গভীর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে এমন পানির ঢল দেখেননি তিস্তাপাড়ের মানুষ। উজানের নেমে আসা ঢলের পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দেওয়া হয়। জারি করা হয় সতর্কতা। তবে মাত্র ১৮ ঘণ্টায় এই পানি কমে গতকাল সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। বুধবার সকাল ৯টায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ১৯৯০ সালে ডালিয়া ব্যারাজ  নির্মাণ হওয়ার পরে এটাই ছিল সর্বোচ্চ পানি বৃদ্ধির রেকর্ড। তবে এই পানি বৃদ্ধি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। গতকাল সকাল ৯টায় পানি কমে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ফলে আতঙ্ক কাটলেও দুর্ভোগের ক্ষত  রেখে গেছে এক রাতেই। তিস্তার প্রবল স্রোতে রংপুর-কাকিনা মহাসড়কের একাংশ ভেঙে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে।

এদিকে হঠাৎ বানের ফলে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় দেখা দিয়েছে বন্যা পরিস্থিতি ও নদীভাঙন। এই উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের ১২ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। এর মধ্যে গঙ্গাচড়ার আলমবিদিতর, লক্ষ্মীটারি, কোলকোন্দ, নোহালী ও গজঘণ্টার নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের চরইশরকুল, ইছলি, পূর্ব ইছলি, পশ্চিম ইছলি ও শংকর, বাগেরহাট, কেল্লারহাটসহ বেশ কিছু নিচু এলাকায় কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে আছে। পানিপ্রবাহ বেড়েছে শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতুর মহিপুর পয়েন্টে। এই পয়েন্ট থেকে অল্প দূরে সড়কে দেখা দিয়েছে ভাঙন। ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এটাই তিস্তায় সর্বোচ্চ পানিপ্রবাহ। এর আগে কখনো বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার অতিক্রম করেনি। তবে সান্ত্বনার কথা মাত্র ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টার মধ্যে পানি আবার বিপৎসীমার অনেক নিচে চলে এসেছে। তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রবল বৃষ্টিপাত হওয়ায় গজলডোবা বাঁধ খুলে দেওয়ায় এই ঘটনা ঘটেছে।

লালমনিরহাট-রংপুর আঞ্চলিক সড়কে ধস : তিস্তার প্রবল স্রোতে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার রুদ্রেশ্বর মিলনবাজার এলাকায় লালমনিরহাট-রংপুর আঞ্চলিক সড়কে ধস নেমে ভেঙে যাওয়ায় লালমনিরহাট-রংপুরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। হুমকিতে রয়েছে তিস্তা দ্বিতীয় সেতুটিও। বুধবার রাতে পানির তীব্র স্রোতে এ সড়কটি ভেঙে যায়। ভেঙে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও এলজিইডি এ সড়কটি মেরামতের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ আলী খান জানান, যেহেতু সড়কটির ১৫০ মিটার ধসে গেছে তাই মেরামতে কিছুটা সময় লাগবে। এদিকে এই সড়ক ভেঙে যাওয়ায় লালমনিরহাটের প্রায় ১০ লাখ মানুষের চলাচলে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।

পানি বাড়ছে কুড়িগ্রামেও : কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, অবিরাম বর্ষণ ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। গতকাল দুপুরে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়ার সেতু পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে তিস্তার ঢালুতে ধরলা নদীর পানিও বেড়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর